চেক প্রত্যাখ্যানের মামলায় আটকে আছে ৯,৬০০ কোটি টাকা
১৯৮৩ সালে রাজধানীর গুলশানের কাপড় ব্যবসায়ী আসাদুর রশিদ ডনের কাছ থেকে তার বন্ধু জাবেদ হোসেন দশ লাখ টাকা ধার নেন কাপড় আমদানির জন্য। ওই টাকার সিকিউরিটি হিসেবে জাবেদ হোসেন ডনকে অগ্রণী ব্যাংক মতিঝিল শাখার নিজ একাউন্টের দুইটি চেক দেন।
তিন মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও নানা টালবাহানা করে জাবেদ। চেকে উল্লেখিত নির্ধারিত তারিখের ছয়মাসের মধ্যে ডন টাকা তোলার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে চেক জমা দিলে তা প্রত্যাখ্যান (ডিজঅনার) হয়। এরপর আইনি নোটিশ দিলেও কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে ঢাকার আদালতে ১৯৮৪ সালের জুলাই মাসে বন্ধু জাবেদের বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের মামলা করেন ডন।
তিন বছর বিচার কাজ শেষে পক্ষে রায় পান ডন। রায়ে মামলার সমুদয় খরচ ও সুদসহ ১৬ লাখ টাকা ডনকে দেওয়ার জন্য রায় দেন আদালত। একইসাথে ছয় মাসের কারদণ্ড হয় জাবেদের।
রায়ে ঘোষণা করা অর্থের একটি অংশ জমা দিয়ে ১৯৮৭ সালের শেষ দিকে হাইকোর্টে আপিল করে জামিন নেন জাবেদ। দীর্ঘ ৭ বছর আপিল শুনানি করে হাইকোর্ট ডনের পক্ষে রায় দেন, রায়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় বহাল রাখেন এবং এর সাথে আরও ছয় লাখ টাকা সুদ ও মামলার খরচ দিতে রায় দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এই আপিল নিষ্পত্তি করতে সাত বছরে ৫টি বেঞ্চ পরিবর্তন হয়েছে বলে জানান মামলার আইনজীবী।
১৯৯৪ সালের শুরুর দিকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করেন জাবেদ।
২৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এই আপিল নিষ্পত্তি হয়নি। এর মধ্যে ১৬ জন প্রধান বিচারপতি অবসরে গেছেন। ২০০৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন ডন। এরপর থেকে তার ছেলে আশরার রশিদ প্লাবন এই মামলা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ফার্মাসিউটিকেল কোম্পানির জন্য মেশিন আমদানি করেন।
প্লাবন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, '২০০৮ সাল থেকে এই মামলা নিষ্পত্তির জন্য সুপ্রিম কোর্টের বারান্দা ঘুরতে ঘুরতে হয়রান। বাবা এই মামলা করে বিচারিক আদালতে ন্যায় বিচার পেলেও, এখন আপিলে আটকে আছে। এখন আর কোর্টে যাই না। একজন আইনজীবি নিয়োগ করা আছে তিনি বছরে দুই/একবার খোঁজ খবর নেন। এখন পর্যন্ত আপিলটির চূড়ান্ত শুনানি হয়নি।'
তিনি বলেন, 'পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া গুলশানের কালাচাঁদপুরে সেই সময় আট কাঠা জমি বিক্রির ১০ লাখ টাকা বাবা ধার দিয়েছিল তার বন্ধুকে। এখন এই টাকার আশা ছেড়ে দিয়েছি।'
এই মামলায় প্লাবনের আইনজীবী দুলাল সরকার টিবিএসকে বলেন, 'এই আপিল চূড়ান্ত শুনানির জন্য গত বছর করোনার আগে আবেদন করা হলেও এখন পর্যন্ত তা শুনানির তালিকায় আসেনি।'
আপিলের জন্য এই মামলায় জাবেদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন খোন্দকার মাহাবুব উদ্দিন আহমেদ। যিনি ২০১৪ সালে মারা গেছেন।
এখন মামলাটি পরিচালনা করছেন, আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার। তিনি বলেন, 'জাবেদ হোসেন ২০১৯ সালের শেষ দিকে আমাকে এই আপিলের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিলেও করোনার কারণে আর আপিল বিভাগে যাওয়া সম্ভব হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব এটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নজরে আনা হবে'।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক টিবিএসকে বলেন, 'চেক প্রত্যাখ্যানের মামলার পরিমাণ অশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। এ রকম পুরনো মামলা খুঁজে বের করে দ্রুত নিষ্পত্তিতে করতে সুপ্রিম কোর্টের একটি মনিটিরিং টিম থাকার কথা। মনিটরিং কমিটি তালিকা করে প্রধান বিচারপতির কাছে দিলে, প্রধান বিচারপতি মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে উদ্যোগ নেবেন'।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা যায়, আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট ও সারাদেশের বিচারিক আদালতে এভাবে চেক ডিজঅনারের ৭ লাখ ৬৮ হাজার ৬০০ মামলায় প্রায় ৯,৬০০ কোটি টাকা আটকে আছে বিভিন্ন ব্যাংক, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির।
