খালেদা জিয়ার বিষয়টি সরকার মানবিকভাবেই দেখছে: আইনমন্ত্রী
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে বিদেশে নিতে পরিবারের আবেদন পর্যালোচনার পর দ্রুত সময়ে মতামত দিয়ে ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, "খালেদা জিয়ার বিষয়টি সরকার মানবিকভাবেই দেখছে।"
তবে 'সময় শেষ হয়ে যাওয়ায়' বৃহস্পতিবার মতামত প্রদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
আইন মন্ত্রণালয়ে খালেদার পরিবারের আবেদনের বিষয়ে দাপ্তরিক কাজ শেষে এদিন বিকালে মন্ত্রীর গুলশানের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে নথি নিয়ে যান আইন সচিব গোলাম সারওয়ার।
এরপর আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ার সাজা ও দণ্ডাদেশ স্থগিত করা হয়েছিল। দুটি নির্দিষ্ট শর্তে তাকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
"যেহেতু এখানে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা সম্পাদন হয়ে গেছে, এরপর এটাকে আবার চালু করার সুযোগ আছে কিনা; সেটা দেখে আমাদের অভিমত যথাশীঘ্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিব।"
তবে বৃহস্পতিবার সন্ধায় টেলিফোনে এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী টিবিএসকে বলেন, শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ থাকায় এই দুই দিন সম্ভব নাও হতে পারে মতামত দেওয়া। তবে প্রয়োজনে মতামত দেওয়া হবে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
বুধবার তৃতীয়বারের মতো তার কোভিড টেস্ট করানো হলে টেস্টের রেজাল্ট 'নেগেটিভ' এসেছে। তার শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হওয়ার ২৬ দিন পর তিনি করোনামুক্ত হলেন।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে কারাগারে যাওয়ার পর গত বছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটলে পরিবারের আবেদনে সরকার দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত করে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়।
৭৬ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সে সময় শর্ত দেওয়া হয়, মুক্ত থাকার সময়ে খালেদা জিয়াকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।
এখন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে সরকারের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার। বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার বুধবার রাতে ওই আবেদন নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রাতেই তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় মতামতের জন্য।
আইনমন্ত্রী বলেছেন, যে শর্তে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করা হয়েছিল, তা শিথিলের সুযোগ আছে কিনা, তা এখন তারা দেখবেন। বিষয়গুলো দেখার পর এ বিষয়ে মতামত দেবেন জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেছেন, "খালেদা জিয়ার বিষয়টি সরকার মানবিকভাবেই দেখছে।"
খালেদা জিয়াকে অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি কী হবে তা আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা।
উত্তরে তিনি বলেছেন, "আমরা মতামত দিলে সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সংক্ষেপিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে। মন্ত্রী মহোদয় (আইনমন্ত্রী) সিদ্ধান্ত দিলে, তখন বাকিটা হবে।"
ওই আবেদনে খালেদা জিয়াকে কোন দেশে নিতে চাওয়া হয়েছে জানতে চাইলে সচিব বলেন, "না, উনারা কোনো দেশ উল্লেখ করেননি। শুধু চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার কথা বলেছেন। আর কিছু বলেননি।"
এদিকে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার তার করোনা পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। এতে তার করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধের যে আদেশ আছে বিদেশে যাওয়ার জন্য সেক্ষেত্রে আর বাধা রইল না।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত সোমবার থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন। শ্বাসকষ্ট হওয়ায় কেবিন থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয় তাকে। তবে সিসিইউতে তাঁর শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। শ্বাসকষ্টের যে সমস্যা, তা-ও পুরোপুরি সারেনি।
খালেদা জিয়ার একজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিবিএসকে বলেন, শ্বাসকষ্ট নিয়ে সিসিইউতে ভর্তির পর খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে, এমনটা বলা যাচ্ছে না। তার শ্বাসকষ্ট পুরোপুরি কমেনি। অক্সিজেন স্যাচুরেশন কখনো কখনো ৯০ বা তার নিচেও নামছে। তবে অক্সিজেন দেওয়া হলে মাত্রা ৯৯ পর্যন্ত থাকছে। তার ডায়াবেটিসও অনিয়ন্ত্রিত। ওই চিকিৎসক বলেন, খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েক দিন হাসপাতালে থাকতে হতে পারে। তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড আজ-কালের মধ্যে পরবর্তী প্রতিবেদন দেবে। এরপর পরিস্থিতি বোঝা যাবে।
গত ১০ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত হন খালেদা জিয়া। এসময় তার বাসার আরও ৮ জন কর্মীও করোনায় আক্রান্ত হন। দুই সপ্তাহের মধ্যে সবাই নেগেটিভ হলেও খালেদা জিয়ার নেগেটিভ আসল প্রায় একমাস পর। তবে বয়স বেশি হওয়ার কারণে তিনি 'পোস্ট-কোভিড জটিলতায়' ভুগছেন।