ঢিমেতালে চলছে চট্টগ্রাম ওয়াসার চার প্রকল্প
চট্টগ্রাম নগরীর শতভাগ পানির চাহিদা মেঠানোর জন্য ৪ হাজার ৪৯২ কোটি টাকার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প ফেইজ ২ আগামী জুন থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়ার কথা। ১৪০ মিলিয়ন লিটার পানি উৎপাদনে সক্ষম এ প্রকল্পে একটি কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ করেছ জাপানি কনট্রাকটর। কিন্তু করোনারভাইরাসের কারণে জাপানি কর্মীদের সেই দেশে নিয়ে যাওয়ার কারণে অনিশ্চিতায় পড়েছে প্রকল্পটি।
এছাড়াও প্রায় ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকার চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়)। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে হবে বলে কাজ শুরুর আগেই অনিশ্চিতা দেখা দিয়েছে এ প্রকল্প নিয়ে। চিটাগাং ওয়াটার সাপ্লাই ইমপ্রুভমেন্ট এন্ড সেনিটেশন প্রকল্পের অধীনে পাইপলাইন স্থাপন কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ঢিমেতালে চলছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পানি সরবরাহের জন্য নেয়া ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের কাজও। এভাবে চলতে থাকলে সবগুলো প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
করোনা সংকটের কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিত হাত ধোঁয়া এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার কারণেও চট্টগ্রাম নগরীতে বেড়েছে পানির ব্যবহার। ফলে দৈনিক সাত কোটি লিটার বাড়তি পানির চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ওয়াসাকে। বর্তমানে ওয়াসা তিনটি প্রকল্প ও গভীর নলকূপ থেকে ৩৭০ মিলিয়ন পানি সরবরাহ করছে। যেখানে পানি চাহিদা রয়েছে ৪৩০ মিলিয়ন লিটার। ফলে জুনে পরীক্ষামূলকভাবে যদি চালু করা যেত ওয়াসার ১৪০ মিলিয়ন লিটারের কর্ণফুলী ফেইজ-২ প্রকল্প। তাহলে দূর করা যেত পানির সব সংকটও।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ওয়াসার কিছু প্রকল্পের কাজ চলছে। কারণে আমরা প্রকৌশলীদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে বিভিন্ন প্রকল্প চালিয়ে নিচ্ছি। কিন্তু কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প ফেইজ-২ এর মেশিনারিজ ও পাম্পগুলো বসানোর কাজ বাকী রয়েছে। জাপানি প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা না থাকায় এ সমস্যা হচ্ছে। এছাড়াও এ প্রকল্পের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের দিকে চালু করার আশা করছি আমরা।
বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পে এখন ডিজাইন ও ড্রইয়ের কাজ চলছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পের টেন্ডারিং এ সমস্যা হচ্ছে। তবে এ প্রকল্প এখনো শুরু না হওয়া অর্থায়ন নিয়ে জটিলতা হয়নি। অন্যান্য প্রকল্পগুলোতেও সমস্যা হবে না বলে মনে করছি। তাছাড়া বিভিন্ন চলমান প্রকল্পে অর্থায়ন করছে বিভিন্ন দাতা সংস্থা।
ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জুনে উৎপাদনে যাওয়ার কথা কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প ফেস-২। বর্তমানে প্রকল্পের রাঙ্গুনিয়ার পোমরায় সামান্য কিছু কাজ চললেও এই প্রকল্পের বাইরের কাজ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। প্রকল্পের অধীনে পাইপলাইন বসানোর অনেক কাজ এখনো বাকি রয়েছে। পুরোপুরিভাবে শেষ হয়নি এ প্রকল্পের অধীনে জলাধার ও এলিভেটেড ট্যাংক নির্মাণের কাজও।
কর্ণফুলী পানি সরবরাহের ২য় প্রকল্পে (ফেইজ-২) চারটি প্যাকেজে ভাগ করে ইনটেক, কনভেন্স ও ট্রান্সমিশন পাইপলাইন, পানি শোধনাগার, ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইন নির্মাণের কাজ। এ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা ৩ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা, বাংলাদেশ সরকারের ৮৪৫ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম নগরবাসীর পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য ৩৮০৮ টাকায় নেওয়া হয় পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প ১ম পর্যায়। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে নেওয়া এ প্রকল্পে চলছে পরামর্শক ও ডিজাইনের কাজ। চলতি বছরের জুনে ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যেমে শুরু হওয়ার কথা প্রকল্পের চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারেণ বিদেশি কনসালটেন্টরা আসতে না পারায় অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে এ প্রকল্পেও। আবার পরিস্থিতির কারণে দেওয়া হচ্ছে ঠিকাদার নিয়োগের দরপত্রও।
চিটাগাং ওয়াটার সাপ্লাই ইমপ্রুভমেন্ট এন্ড সেনিটেশন প্রকল্পের অধীনে ২০১৮ সালের নভেম্বরে মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগার উৎপাদনে যায়। এ প্রকল্পের অধীনে নগরীর বাকলিয়া ও পতেঙ্গা এলাকায় পানি সরবরাহ বৃদ্ধি করতে প্রায় ১১ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু করে ওয়াসা। চলতি জুনের মধ্যে এই পাইপলাইনের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কাজ শেষ পর্যায়ে থাকলেও করোনাভাইরাসের প্রভাবে বন্ধ রয়েছে এ প্রকল্পে পাইপলাইনের কাজ।
অন্যদিকে, দক্ষিণ চট্টগ্রামে পানি সরবরাহের জন্য ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প হাতে নেয়। কর্ণফুলী নদীর তীরে বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের জৈষ্ঠ্যপুরা গ্রামে প্রকল্পের মূল স্থাপনা তৈরির কাজ শুরু হয়। দৈনিক ৬ কোটি লিটার উৎপাদন ক্ষমতার এ প্রকল্পের মাধ্যমে পানি শোধনাগার, প্রায় ১৩৩ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন, কনভয়েন্স ও ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইন এবং কোরিয়ান ইপিজেড ও পটিয়ায় ২টি পানির রিজার্ভার নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রকল্পের অধীনে বোয়ালখালী, পটিয়া ও আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাইপলাইন বসানোর কাজও শুরু করা হয়। পুরোদমে চলা কাজের মধ্যেই আক্রমণ করে করোনা। বন্ধ হয়ে পড়ে ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের কাজও। এতে স্বাভাবিকভাবেই প্রকল্প বাস্তবায়ন দীর্ঘায়িত হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম ওয়াসার এক প্রকৌশলী জানান, চলমান প্রকল্পগুলোতে অনিশ্চিতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দেশীয় অর্থায়ন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হবে। ফলে থমকে যেতে পারে প্রকল্পগুলো। তাছাড়া ওয়াসার অধিকাংশ প্রকল্পে কাজ করে বিদেশি পরামর্শক ও ঠিকাদাররা। তারা নিজ দেশে চলে যাওয়ায় স্থবির হয়েছে পড়েছে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ।