টেকনাফ সৈকতে ডলফিন না তিমি!

কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়িতে ভেসে এসেছে বিশাল আকৃতির একটি মৃত ডলফিন। তবে এটি তিমির একটি ছোট প্রজাতি বলেও দাবি করেছেন অপর এক জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
সোমবার সকালে ঢেউয়ের তোড়ে তীরে উঠে আসা সামুদ্রিক মাছটি হাম্পব্যাক প্রজাতির ডলফিন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক কর্মকর্তা। আরেকজন বলছেন বালিন প্রজাতির তিমি।
এর আগে শনিবার (২০ জুন) বিকেলে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড়া সৈকতে একটি বিশাল আকৃতির মাছকে ঢেউয়ের জলের সঙ্গে তীরে আসতে-যেতে দেখা যায়। এরপরেই সোমবার সকালে মাছটির মরদেহ তীরে ভেসে এসেছে।
সৈকত তীরে বসানো ব্লকের কংক্রিটে শনিবার ঢেউয়ের জলে বড় আকারের সেই মাছটি আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত হচ্ছিল বলে জানিয়েছে স্থানীয় জেলে ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। এ অবস্থায় ব্লকে আটকা পড়া মাছটিকে স্থানীয় জেলেরা গভীর পানিতে ফিরে যেতে সহায়তা করে।
সোমবার সকালে তীরে আসা মৃত ডলফিন/তিমিটিই শনিবারে জোয়ারের জলে ব্লকে এসেছিল বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। শনিবারের সেই বিশাল আকৃতির মাছটিকে তিমির বাচ্চা বলে অবহিত করেছিলেন স্থানীয়দের অনেকেই।
এদিকে, মৃত ভেসে আসা প্রাণীটি সম্পর্কে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কক্সবাজার কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এহসানুল করিম বলেন, এটি ইন্দো-প্যাসিফিক হাম্পব্যাক ডলফিন নামে পরিচিত। এই প্রজাতিগুলো দলবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করে থাকে। ধারণা করা হচ্ছে, খাবারের সন্ধানে দলছুট হয়ে ডলফিনটি টেকনাফের কাছাকাছি এসেছিল এবং আঘাত পেয়ে মারা গেছে।
তিনি আরো বলেন, ৯-১০ ফুট দৈর্ঘ্যের এই মাছটির ওজন ১৬০ কেজি হতে পারে। মূলত এই মাছগুলো ভারত এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ক্রান্তীয় জলে পাওয়া যায়। তবে বেশিরভাগ সাধারণ ডলফিনের বিপরীতে, এই ডলফিনগুলো অগভীর, উপকূলীয় জল পছন্দ করে। ফলে উপকূলের আশপাশের অঞ্চলে এর বিচরণ অস্বাভাবিক কিছু নয়।
তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বাংলাদেশ মৎস গবেষণা ইনস্টিটিউট কক্সবাজারের অপর জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আশরাফুল ইসলাম জানান, প্রাণীটি বালিন তিমি প্রজাতির সদস্য হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, বৈজ্ঞানিক নাম- Fin Whale Balaenoptera Physalus.
লকডাউনের মাঝে শুধু ছবি দেখে প্রজাতি শনাক্তে তার সহকর্মী ভুল করে থাকতে পারেন, বলে মনে করছেন তিনি।

টেকনাফ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, সকালে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সমুদ্রসৈকতে একটি বিশাল আকৃতির মৃত ডলফিন দেখা যায়। এ সময় সেটি দেখতে লোকজন ভিড় করে। অনেককে আবার ছবি তুলতে দেখা গেছে। বেলা ৩টা পর্যন্ত ডলফিনটি সেখানে পড়ে ছিল।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য নুরুল আমিন বলেন, তার এলাকায় সৈকতে একটি বিশাল প্রজাতির মৃত ডলফিন ভেসে এসেছে। অনেকে সেটাকে বাচ্চা তিমিও বলছে। এই সময়ে সাগরে জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ। কিন্তু কিভাবে এটি মারা গেল তা বলা মুশকিল। তবে প্রাণীটির শরীরের কয়েকটি অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, একটি বড় প্রজাতির মাছের মৃতদেহ ভেসে আসার খবর পেয়েছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
শাহপরীর দ্বীপ পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ দিপক বিশ্বাস বলেন, সোমবার সকালে মৃত একটি বিশাল প্রজাতির মাছ ভেসে এসেছে। স্থানীয়দের সহায়তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, করোনাকালে কক্সবাজার লকডাউন হলে সৈকত জনমানব শূন্য হয়ে যায়। এরপর থেকে সৈকতের বালিয়াড়িতে প্রকৃতি তার আপন মহিমা মেলে ধরে। সবুজে ছেয়ে যাচ্ছে সৈকত তীর।
কোলাহলমুক্ত সৈকতে গত এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বিরল প্রজাতির ডলফিনের খেলার দৃশ্য সামাজিক গণমাধ্যমে সাড়া ফেলে।
এ ধরনের একটি ভিডিও এখন অনলাইনে অনেকেই দেখেছেন। আবার অনেকে একে ভিডিও এডিটিং কারসাজিও বলছেন। এ ঘটনার পর সৈকতে বেশ কয়েকটি ডলফিনের মৃতদেহ ভেসে আসে।
এরপর গত শনিবার টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ সৈকতে তীর রক্ষায় বসানো ব্লকের মাঝে জোয়ারের পানির সঙ্গে একটি বিশাল আকৃতির মাছকে উঠে আসতে দেখা যায়। যা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয় স্থানীয়রা। এর একদিন পরই মৃত ডলফিন/তিমির লাশটি তীরে ভেসে আসে।