সূত্র জানায়, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিচারিক আদালতে- ৭,১২,৪০০ মামলায় আটকানো রয়েছে প্রায় ৫,৪০০ কোটি টাকা। হাইকোর্টে ৪৯ হাজার আপিল ও চার হাজার রিটের বিপরীতে আটকানো প্রায় ২,৩০৪ কোটি টাকা, আপিল বিভাগে ৩,৬০০ আপিলের বিপরীতে আটকানো প্রায় ১,৮৯৬ কোটি টাকা।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানিয়েছে, এই মামলা, আপিল ও রিটের মধ্যে ব্যাংকের আপিল ও মামলা বেশী। আর হাইকোর্টে চার হাজার রিটের সবগুলোই ব্যাংকের বিরুদ্ধে।
আপিল বিভাগে ৩,৬০০ আপিলের মধ্যে ২,৯০০টি আপিল ব্যাংকের দায়ের করা, বাকি ৭০০ ব্যক্তি পর্যায়ের। হাইকোর্টে ৪৯ হাজার আপিলের মধ্যে ৩৮,৪০০ আপিল বিচারিক আদালতে ব্যাংকের পক্ষে রায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির দায়ের করা। আর ১০,৬০০ আপিল ব্যক্তি টু ব্যক্তির।
ব্র্যাক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার দুই বছর পর ২০০৩ সালে ব্যাংকটির একটি শাখা থেকে কাপড়ের রং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মের্সাস জেরিন এন্টারপ্রাইজের মালিক নরসিংদির আব্দুল খালেক ৫০ লাখ টাকা ঋণ নেন। এই ঋণের বিপরীতে তার প্রতিষ্ঠানের জমি মর্টগেজ রাখেন এবং তার পূবালী ব্যাংকের একাউন্টের পাঁচটি সিকিউরিটি চেক জমা দেন। ২০০৮ সালে সুদে আসলে এই ঋণের পরিমান দাঁড়ায় এক কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
এই টাকা না পেয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের কাছে থাকা সিকিউরিটি চেক ডিজঅনার হলে ঢাকার আদালতে ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকার চেক ডিজঅনারের মামলা করে ব্যাংকটি। ২০১০ সালে ব্যাংকের পক্ষে রায় আসে।
এরপর ওই ব্যবসায়ী রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না করে হাইকোর্টে রিট করেন রায় চ্যালেঞ্জ করে। রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের রায় ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন এবং রায়টি কেন বেআইনী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এখন পর্যন্ত ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি না হওয়ায় টাকা পায়নি ব্যাংক।
ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবী মোহাম্মদ শরীফ আল মামুন টিবিএসকে বলেন, 'সুদে আসলে যে পরিমান টাকা ব্যাংক পাবে, মর্টগেজ রাখা প্রোপার্টি বিক্রয় করে সেই টাকা উঠানো সম্ভব নয়। তাই চেক ডিজঅনারের মামলা করা হয়েছিল। হাইকোর্টে রিটের প্রেক্ষিতে জারি করা রুলের শুনানির জন্য কয়েক দফা আবেদন করা হলেও, এখন পর্যন্ত শুনানি সম্ভব হয়নি'।
মামলা নিষ্পত্তিতে কচ্ছপ গতি কেন
কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী টিবিএসকে বলেন, 'বিচারিক আদালতে ছয় মাসের মধ্যে এরকম মামলা নিষ্পত্তির আইন রয়েছে। শুধু চেক প্রত্যাখানের মামলায় নয়, সব রকম মামলার ক্ষেত্রেই বিচার সম্পন্ন হতে কচ্ছপ গতি। এর মূল কারণ হলো সরকার আইন করে বিভিন্ন আদালতকে যে এখতিয়ার, ক্ষমতা ও বিচার নিষ্পত্তিতে সময়সীমা দেওয়া হয়েছে, তা মানা হয়না। হয়তো বিচারবিভাগ বা বিচারকদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। তবে এভাবে চলতে পারে না। এসব মামলা নিষ্পত্তিতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে'।
