টিকা গ্রহণে আগ্রহ কমছে মানুষের
দেশব্যাপী ভ্যাকসিনেশন শুরুর তৃতীয় সপ্তাহে এসে ভ্যাকসিন নেয়ার সংখ্যা কমছে। ভ্যাকসিন নেয়ার সংখ্যা কেন কমছে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোন কারণ বলতে পারছেন না কেউ। তবে নিম্নবিত্তরা ভ্যাকসিনেশনের বাইরে থাকায়, ভ্যাকসিন গ্রহণের বার্তা পেয়েও ভ্যাকসিন না নেয়া, সামনে রমজান মাস তাই ভ্যাকসিনের সেকেন্ড ডোজ নিতে সমস্যা হবে ভেবে আরো কিছুদিন পরে ভ্যাকসিন নেয়ার পরিকল্পনার কারণে ভ্যাকসিন নেয়ার হার কমছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু কমাতে দ্রুত সব শ্রেণীর মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ভ্যাকসিনেশন শুরু হয়। ভ্যাকসিনেশন শুরুর প্রথম সপ্তাহে দিনে গড়ে ১ লাখ ২৯ হাজার মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে ভ্যাকসিন নেয়ার হার বাড়ে। ভ্যাকসিনেশনের দ্বিতীয় সপ্তাহে ১৫ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি দিনে গড়ে ২ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২ লাখ ৬১ হাজার ৯৪৫ জন ভ্যাকসিন নিয়েছেন, যা একদিনে সর্বোচ্চ।
তৃতীয় সপ্তাহ-২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ভ্যাকসিন নেয়ার হার কমতে থাকে। গত ছয় দিনে গড়ে ১ লাখ ৪২ হাজার মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। গত মঙ্গলবার ভ্যাকসিন নিয়েছেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৮০ জন, যা ৯ ফেব্রুয়ারির পর সবচেয়ে কম।
বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক, চিকিৎসক, সিভিল সার্জন, ভাইরোলজিস্টদের সঙ্গে কথা বলেও ভ্যাকসিন নেয়ার হার কমার নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। সবাই বলছেন ভ্যাকসিন নিতে মানুষের আগ্রহ কমেনি, মানুষের ভ্যাকসিন ভয়ও কেটে গেছে। কিন্তু মানুষ আরো অপেক্ষা করে কিছুদিন পরে ভ্যাকসিন নিতে চায়। আর নিম্নবিত্তদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে। তাহলেই ভ্যাকসিন নেয়ার হার বাড়বে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কম্যুনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল বিভাগের পরিচালক এবং মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ভ্যাকসিন নেয়ার হার কেন কমছে তার নির্দিষ্ট কারণ নেই। ভ্যাকসিন নেয়ার মেসেজ যাওয়ার পরও অনেকে ভ্যাকসিন নিতে যাচ্ছেন না, সে কারণেও ভ্যাকসিন নেয়ার হার কিছুটা কমছে। অনেকেই ভাবছে কিছুদিন পরে ভ্যাকসিন নেবেন, রেজিস্ট্রেশন এখন কিছুটা কম হচ্ছে সে কারণেও ভ্যাকসিন কম দেয়া হচ্ছে। তবে আমাদের টার্গেট অনুসারে ভ্যাকসিন দেয়া যাবে। কয়েকদিনের মধ্যে শিক্ষার্থীরাও ভ্যাকসিনের আওতায় আসবে তখন আবার ভ্যাকসিন নেয়ার হার বাড়বে'।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কিংকর ঘোষ বলেন, 'আমাদের হাসপাতালে এখন ভ্যাকসিন গ্রহীতার হার কিছুটা কমেছে। স্পট রেজিস্ট্রেশন বন্ধ হয়ে যাওয়া ও ৪০ বছরের নিচে কাউকে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছেনা তাই ভ্যাকসিন নেয়ার হার কম। অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা পেশাজীবীদের অনেকেই ভ্যাকসিন নিয়েছেন কিন্তু নিম্নবিত্ত বয়স্ক মানুষেরা এখনো ভ্যাকসিন নিচ্ছেন না। তাই ভ্যাকসিন নেয়ার সংখ্যা কমছে'।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন নিম্নবিত্তদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনা না হলে সংক্রমণ আরো বাড়বে, এমনকি দেশে সেকেন্ড ওয়েভ দেখা দেয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে। শীতকালে আমাদের দেশীয় ভাইরাসগুলো বেশি ডমিনেটিং হওয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কম ছিলো। কিন্তু গরম চলে আসায় করোনাভাইরাস আবার শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এখন মাস্ক পরা আবার না বাড়ালে ও নিম্নবিত্তদের ভ্যাকসিনের আওতায় না আনলে দেশে সেকেন্ড ওয়েভ আসতে পারে'।
ভ্যাকসিন সেন্টার নিম্নবিত্তদের কাছে নিয়ে যেতে হবে
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, 'আমাদের হাসপাতালে এখন ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন কম হচ্ছে। তবে ভ্যাকসিন নিতে শুধু উচ্চ ও মধ্যবিত্তরাই আসছে। নিম্নবিত্তরা কিন্তু ভ্যাকসিনেশনের বাইরে থেকে যাচ্ছে। নিম্নবিত্তদের ভ্যাকসিন দিতে হলে তাদের কাছে সেন্টার নিয়ে যেতে হবে অথবা তাদেরকে সেন্টারে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। নিম্নবিত্তদের ভ্যাকসিন নিতে উৎসাহিত করতে হবে। তাদের কেন্দ্রে আনার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে যাদের ভ্যাকসিন নেয়া প্রয়োজন তারা ভ্যাকসিনেশনের বাইরে থেকে যাবে'।
মেহেরপুরে বরাদ্দকৃত ভ্যাকসিন প্রায় শেষ
মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মাদ নাসির উদ্দিন টিবিএসকে জানান, 'ভ্যাকসিনের প্রতি মানুষের আগ্রহ রয়েছে। আমাদের জেলায় ১২ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন এসেছিলো। কিন্তু ভ্যাকসিন নিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে ১৪ হাজারের বেশি। এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ৪০০ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। বাকী ৬০০ ডোজ আগামী দুই দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে আরো ভ্যাকসিনের চাহিদা দেয়া হয়েছে। শিগগিরই ভ্যাকসিন চলে আসবে'।
টিকা নিয়েছেন ৩৩ লাখের ওপরে
সারা দেশে গণ টিকাদান কর্মসূচীর ২০তম দিনে গতকাল মঙ্গলবার (০২ মার্চ) টিকা নিয়েছেন এক লাখ ১৪ হাজার ৬৮০ জন ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ই ফেব্রুয়ারি টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধনের পর এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ৩৩ লাখ ৪১ হাজার ৫০৫ জন মানুষ। এর মধ্যে নারী ১১ লাখ ৯১ হাজার ১৫০ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, করোনার টিকা নেওয়ার জন্য গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৪৫ লাখ ৩০ হাজার ৮২০ জন। এ পর্যন্ত টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে ৭৭৩ জনের মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।