চীন ও রাশিয়ার টিকা যত দ্রুত সম্ভব পেতে চায় সরকার
রাশিয়ার স্পুটনিক ভি ও চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিনের বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব সম্পূর্ণ খোঁজ-খবর নিয়ে আমদানি প্রক্রিয়াকে ত্বরান্তিত করতে চাচ্ছে বাংলাদেশ। বুধবার (৫ মে) সকালে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা সংগ্রহ ও বিতরণ সংক্রান্ত আন্ত:মন্ত্রণালয় পরামর্শক কমিটির প্রথম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশীদ আলম।
ভ্যাকসিনের বিকল্প উৎস সংশ্লিষ্ট আলোচনার জন্যই বুধবার মিটিং করা হয়েছে।
এদিকে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট চুক্তি অনুযায়ী ভ্যাকসিন সরবরাহ না করলে, বাংলাদেশের পরিশোধ করা অগ্রিম অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে বলে বুধবার জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অধ্যাপক খুরশীদ আলম।, চীন উপহার হিসেবে সিনোফার্মের যে টিকা দেবে- তা দ্রুততম সময়ে দেশে নিয়ে আসার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
চীন-রাশিয়ার টিকার দাম নির্ধারণ বিষয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা- এবিষয়ে জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, সিনোফার্ম কিংবা স্পুটনিক- ভি'র আবিষ্কারক সংস্থা কেউই এখনো আমাদের টিকার দাম জানায়নি। ওরা আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় অন্য তথ্যগুলো সরবরাহ করেছে। আমরা সার্বিক প্রক্রিয়া শেষ করে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে টিকা নিয়ে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছি।
কমিটিতে অন্য কোন সদস্য নেওয়া যায় কি না সে বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা সংগ্রহ ও নিরাপদ ও কার্যকর টিকা নির্বাচন চাহিদা নিরূপণ, বিতরণ ও দর-কষাকষির মাধ্যমে টিকার যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের জন্য ৩ মে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে সরকার।
এদিকে বাংলাদেশকে দেওয়া চীনের উপহারের পাঁচ লাখ টিকা ১২ মে দেশে আসবে বলে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ার পরই সরকার চীন থেকে টিকা পাওয়ার চেষ্টা শুরু করে।
সেরাম ভ্যাকসিন সরবরাহ না করলে অর্থ ফেরত দেবে: অর্থমন্ত্রী
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট চুক্তি অনুযায়ী ভ্যাকসিন সরবরাহ না করলে বাংলাদেশের পরিশোধ করা অগ্রিম অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে ভ্যাকসিনের জন্য কতোদিন অপেক্ষা করার পর বাংলাদেশ তার পাওনা ফেরত চাবে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
বুধবার (৫ মে) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, "সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে যে ভ্যাকসিন পাবো না, তা আমরা এখনও জানি না। যখন আমরা চূড়ান্তভাবে এ বিষয়ে জানতে পারবো, তখন হয়তো টাকা অবশ্যই ফেরত পাব।,"
"মৌখিক আলোচনার ভিত্তিতে আমরা সেরামকে অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করিনি। লিখিত চুক্তি হয়েছে, যা মেনে চলতে সবপক্ষের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করার বিষয়ে তাদের বাধ্যবাধকতা ছিল। কারণ, ভ্যাকসিন এখন মানুষের জীবন-মরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত," যোগ করেন তিনি।
সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ক্ষতিপূরণ দাবি করার সুযোগ রয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে যে সব শর্ত থাকে, তার সবই এ চুক্তিতে রয়েছে,"
তিনি বলেন, "ভ্যাকসিনের জন্য আমরা আর একটি মাত্র উৎসের ওপর নির্ভর করবো না। বিভিন্ন দেশের অন্য যে সব কোম্পানি মানসম্পন্ন ভ্যাকসিন উৎপাদন করছে, সেগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি আমরা।"
১৪ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন ঘাটতি, দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা:
দেশে করোনাভাইরাসে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার জন্য ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫১৪ ডোজ ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ অবস্থায় নির্দিষ্ট সময়ে অক্সফোর্ডের টিকা না্ আসলে দেশে টিকা সংকট সৃষ্টি হবে। সেক্ষেত্রে প্রথম ডোজ নেওয়াদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার বিষয়ে কি করা হবে- তা এখনো ঠিক করতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বুধবার দুপুরে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন এসব তথ্য জানান।
রোবেদ আমিন বলেন, টিকা সংকটের কারণে গত ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে এখনও দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া বাকি ২৭ লাখ ১৩ হাজার ৪৮ জন। দেশে এখন মজুত টিকা আছে ১২ লাখ ৭৩ হাজার ৫৩৪ জনের। এ কারণে টিকার দ্বিতীয় ডোজের অনিশ্চয়তায় পড়েছেন ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫১৪ জন।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার বিষয়ে সময় মতো আমরা সিদ্ধান্ত নেব। পৃথিবীব্যাপী জরুরি পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার জন্য যে সিদ্ধান্ত, সেটাই নেয়া হবে। শঙ্কার কোনো কারণ নেই।
রোবেদ আমিন বলেন, ইতোপূর্বে জরুরি পরিস্থিতি ম্যানেজ করতে অন্যান্য কোম্পানির টিকা দিয়ে অন্য রোগের টিকা কর্মসূচির চলমান রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশও যদি ভিন্ন কোম্পানির কোভিড টিকা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু করে, তাহলে আমরাও এ সিদ্ধান্ত নেব।