তারা আমাকে গুলি করার হুমকি দিয়ে বলে- কালেমা পড়: সাংবাদিক রিগ্যান
শুক্রবার রাত ১২ টার দিকে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এ সময় বাড়ির দরজায় ধাক্কার আওয়াজ শুনি। পরিচয় জানতে চাইলে তারা কেউ পরিচয় জানায়নি। তখন আমি সদর থানার ওসিকে ফোন দিই। কোথাও কল দিচ্ছি বুঝতে পেরে সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দীনের নেতৃত্বে লোকজন দরজা ভেঙে আমার ঘরে ঢোকে।
এভাবেই হাসপাতালের বেডে শুয়ে ঘটনার রাতের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন কুড়িগ্রামের বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগ্যান। ঘরে ঢুকে তারা কিলঘুষি মারতে থাকে জানিয়ে রিগ্যান আরও বলেন, তারা আমার চোখ বেঁধে একটি গাড়িতে করে ঘোরাতে থাকে। গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়। আমি আকুতি-মিনতি করে প্রাণ ভিক্ষা চাইলে তারা আমাকে বারবার কলেমা পড়তে বলে।
রিগ্যান আরও বলেন, তারা আমাকে একটি ভবনে নিয়ে যায়। চোখ খুলে দিলে দেখি আমি কুড়িগ্রাম ডিসি কার্যালয়। আবার ওই আরডিসির নেতৃত্বে আমাকে বিবস্ত্র করে মারধর শুরু করে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আমি কারণ জানতে চাইলে, বলে তুই আমাদের অনেক জ্বালাচ্ছিস। তোকে সাংবাদিকতা শেখাব। পরে চারটা সাদা কাগজে আমার স্বাক্ষর নেয় এবং কারাগারে পাঠায়।
তারপরের ঘটনা গণমাধ্যমের কল্যাণে এরই মধ্যে দেশবাসী জানতে পেরেছে। জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নের্তৃত্বে মধ্যরাতে সাংবাদিক রিগ্যানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে এক বছরের সাজা ঘোষণা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। পরদিন সকালে ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে।
রোববার সকালে সাংবাদিক রিগ্যানকে জামিন দেন আদালত। কারাগার থেকে ছাড়া পান তিনি। এরপর অসুস্থ অবস্থায় তাকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধিন রয়েছেন।
কুড়িগ্রামের আলোচিত জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনকে এরই মধ্যে প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
ডিসিসহ তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল
মধ্যরাতে সাংবাদিক রিগ্যানের বাড়িতে বিধি বহির্ভূতভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ঘটনায় কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনসহ আরও তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।
রংপুর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) জাকির হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, রোববার বেলা তিনটার সময় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। তবে তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রের নাম তিনি জানাতে রাজি হননি।
তিনি বলেন, তদন্তে বলা হয়েছে ডিসি সুলতানা পারভীন ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বিধি বহির্ভূতভাবে এই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করেন রংপুর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আবু তাহের মো. মাসুদ রানা।