তবে, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক টিবিএসকে বলেন, 'এসব মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার পেছনে ব্যাংকগুলোর আইনজীবীরা মূল দায়ী। কারণ হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের শুনানিতে দেখা যায় ব্যাংকের আইনজীবীরা উপস্থিত থাকেন না। তারা কেন উপস্থিত থাকেন না, তার পিছনেও কোনো গোপন রহস্য থাকতে পারে। সেটি আর বললাম না।'
'তবে দেখা যায় ব্যাংকের দায়ের করা আপিল বা রিট শুনানিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের আইনজীবীর অনুপস্থিতির অযুহাতে অপরপক্ষরা বছরের পর বছর পার করছেন শুনানির জন্য সময় চেয়ে নিয়ে। এভাবেই চলছে আর কি', যোগ করেন এই সংবিধান বিশেষজ্ঞ।
বিচারিক আদালতে বাদীর পক্ষে প্রায় শতভাগ মামলার রায়
সুপ্রিম কোর্টের একটি বিশেষ শাখায় থাকা বিচারিক আদালতের মামলার রায়ের পরিসংখ্যান পর্যালোনায় দেখা গেছে গত দুই বছরে বিচারিক আদালতে চেক প্রত্যাখ্যানের শতভাগ মামলায় বাদীর পক্ষে রায় হয়েছে। ওই শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা জানান, দুই একটি মামলাতে হয়তো বিবাদীর পক্ষে রায় হয়, কোনো ভুলের কারণে বা প্রতারণামূলকভাবে মামলা দায়ের করলে।
বিচারিক আদালতে ব্যাংকের পক্ষের রায় টিকছে না হাইকোর্টে
রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার টনি রোজারিও ২০০৬ সালে এইচএসবিসি ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাখ টাকা ঋণ নেন। পাঁচ বছর মেয়াদী এই ঋনের টাকা সুদে আসলে কিস্তিতে ১০ লাখ টাকা পরিশোধের কথা। পাঁচ বছরের শেষ দিকে এসে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকার কিস্তি বকেয়া পড়ে।
২০১১ সালে ব্যংকের কাছে দেওয়া টনি রোজারিও'র সিকিউরিট চেকে ১০ লাখ টাকার অংক বসিয়ে তা ডিজঅনার করার পর ঢাকার আদালতে মামলা করে এইচএসবিসি ব্যাংক। মামলার রায় আসে ব্যাংকের পক্ষে। এরপর টনি রোজারিও তার পরিশোধ করার ঋণের ব্যাংক স্টেটমেন্ট হাইকোর্টে দাখিল করে আপিল করলে তার পক্ষে রায় আসে। তিনি ব্যাংটির প্রাপ্য ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যংকের পক্ষে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে প্রায় ২১৭০ টি আপিল ও ১৩০০ রিট নিষ্পত্তি করেছে হাইকোর্ট বিভাগ। এরমধ্যে প্রায় ১৪০০ আপিলের ঘটনা ছিল টনি রোজারিও'রআপিলের মতো। আর ১৩০০ রিটের মধ্যে প্রায় ১০০০ রিটের রায় গেছে ব্যক্তির পক্ষে।
চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা করার প্রক্রিয়ায় ত্রুটি
ব্যাংক ও কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ শাহ মোহাম্মদ আহ্সানুর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'কোনো ঋণগ্রহীতার বিরুদ্ধে যখন ব্যাংক মামলা করবে, আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই মামলার আবেদনে ব্যাংককে অবশ্যই ঋণের বিস্তারিত লিখতে হবে। ব্যাংক কবে ঋণ অনুমোদন দিয়েছে, কত টাকার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে, কতবছরের জন্য ঋণ দিয়েছে, ঋণ দেওয়ার পর কত টাকা গ্রাহক পরিশোধ করেছে, সুদসহ কত টাকা পাওনা রয়েছে, সবকিছুর বিস্তারিত লিখতে হবে'।
তিনি বলেন, 'এখন ব্যাংকগুলো প্রতিটা ঋণ দেওয়ার আগে গ্রাহকের কাছ থেকে ব্লাংক সিকিউরিটি চেক নেয়। যখন এনআই এক্ট অনুযায়ী চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা করে তখন সুদসহ মোট ঋণের পরিমাণ একসঙ্গে উল্লেখ করে। প্রত্যাখ্যান হওয়ার আগে চেকে টাকার অংক লেখার সময়ও তাই লিখে। কিন্তু ঋণ দেওয়ার পর কত টাকা গ্রাহক পরিশোধ করেছে সেটি উল্লেখ করে না'।
