চট্টগ্রাম থেকে পার্সেল ট্রেনে পণ্য পাচ্ছে না রেল কর্তৃপক্ষ
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধগতিতে চলমান লকডাউনে গত ১৪ এপ্রিল থেকে বিশেষ পার্সেল ট্রেন চালু করে রেল কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম- সরিষাবাড়ি রুটে শুরু থেকেই পণ্য বুকিং সংকটে রয়েছে পার্সেল ট্রেনটি। ধারণ ক্ষমতার ১৩ ভাগ পণ্য বুকিং পাচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ।
প্রান্তিক কৃষকের উৎপাদিত কৃষি পণ্য, সবজি ও অন্যান্য জরুরী পার্সেল পরিবহনে দেশের চারটি রুটের পার্সেল ট্রেন পরিচালনা করছে রেল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-জামালপুরের সরিষাবাড়ি রুটে চলাচল করছে বিশেষ পার্সেল ১ এবং বিশেষ পার্সেল ২।
৬টি বগির প্রায় ৯০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার এই ট্রেনে পণ্য বুকিং হচ্ছে গড়ে প্রায় ১১.৩ টন। কখনো পণ্য বুকিংয়ের পরিমাণ নেমে আসে ৮ টনে। সরিষাবাড়ি থেকে ফিরতি পথে একাধিকবার কোন পণ্য বুকিং না পাওয়ারও ঘটনা ঘটেছে। ফিরতি পথে পণ্য বুকিং এর পরিমাণ গড়ে প্রায় ১.৫ টন। গত ১৪ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত পণ্য বুকিংয়ের পরিমাণ পর্যালোচনায় এই চিত্র দেখা যায়।
রেল কর্তৃপক্ষ বলছে লকডাউনে পণ্য আসার সম্ভাব্য প্রায় সকল ক্ষেত্র বন্ধ থাকায় প্রতাশা অনুযায়ী পণ্য মিলছে না। লোকসান স্বত্ত্বেও সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা এই রুটে পার্সেল ট্রেন পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে।
রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আনসার আলী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'চট্টগ্রাম থেকে মাছ, শুটকি, ফার্নিচার, সবজি, টায়ার টিউব, তুলাসহ বিভিন্ন পণ্য যাচ্ছে জামালপুরের সরিষাবাড়ির উদ্দেশ্যে। পার্সেল ট্রেনে ৬টি ওয়াগন রয়েছে। একটি ওয়াগনে পণ্য ধারণ ক্ষমতা প্রায় ১৫ টন। প্রতিদিন পুরো ট্রেনে গড়ে ১১ টন পণ্য বুকিং পাচ্ছি। যেসব জায়গা থেকে পণ্য আসার কথা লকডাউনের কারণে সেগুলো বন্ধ। তাই প্রত্যাশা অনুযায়ী পণ্য বুকিং হচ্ছে না। এরপরও আমরা কৃষি পণ্য পরিবহনে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া সহায়তা চালু রেখেছি'।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, লকডাউনে সব ধরনের পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের পাশাপাশি কৃষিজাত পণ্য ও পার্সেল পরিবহনে ৪টি রুটে বিশেষ পার্সেল ট্রেন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। চট্টগ্রাম-সরিষাবাড়ী, ঢাকা-সিলেট, খুলনা-চিলহাটি, পঞ্চগড়-ঢাকা রুটে চলাচল করছে এসব ট্রেন।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের শিডিউল অনুযায়ী, চট্টগ্রাম থেকে জামালপুরের সরিষাবাড়ি রুটের পার্সেল ট্রেনটি বিরতি নিচ্ছে ২২টি স্টেশনে। এর মধ্যে রয়েছে সীতাকুণ্ড, চিনকি আস্তানা, ফেনী, নাঙ্গলকোট, লাকসাম, কুমিল্লা, আখাউড়া, ভৈরব বাজার, কালিয়ারচর, বাজিতপুর, সরারচর, মানিকখালী, গচিহাটা, কিশোরগঞ্জ, নান্দাইল, আঠারবাড়, সোহগী, ইশ্বরগঞ্জ, গৌরীপুর ময়মনসিংহ জংশন, ময়মনসিংহ নুরুন্দি, নন্দিনা ও জামালপুর স্টেশন।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ম্যনেজার তপন কুমার চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে পার্সেল ১ ট্রেন প্রতিদিন বিকেল ৩টায় ছেড়ে যায়। সেটি ভোর চারটায় জামালপুরের সরিষাবাড়ি স্টেশনে পৌছায়। ফিরতি পথে পার্সেল-২ হয়ে ট্রেনটি ভোর ৫টায় সরিষাবাড়ী থেকে রওনা দিয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছায় সন্ধ্যা ৬ টা ৪০ মিনিটে। চট্টগ্রাম থেকে সরিষাবাড়ীর দূরত্ব ৪৬৯ কিলোমিটার।
রেল সূত্র জানায়, পার্সেল ট্রেনে গত ১৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে সরিষাবাড়ির পথে পণ্য বুকিং হয়েছিল ১১০৯৩ কেজি । ফিরতি পথে কোন পণ্য বুকিং ছিল না। ১৫ এপ্রিল যাত্রা পথে ৮,৬১৮ কেজি, ফিরতি পথে ৫০ কেজি, ১৬ এপ্রিল যাত্রা পথে ৭,৭০২ কেজি ফিরতি পথে ১০০ কেজি, ১৭ এপ্রিল যাত্রা পথে ১১,৩৪২ কেজি পণ্য বুকিং হয়। এই দিন ফিরতি পথে কোন পণ্য বুকিং হয়নি। ১৮ এপ্রিল যাত্রা পথে ১৪,১০৩ কেটি ফিরতি পথে ২০০ কেজি, ১৯ এপ্রিল যাত্রা পথে ১০,৩১১ কেজি এবং ফিরতি পথে ৩২০ কেজি, ২০ এপ্রিল যাত্রা পথে ১৫,৮৮৫ কেজি ফিরতি পথে ৪৩৫ কেজি পণ্য বুকিং হয়।
এদিকে পার্সেল ট্রেনে পণ্য সংকট থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে চলাচলরত পণ্য ও তেলবাহী ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। চলছে শিডিউল অনুযায়ী সকল ট্রেন। যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় পণ্যবাহী ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে প্রায় ৬ ঘন্টা আগে।
রেলওয়ের চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ডের (সিজিপিওয়ই) প্রধান ইয়ার্ড মাস্টার আবদুল মালেক বলেন, 'বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেইনার ও তেলবাহী ট্রেন চলাচল করছে ৬ থেকে ৭টি। এর মধ্যে ৪ থেকে ৫টি কন্টেইনারবাহী এবং ৩টি তেলবাহী। কন্টেইনার ট্রেনগুলো ঢাকা কমলাপুর আইসিডি (ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো) এবং তেলবাহী ট্রেনগুলো ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, সিলেট, শ্রীমঙ্গল এবং রংপুরের রুটে চলাচল করছে'।
আবদুল মালেক আরো বলেন, 'যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় সেসব ট্রেনের ইঞ্জিন পণ্যবাহী ট্রেনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে রেলের গতি বেড়েছে। আগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পণ্যবাহী ট্রেন পৌঁছতে সময় লাগতো ১৬ থেকে ১৭ ঘন্টা। বর্তমানে এই রুটে ট্রেন ১০ ঘন্টায় পৌঁছতে পারছে।