ছেলেরা একটু তাস খেলে, এ আর এমন কী: ছাত্রলীগ নেতা
‘‘কলেজে এ রকম চলবে। ছেলেরা একটু তাস খেলে; এ আর এমন কী।’’
সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার হারুণ-অর-রশিদ ডিগ্রি কলেজে তাস খেলা নিয়ে উল্লিখিত বক্তব্য দেন স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা একরামুল ইসলাম।
তিনি ওই কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও পাটকেলঘাটা থানা ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক।
সরেজমিনে দেখা যায়, হারুণ-অর-রশিদ ডিগ্রি কলেজে কার্যক্রম চলা অবস্থাতেই মাদক সেবনের পাশাপাশি জুয়া খেলেন শিক্ষার্থীরা। অধ্যক্ষের অফিসের ঠিক উপরের তলায় চলে মাদক সেবন।
কলেজ কর্তৃপক্ষ শুরুতে এ বিষয়ে কিছুই জানে না বলে দাবি করে। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে মাদক আর জুয়ার সরঞ্জাম দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন খোদ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফকির আহম্মেদ শাহ।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কলেজে শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে আলোচনাকালে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘শিক্ষার পরিবেশ খুবই সুন্দর। আমরা প্রশাসনিকভাবে নজরদারির মধ্যে রেখেছি।’’
তিনি বলেন, ‘‘এখানে কোনো অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা বা খারাপ কিছু করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা কলেজে একটা সততা সংঘ করেছি, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনিটর করা হয়। ভালো কিছু শেখানো হয়।’’
এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অধ্যক্ষ কার্যালয়ের উপরের তলায় (দ্বিতীয় তলা) গিয়ে দেখা যায়, কলেজের পাঁচ শিক্ষার্থী জুয়া খেলছেন। যে কক্ষটিতে জুয়া খেলা হচ্ছে, সেটি ভেতর থেকে বন্ধ; পাশে পড়ে রয়েছে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য।
ওই সময় সংবাদকর্মীর উপস্থিতি টের পেয়ে শিক্ষার্থীরা দরজা খুলে একে একে বের হতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা দৌড়ে কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে পালিয়ে যান।
বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে কলেজ অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ফকির আহম্মেদ শাহকে জানানো হলে তিনি ঘটনাটি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘‘এমন কাজের কোনো সুযোগ নেই।’’ পরে একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘‘তারা বহিরাগত কেউ হতে পারে।’’
পরবর্তী সময়ে জুয়া ও মাদকের আসর দেখে অধ্যক্ষসহ উপস্থিত শিক্ষকরা বিস্ময় প্রকাশ করেন।
জুয়া খেলায় লিপ্ত একাধিক শিক্ষার্থী অধ্যক্ষের সামনেই জানান, তারা এই কলেজের। এমন কথা শুনেই অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে; কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হবে। পুলিশকে খবর দেওয়া হচ্ছে। কলেজে মাদক কোনোভাবেই চলতে পারে না।’’
জুয়া ও মাদকের আসরে গিয়ে কলেজ অধ্যক্ষসহ শিক্ষকরা গাঁজা ও জুয়া খেলার সামগ্রী দেখতে পান। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে তাৎক্ষণিকভাবে জানান উপস্থিত অধ্যক্ষসহ শিক্ষকরা। একপর্যায়ে কলেজের ভিতরের কোনো ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে নিষেধ করেন তারা।
ততক্ষণে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন পাটকেলঘাটা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল ইসলাম। ছাত্রলীগের এই নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কলেজে এ রকম চলবে। ছেলেরা একটু তাস খেলে; এ আর এমন কী।’’
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আজই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ কোনোভাবেই নষ্ট হতে দেওয়া হবে না।’’