তিনি বলেন,'বিচারিক আদালতে চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা হলে কোনো সাক্ষী গ্রহণ করা হয় না। শুধু বাদী নিজেই সাক্ষী দেন। এছাড়াও মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া বা মামলার আবেদন নিয়ে বিচারকরা কোনো কিছু চিন্তা করেন না। ফল বিচারিক আদালতে বাদীর পক্ষে বেশীরভাগ মামলার রায় হলেও হাইকোর্টে সেই রায়গুলো টেকে না। বেশীরভাগ রায়ই মডিফাই করেন হাইকোর্ট'।
আর ব্যক্তি টু ব্যক্তি চেক প্রতারণার মামলার ক্ষেত্রেও অনেকসময় টাকার অংক না বসিয়ে ঋণদাতাকে চেক দেওয়া হয় সেগুলোর রায়ও হাইকোর্টে টেকে না।
বিচারিক আদালতে কচ্ছপগতি
চেক সংক্রান্ত মামলার শুনানির জন্য কোনো আদালত নির্ধারিত ছিল না। এ ধরনের মামলার শুনানি অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে হত।
সাম্প্রতিক হাইকোর্টের রায়ে চেক লেন-দেন ও ডিজঅনার সংক্রান্ত মামলার বিচার শুধু যুগ্ম দায়রা জজ আদালতে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ কারণে চেকের মামলার রায়ের পর আপিল করার ফোরাম চেঞ্জ হয়ে যেত। হাইকোর্টে আপিল করতে হতো।
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'বিচারিক আদালতে বিচারকের সংকট রয়েছে। ফলে অন্যান্য মামলার চাপের কারণে চেক সংক্রান্ত মামলার বিচারে ধীরগতি। এছাড়াও দেশের প্রতিটি জেলা আদালতে দেড় শতাধিক অতিরিক্ত জেলা জজের পদে বিচারক নেই'।
এই ধীরগতি থেকে বের হতে হলে আদালত ও বিচারকের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এছাড়াও বিচারকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিচারে গতি আনতে সমাধান কি
বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ টিবিএসকে বলেন, 'এর সমাধান বেশ সহজ। ২০১৪ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে সেখানকার চেক ডিজঅনার মামলা নিষ্পত্তিতে যুগান্তকারী রায় দিয়েছিলেন, সেই রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, এ সংক্রান্ত মামলা-জট কমিয়ে আনতে পৃথক আদালত প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। দেশের যে পরিমান আদালত ও বিচারক রয়েছে তা দিয়ে এসব মামলার নিষ্পত্তি সম্ভব নয়'।
ভারতের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের নিয়োগ দিয়ে পৃথক আদালত স্থাপনের নির্দেশনা দেন সরকারকে। সরকার সে অনুযায়ী কিছু জায়গায় ব্যবস্থাও নিয়েছে। বাংলাদেশেও এরকম করা যেতে পারে। হাইকোর্টেও পৃথক বেঞ্চ করা যেতে পারে। এছাড়াও বিচারিক আদালতে এসব মামলার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া থাকলেও হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের জন্য নেই। একটি সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারেন প্রধান বিচারপতি। একইসঙ্গে মামলা নিষ্পত্তিতে মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।
জানা যায়, ভারতের আদালতগুলোতে প্রায় ৩৫ লাখ চেক ডিজঅনার মামলা ঝুলে আছে। এই পরিস্থিতি উদ্বেগজনক উল্লেখ করে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিয়েছেন ভারতের প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ।
কিভাবে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পতি করা যায় সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য গত ১০ মার্চ বোম্বে হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি আরসি চাভানকে চেয়ারম্যান করে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
তিন মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে সুপ্রিম কোর্টের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দিতে বলা হয়।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক টিবিএসকে জানিয়েছেন, 'এসব মামলা কিভাবে দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়, তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে দ্রুত বসে একটি গাইডলাইন প্রনয়ণ করা হবে'।