ছবির পেছনের গল্প

কচুরিপানায় সবুজ পুকুর আর সেই পুকুরের মধ্যে ২টি সাপ নিজেদের মুখে ধরে আছে একটি মাছ। মাছটিকে সাপ দু'টি মিলেমিশে শিকার করে খাচ্ছে। এটি একটি বিরল দৃশ্য। আর এ দৃশ্যের ছবি ভাইরাল হয়েছে নেট দুনিয়ায়।
ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত রমনা কালীমন্দিরের পাশের পুকুর থেকে গত ৩ আগস্ট ছবিটি তুলেন ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার মাইমম সজীব। চলতি মাসের ৯ তারিখ ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করার পরপরই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।
মাইমম সজীব জানিয়েছেন, ছবিটির পেছনের গল্প। তিনি জানান, মন্দিরের ফটকের পাশেই রয়েছে পুকুর, সে পুকুরজুড়ে ফুটে থাকে পদ্ম ও লাল শাপলা।
পুকুরের সৌন্দর্য আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে নানা ধরনের পাখির আগমন। পুকুরের মাছ শিকার করতে আসে মাছরাঙ্গা, কানিবক। তাছাড়া কয়েকমাস যাবত ডাহুক, পানকৌড়িসহ বিভিন্ন ধরনের পাখিদের আনাগোনাও বেড়েছে। আছে কাঠবিড়ালি আর সাপও।
মাইমম সজীব বলেন, "ছবি তোলার জন্য আলোকচিত্রীদের কাছে এ স্থানটি বেশ পরিচিত। লকডাউনে মানুষের আনাগোনা কম হওয়ায় বেশ ভালো পাখির ছবি পাওয়া গেছে এবার। তাই কালীমন্দিরের পুকুরপাড়ে প্রায়ই এখন ঝোপঝাড়ের আড়ালে নিঃশব্দে আমার মত অনেক ফটোগ্রাফারদের অবস্থান করতে দেখা যায় কাঙ্ক্ষিত ছবির অপেক্ষায়। এ পুকুরে গত বছরও আমি বেশ ভালো তিলামুনিয়ার ছবি পেয়েছিলাম। এ বছর পাখিদের আনাগোনা দেখে আর এ মাসেই ডাহুক বাচ্চা দেওয়ায়, সকাল থেকেই অবস্থান করতাম পুকুর পাড়ে। ভালো ছবির জন্য ভালো সময়ও দিতে হয়েছে আমাকে"।

"পাখির ছবি তুলতে গিয়ে লক্ষ করলাম, পুকুরে সাপের সংখ্যাও কম না। দেখলাম মাছের পোনা খাওয়ার জন্য সাপগুলোও বেশ তৎপর। প্রথমদিকে এত সাপ লক্ষ করিনি, পরবর্তীতে খেয়াল করছিলাম দিনদিন সাপের বাচ্চার সংখ্যা বাড়ছে পুকুরপাড়ে। টানা এক সপ্তাহ সকাল থেকে সারাদিন পুকুরপাড়ে থাকতাম ছবি তোলার জন্য। একদিন দুপুরের দিকে কিছু সাপের বাচ্চাকে দেখছিলাম মাছ ধরে ধরে পুকুর পাড়ে নিয়ে আসছিলো, মাছের আকারগুলো বড় হওয়ায় পানিতে মাছ খেতে পারছিলো না সাপেরা, তাই পাড়ে নিয়ে এসে খাওয়ার চেষ্টা করছিলো। এমন সময় খেয়াল করলাম একই সাথে দুইটা সাপের বাচ্চা একটা মাছ মুখে পুরে নিয়ে পাড়ের দিকে এগিয়ে আসছিলো, তখনই সেই মুহূর্তটা আমার ক্যামেরাবন্দি হয় আর তার ফলাফল এই ছবিটি"।
"একজন ফটোগ্রাফার তখনই মনে আনন্দ পায়, যখন তার কাঙ্ক্ষিত ছবিটি পায়। যতক্ষণ তার মনের মত ছবিটি না হচ্ছে ততক্ষণ সে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষায় থাকে। আমিও সেই অপেক্ষাতেই ছিলাম। অবশেষে এই ছবিটির মাধ্যমে আমার অপেক্ষা সার্থক হয়েছে", যোগ করেন সজীব।
মাইমম সজীব গত দুই বছর ধরে নিয়মিত প্রাণীদের ছবি তুলছেন। তিনি ক্যামেরার মাধ্যমেই কাজ করতে চান দেশের বন্যপ্রাণীদের জন্য। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ছেলে সজীব চাকরি করেন রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে। সেই সূত্রে বসবাস তার ঢাকাতে তবে সুযোগ পেলেই ছবি তুলতে বের হয়ে যান বন্যপ্রাণীর নীড়ে।