দেশে পুত্র সন্তানের প্রত্যাশা হ্রাস পাচ্ছে, বলছে গবেষণা
বাংলাদেশে সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে "পুত্র সন্তান কামনা" দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সম্প্রতি সন্তানধারণে সক্ষম প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসে।
তবে, পুত্র সন্তানের প্রত্যাশা এখনও গর্ভধারণের সিদ্ধান্তে প্রভাব রাখছে।
"পুত্র সন্তানের প্রত্যাশা কি বাংলাদেশ থেকে গায়েব হয়ে যাচ্ছে?" শীর্ষক গবেষণায় প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের সন্তান কামনার বিষয়টি মূল্যায়ন করা হয়।
গবেষণাটি পরিচালনার জন্য দেশব্যাপী প্রতিনিধিত্বশীল বাংলাদেশি নারীদের নমুনায়ন করা হয়। ইউনিভার্সিটি অব কেন্টের সংবাদ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী নারীদের নমুনা জনসংখ্যা হিসেবে নির্বাচন করা হয়।
"পুত্র সন্তানের কামনা" এমন একটি পরিস্থিতি; যেখানে পিতামাতা কন্যা সন্তানের পরিবর্তে পুত্র সন্তানের জন্ম প্রত্যাশা করে থাকেন এবং সেই অনুযায়ী সন্তান জন্মদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। জনমিতি এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এধরনের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে।
গবেষণার তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে নারী শিক্ষা এবং নারীদের কর্মসংস্থানের প্রসার লিঙ্গ ভারসাম্য সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। ফলে, সন্তানধারণক্ষম বয়সী নারীরাও পুত্র সন্তানের কামনা থেকে সরে আসছেন। তবে সন্তানের প্রত্যাশার তুলনায় বাস্তবে সন্তানধারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সম্পূর্ণ বিপরীত ফল দেখাচ্ছে। এখনও সন্তানধারনের সিদ্ধান্ত পুত্র সন্তানের কামনার ভিত্তিতেই নির্ণয় করা হয়ে থাকে।
গবেষণার ফল অনুযায়ী, যেসকল নারীরা এখনও সন্তানের জন্ম দেননি, তাদের মাঝে পুত্র এবং কন্যা সন্তানের প্রত্যাশা প্রায় সমান।
তবে, যাদের এক বা একাধিক সন্তান রয়েছে, তাদের একটি পুত্র সন্তান থাকলে, দ্বিতীয় পুত্রের বিষয়ে একেবারেই আগ্রহ ছিল না। অন্যদিকে, যাদের অন্তত একজন কন্যা সন্তান রয়েছে, তারাও পরবর্তীতে কন্যা সন্তান জন্মদানের বিষয়ে কম আগ্রহ দেখিয়েছে।
এছাড়া, যেসব নারী মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেছে, তাদের মধ্যে সন্তান গ্রহণে লিঙ্গ সমতার বিষয়টি অধিক মাত্রায় দেখা গেছে। তৈরি পোশাক শিল্প অঞ্চলে যেখানে নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি, সেখানেও নারীদের মাঝে সন্তান গ্রহণের ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতার আধিক্য দেখা গেছে।
তবে, সারভাইভাল অ্যানালাইসিস অনুযায়ী, প্রকৃতপক্ষে গর্ভধারনের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তগ্রহণ এখন পর্যন্ত পুত্র সন্তান কামনার উপর নির্ভরশীল।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, যাদের প্রথম দুইটি সন্তান পুত্র নয়, তাদের তৃতীয়বার গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে, প্রথম দুই সন্তান কন্যা না হয়ে পুত্র হলে, নারীরা পরবর্তীতে গর্ভধারণের বিষয়ে তেমন একটা চিন্তা করছেন না।
কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভলপমেন্ট ইকোনমিক্স রিসার্চ গ্রুপে'র সহ-পরিচালক এবং গবেষণাটির প্রধান গবেষক ডক্টর জাকি ওয়াহহাজ বলেন, "আমাদের গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, বাংলাদেশি নারীদের মধ্যে নির্দিষ্ট লিঙ্গের সন্তান কামনার তুলনায়; তাদের বাস্তব গর্ভধারণ চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। পুত্র সন্তানের তুলনায় পুত্র এবং কন্যা উভয় সন্তানের প্রত্যাশা বৃদ্ধি পেলেও, বাংলাদেশের নারীদের গর্ভধারণের সিদ্ধান্ত প্রকৃতপক্ষে এখনও পুত্র সন্তানের প্রত্যাশার উপর নির্ধারিত হয়।"