ঢাকায় যানজটে বছরে আর্থিক ক্ষতি ১ লাখ কোটি টাকা, যা দিয়ে নির্মাণ করা যাবে ৩টি পদ্মা সেতু
রাজধানী ঢাকার অসহনীয় যানজটে শুধু মানুষের ভোগান্তি ও কর্মঘণ্টাই নষ্ট হচ্ছে না—এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জিডিপি এবং মাথাপিছু আয়ও।
শুধু ঢাকার যানজটের কারণেই বছরে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৯ শতাংশে। ২০১৫-১৬ সালের নতুন ভিত্তি বছরের হিসাবে অর্থমূল্যে এই ক্ষতির পরিমাণ ১ লাখ ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা।
আর অপরিকল্পিত নগর সম্প্রসারণের পরোক্ষ ক্ষতির হিসাব যুক্ত হলে এ ক্ষতি জিডিপির ৬ শতাংশের বেশি হয়ে যায়। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) একটি সম্মেলনে উপস্থাপিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে পদ্মা সেতু। এই সেতুতে বদলে যাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য। অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়াবে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়াবে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। আর দারিদ্র্য বিমোচনের হার বাড়াবে শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ। এই সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি।
রাজধানীর যানজটের কারণে প্রত্যক্ষ যে ১ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে, তা দিয়ে তৈরি করা যেত পদ্মা সেতুর সমান দৈর্ঘ্য ও সুবিধার তিনটি সেতু। এতে অবকাঠামোর উন্নয়ন যেমন হতো, তেমনি গতি বাড়ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেরও। ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারত ৩ শতাংশের বেশি। দারিদ্র্য বিমোচনের হারও বাড়ত আড়াই শতাংশের কাছাকাছি।
এছাড়াও ঢাকার যানজটের কারণে প্রতি মাসে ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে কর্মজীবীদের উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জিডিপিতে।
অর্থনীতির এই ক্ষতিকে আরও বড় করে তুলেছে রাজধানীর অপরিকল্পিত নগরায়ণ।
গবেষণা প্রতিবেদনটিতে নগরে অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপের বিষয়টিও উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, দেশের মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক ২ শতাংশই বাস করে ঢাকায়—যা এই অঞ্চলের মধ্যে সর্বোচ্চ। চীনের বৃহত্তম শহর সাংহাই, দেশের জনসংখ্যার মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ যেখানে বাস করে। প্রতিবেশী ভারতের প্রধান শহরে বাস করে দেশের জনসংখ্যার ২ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৪ শতাংশ, পাকিস্তানে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ভিয়েতনামে ৮ দশমিক ১ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ১০ লাখের বেশি মানুষ বাস করে বাংলাদেশে এমন শহর আছে মাত্র ৫টি। চীনে এমন শহরের সংখ্যা ১০২। এছাড়া ভারতে ৫৪, ইন্দোনেশিয়ায় ১৪, পাকিস্তানে ১০।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাদীউজ্জামান বলেন, রাজধানীর অসহনীয় যানজটের সবচেয়ে বড় কারণ শহরটির দুর্বল পরিবহন ব্যবস্থাপনা ও যোগাযোগ অবকাঠামো।
ঢাকার রাস্তা যে পরিমাণ গাড়ি ধারণে সক্ষম, তার চেয়ে ৩০-৪০ শতাংশ বেশি গাড়ি চলে বলে জানান তিনি।
হাদীউজ্জামান বলেন, ঢাকার সব যানজটের ৩০ শতাংশের জন্য দায়ী পার্কিং ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা। ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন নতুন অবকাঠামো গড়ে তুললেও সেগুলোর ব্যবস্থাপনা ভালো নয়। ফলে এসব অবকাঠামোর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
ঢাকার অসহনীয় যানজট সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য হাদীউজ্জামান রাজধানীতে সঠিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও পরিবহন ব্যবস্থাপনা চালুর পরামর্শ দেন। এছাড়াও পথচারীবান্ধব অবকাঠামো গড়ে তোলা, উন্নত গণপরিবহন প্রবর্তন, গণপরিবহনের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ, পার্কিং ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের পাশাপাশি সড়ক ব্যবহারীদেরও মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়ার ওপর জোর দেন তিনি।