খাবার জোগাড় করতে গিয়ে শেষ সম্বল ভ্যানটিও হারালেন বৃদ্ধ
"লকডাউনের মধ্যে পুলিশে ধরে বলে অনেকদিন ভ্যান নিয়ে বাইরে যাইনি। বাড়িতে কোন খাবার নেই। চাল, তরকারি নেই। তাই সকালে বলেছিলাম, আজ ভ্যানটা নিয়ে যাও, না হলে খাবো কী। তারপর ভ্যান নিয়ে বাইরে যায় স্বামী। এ আমাদের কি হলো", বলে শুধুই কাঁদছিলেন হাসিনা বেগম। উপার্জনের একমাত্র উপায় ভ্যানটি হারিয়ে বুকফাঁটা আর্তনাদ করছিলেন ভ্যানচালক নুর মোহাম্মদ শেখও।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের তেঘরি গ্রামের ভ্যানচালক মোহাম্মদ আলী শেখ। স্ত্রী হাসিনা বেগম ও দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার। চার মেয়ের মধ্যে দুইজনের বিয়ে দিয়েছেন।
শুক্রবার (৯ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে শ্যামনগর সদরের কাঁচাবাজার থেকে অসহায় মানুষটির উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম মোটরভ্যানটি চুরি হয়ে যায়।
ভ্যানচালক মোহাম্মদ আলী শেখ জানান, "বাড়িতে চাল তরকারি নেই। বউ সকালে বলে, আজ বাইরে না গেলে খাবার জুটবে না। তারপর ভ্যানে যাত্রী নিয়ে শ্যামনগরে যাই। এরপর বাড়ির জন্য বাজারে তরকারি কিনতে ভ্যানটি রেখে বাজারের মধ্যে ঢুকি। কিছুক্ষণ পর এসে দেখি ভ্যানটি আর নেই", বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
অসহায় এ ভ্যানচালকের স্ত্রী হাসিনা বেগম জানান, "আমরা এখন খাবো কী। আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করি। স্বামী ভ্যান চালায়। লকডাউনের মধ্যে পুলিশ ভ্যান ধরে বলে অনেকদিন ভ্যান নিয়ে বাইরে যাইনি। সকালে আমিই যেতে বলেছিলাম। বাড়িতে খাবার জন্য চাল তরকারি ছিল না। বিকেলে শুনি, ভ্যান চুরি করে নিয়ে গেছে"।
এদিকে, ভ্যান চুরির পর ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা স্থানীয়রা জানান, "ভ্যানটি হারিয়ে চাচা হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। আমরা সবাই সান্ত্বনা দিয়েছি। পরিবারটির একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম ছিল ভ্যানটি। পরিবারটির আয়ের কোন মাধ্যম থাকলো না"।
ভুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফারুক হোসেন বলেন, "সে অত্যন্ত দরিদ্র মানুষ। ভ্যানটির উপর তাদের জীবিকা চলে। রাস্তার পাশে রেখে তরকারি কিনতে গিয়েছিল। তখন সেই ভ্যানটি চুরি করে নিয়ে গেছে। ছেলে সন্তান নেই। চারটি মেয়ের মধ্যে দুজনের বিয়ে দিয়েছেন, দুজন এখনো বাড়িতে রয়েছে। পরিবারটি খুব বিপদে পড়ে গেল"।
শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) শহিদুল ইসলাম বলেন, "ঘটনাটি থানাতে কেউ জানায়নি। অভিযোগ করলে ভ্যানটি উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করা হবে"।
অসহায় পরিবারটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে যোগাযোগ করা যাবে (০১৯৪১৯৮৮২৯২) এই নম্বরে।