জামিন পেলেন কার্টুনিস্ট কিশোর
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে মামলায় কারাগাবান্দি থাকা অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদ মারা গেছেন, সেই মামলায় দশ মাস ধরে কারাবন্দি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট।
বুধবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট এই আদেশ দেয়।
কিশোরের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যেতির্ময় বড়ুয়া সাংবাদিকদের জানান, হাইকোর্টের জামিন আদেশ শীঘ্রই কারাগারে পৌঁছাবে, তারপরই মুক্তি পাবেন কিশোর।
তিনি বলেন, "আহমেদ কবির কিশোরের নামে আর কোনো মামলা নেই। ফলে তার মুক্তি পেতে বাধা নেই। এ প্রক্রিয়াটি দুই-তিনদিনের মধ্যেই সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হবে।"
জামিন আদেশে বলা হয়েছে, 'কিশোর যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আছেন এবং এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর দিদারুল ভূইয়া এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান নিম্ন আদালত ও হাই কোর্টের এই বেঞ্চ থেকে জামিন পেয়েছেন, সেই বিবেচনায় আহমেদ কবির কিশোরকে ছয় মাসের জামিন দেওয়া হল।'
হাইকোর্টে জামিনের বিরোধীতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জেনারেল সরোয়ার হোসেন বাপ্পী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ১০ মাস ধরে কারাগারে আছেন। মূলত এই বিবেচনায় তাকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছে আদালত। মামলাটির যে পুনঃতদন্ত চলছে, আগামী ১৫ মার্চ তার প্রতিদেবন জমা দেওয়ার তারিখ রয়েছে।"
রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে কিশোরের জামিনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল কিনা এবং এই জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করবে কিনা জানতে চাইলে এ আইন কর্মকর্তা বলেন, "রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলার সর্বশেষ অবস্থা আদালতে তুলে ধরেছে। আর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে কিনা সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতনদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"
এ মামলায় কারাগারে থাকা অবস্থায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু হয়। আহমেদ কবির কিশোরের পাশাপাশি মুশতাক আহমেদের জন্যও হাই কোর্টে জামিন চাওয়া হয়েছিল।
হাই কোর্টের আদেশ অনুযায়ী আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া গত ১ মার্চ মুশতাকের মৃত্যুর বিষয়টি হলফনামা করে আদালতকে জানানোর পর তার জামিন আবেদনটি আদালতের দৈনন্দিন মামলা তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
এর আগে নিম্ন আদালতে ছয় বার এই মামলায় জামিন চেয়ে ব্যার্থ হয়ে লেখক মুশতাক আহমেদ ও কিশোর হাইকোর্টে গত ২৩ ফেব্রুযারি হাইকোর্র্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। পরবর্তী সময়ে গত ১ মার্চ জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বুধবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।
গত ১৩ জানুয়ারি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এই মামলায় চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহসীন সর্দার।
চার্জশিটে তিন জনকে অভিযুক্ত ও আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় তাদের অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদ ও রাষ্ট্রচিন্তার ঢাকার সমন্বয়ক দিদারুল ভুইয়া।
চার্জশিটে অব্যাহতি পাওয়া আসামিরা হলেন- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান, নেত্র নিউজের তাসনীম খলিল, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক সাহেদ আলম, জার্মানিতে থাকা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, জুলকারনাইন সায়ের খান, আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ ও ফিলিপ শুমাখার।
গত বছরের ৫ মে র্যাব-৩ এর ওয়ারেন্ট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক রমনা থানায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে আটক করা হয় কিশোর ও মুশতাক আহমেদ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা 'আই অ্যাম বাংলাদেশি' নামে ফেসবুক পেজের রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা, বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে অপপ্রচার বা গুজবসহ বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দিয়েছেন যা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়।