নবজাতক সঙ্গে নিয়েই পরীক্ষা দিলেন পিংকী
আশুরা আক্তার পিংকী, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। গত ৩০ নভেম্বর (বুধবার) সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন পিংকী। এদিকে কলেজে চলছে দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা। সেইদিন ছিল রাজনৈতিক সংগঠন বিষয়ের পরীক্ষা। অতঃপর পরীক্ষার দিন সকালে হাসপাতাল থেকে নবজাতক সন্তানকে কোলে নিয়েই পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে যান পিংকী, বসে পড়েন পরীক্ষার খাতা নিয়ে।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী পিংকী জেলার দেবহাটা উপজেলার সখিপুরের কাজীমহল্লা গ্রামের শেখ রাজু আহমেদের বড় মেয়ে। তার স্বামী মাহমুদুল হাসান সুজন পার্শ্ববর্তী গ্রামের কোড়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য নজরুল ইসলামের ছেলে।
পরীক্ষা শেষে পিংকী বলেন, “সুজনের সঙ্গে বিয়ের আগে থেকে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। বিয়ের আগে আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আমার লেখাপড়া চালিয়ে যাবে। আমিও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চাই।”
“সবাই আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। শ্বশুর-শাশুড়িও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছে। তা না হলে এই পথ পাড়ি দেয়া কঠিন হতো।”
কলেজের অনার্স পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক কাজী আসাদুল ইসলাম বলেন, পিংকী সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বাংলায় অনার্স পড়ছে। পড়াশুনার প্রতি তার অদম্য আগ্রহ যা কলেজের সবার কাছে বিস্ময়ের। দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছে। আগে ৫টা বিষয় হয়ে গেছে। বুধবার রাজনৈতিক সংগঠন বিষয়ের পরীক্ষা দিয়েছে। এখনো একটা বিষয়ের পরীক্ষা বাকি আছে।
গত ৩০ নভেম্বর সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ডা: মাহফুজা আক্তার ও ডা: সাইফুল্লাহ আল কাফির তত্বাবধায়নে কন্যা সন্তান জন্ম নেয় সুজন ও পিংকী দম্পতির। সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে স্ত্রীর পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়ে মাহমুদুল হাসান সুজন বলেন, “হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষার কেন্দ্রে চলে গেছে পিংকী। তার আগ্রহ দেখে আমিও চাই লেখাপড়া করুক। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার পথে পিংকী বার বার জানতে চাইছিল পরীক্ষা দিতে পারবে কি না।”
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা: সাইফুল্লাহ আল কাফি বলেন, “পিংকী মেয়েটা শিক্ষার সংগ্রামের একজন সংগ্রামী নারী। তাকে অনুসরণ করতে পারে এখনকার যে কোন নারী শিক্ষার্থী।”