চট্টগ্রামে পূজামণ্ডপে হামলা: সাত মামলায় আসামি ২২শ, গ্রেফতার ১৬৮ জন
কুমিল্লার ঘটনার জেরে চট্টগ্রাম নগর ও বিভিন্ন উপজেলায় পূজামণ্ডপে হামলা ও তোরণ ভাঙচুরের ঘটনায় পৃথক সাতটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২৮৯ জনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি অজ্ঞাতপরিচয় এক হাজার ৯৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় আজ মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) পর্যন্ত ১৬৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মামলার আসামিদের মধ্যে- চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির জাফর সাদেক, সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মুজিবুর রহমানসহ দল দুটির শতাধিক নেতাকর্মীর নাম রয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে নগরের আন্দরকিল্লা জেএম সেন হল পূজামণ্ডপে হামলা ও তোরণ ভাঙচুরের ঘটনায় শনিবার পুলিশ বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় ৮৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে।
এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে পাঁচশ জনকে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ১০০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ২৫ জনকে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। আদালত ১০ আসামীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন। বাকী ১৫ জনের রিমান্ড শুনানি এখনো হয়নি।
কোতোয়ালি থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, "ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জড়িতদের চিহ্নিত ও আসামি করা হয়েছে। এদের অধিকাংশই নগরীর বৃহৎ পাইকারি কাপড়ের বাজার টেরিবাজারের দোকানমালিক ও কর্মচারী। কাপড় ব্যবসায়ী ইমরান মাজেদ ওরফে রাহুল ও মো. হানিফের নেতৃত্বে শুক্রবার জুমার নামাজের পর আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদের সামনে কুমিল্লায় কোরআন অবমাননার অভিযোগে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। দুজনের রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই।"
চার উপজেলায় গ্রেফতার ৮৪, অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী:
সাতকানিয়া উপজেলার শিব-দুর্গামন্দির, বাঁশখালী নাপোড়া ও চাম্বল পূজামণ্ডপ, হাটহাজারীর সরকারহাট পূজামণ্ডপ, কর্ণফুলী উপজেলার শাহমীরপুর পূজামণ্ডপে হামলা ও তোরণ ভাঙচুরের ঘটনায় ছয়টি পৃথক মামলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত ৮৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া আসামিদের মধ্যে অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী বলে দাবী করেছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খাঁন।
তিনি টিবিএসকে বলেন, "আমরা মনে করি পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা সরকারের পরিকল্পনার অংশ। নাহলে সাতকানিয়ার ঘটনায় বোয়ালখালী এবং হাটহাজারীর ঘটনায় মিরসরাই থেকে কেন বিএনপি নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হবে? "
এদিকে সাতকানিয়ার ঘটনায়, গতকাল সোমবার রাতে বোয়ালখালী উপজেলা থেকে চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে দুইজন বিএনপি ও জামায়াত নেতা। তারা হলেন- সারোয়াতলী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ও দক্ষিণ জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন (৪৫), আমুচিয়া ইউনিয়নে জামায়াত নেতা কাছিম উদ্দিন (৩৭)।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল করিম বলেন, "গ্রেফতারকৃতরা মামলার আসামী।"
তবে সাতকানিয়া থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, "শুক্রবার উপজেলার দক্ষিণ কাঞ্চনার জোটপুকুরিয়া বাজার এলাকার পার্শ্ববর্তী শিব-দুর্গা মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে, এসব মামলায় ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বোয়ালখালী থেকে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, মামলায় তাদের নাম নেই। তবে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।"
বাঁশখালী থানার ওসি কামাল উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, " দুর্গা মন্দিরে হামলার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলায় ৬২ জনের নাম উল্লেখসহ ৯৬২ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের অধিকাংশই বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মী।"
অন্যদিকে হাটহাজারীর সরকারহাট পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় মিরসরাই থেকে ৩ জন ও জোড়ারগঞ্জ থানা এলাকা থেকে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই থানার ওসি মুজিবুর রহমান ও জোড়ারগঞ্জ থানার ওসি মো. নুর হোসেন মামুন টিবিএসকে জানান, গ্রেফতারকৃতরা বিএনপি ও জামায়াতের লোক।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, "এটি খুব লজ্জাজনক। আগে গায়েবি মামলায় আসামি করা হতো, এখন সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় আমাদের পদধারী নেতাদের আসামি করা হচ্ছে। সরকার রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতেই নেতা-কর্মীদের আসামি করেছে।"