কোরআন শরীফ অবমাননায় যুবককে হত্যার পর আগুনে পুড়ে দিয়েছে জনতা
কোরআন শরীফ অবমাননায় এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে জনতা। লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দর কেন্দ্রীয় মসজিদে কোরআন শরীফ অবমাননার অভিযোগে তুলে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার করেছে বিক্ষুপ্ত জনতা। পরে মরদেহটি আগুনে রাস্তায় পুড়িয়ে হাজার হাজার বিক্ষুপ্ত জনতা।
স্থানীয়রা জানান, দু'জন ব্যক্তি আসরের নামাজের সময় মসজিদে ঢোকে। নামাজ শেষে তারা 'মসজিদে অস্ত্র আছে' বলে দাবি করে। এ সময় তারা কোরআন ফেলে দেয় ও আর কোরআন শরীফকে অবমাননা করে। এমন অভিযোগে একজনকে ধরে পিটিয়ে হত্যা করে পরে রাস্তায় আগুনে পুড়ানো হয়। অপর ব্যক্তি পালিয়ে যায়।
বুড়িমারী হাফিজুল ইসলাম বলেন, আসরের নামাজ শেষে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দুই জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি আসেন। মসজিদের খাদেম জুবেদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে তাদের একজন মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে কোরআন-হাদিসের বই রাখার তাকে অস্ত্র আছে বলে তল্লাশি শুরু করেন। এক পর্যায়ে মসজিদের সামনে থাকা ৫-৬ জন মুসল্লি মসজিদের প্রবেশ করে ওই ব্যক্তিকে এবং বারান্দায় থাকা অপর ব্যক্তিকে মারধর করেন।
ঘটনাস্থলে হাজারো মানুষ ওই দুই ব্যক্তিকে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষের ভেতরে ঢুকে তালা লাগিয়ে রক্ষার চেষ্টা করে। তবে মুহূর্তে হাজার হাজার লোকজন জড়ো হতে থাকে।
তবে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থল বন্দরে যে ব্যক্তিকে কোরআন অবমাননা করার অভিযোগ তুলে পিটিয়ে হত্যা করে পুড়ে ফেলা হয়েছে তার নাম শহিদুন্নবী জুয়েল। বাড়ি রংপুর শহরের শালবান এলাকায়। তিনি রংপুর ক্যান্ট পবলিক স্কুলের সাবেক শিক্ষক বলে জানা গেছে। তার বাবার নাম আবদুল ওয়াজেদ মিয়া।
স্থানীয় রফিকুল ইসলাম প্রধান নামে এক ব্যক্তি পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন কুমার মোহন্ত, ইউএনও কামরুন নাহার, উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুল ও বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম নেওয়াজ নিশাতকে ফোন করে ঘটনাস্থলে আসতে বলে।
এরই মধ্যে উত্তেজিত জনতা কারও কথা না শুনে পরিষদের দরজা-জানালা ভেঙে এক ব্যক্তিকে বাইরে বের করে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে মরদেহ নিয়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়কের প্রথম বাঁশকল এলাকায় কাঠখড়ি ও পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়।সেখানে ৬-৭ হাজার উত্তেজিত মানুষ ওই ব্যক্তিকে আগুনে পুড়ে ফেলে এর পরও পুলিশ নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি।
বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন আফিজ উদ্দিন বলেন, আমি আসরের নামাজ শেষ করে বাইরে বের হয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পাই খাদেম জুবেদ আলীকে দুই জন অপরিচিত ব্যক্তি সালাম দিয়ে হ্যান্ডশেক করে কথা বলছিল। এরপর তারা মসজিদের ভেতরে ঢুকে যায়। আমি চলে যাই। পরে ঘটনার কথা এসে শুনেছি। কিন্তু কিছু জানি না।'
ওই মসজিদের খাদেম জুবেদ আলী বলেন, 'আমাকে র্যাব ও আর্মির পরিচয় দিয়ে বলা হয় যে, কোরআন শরীফ ও হাদিস রাখার তাকে নাকি অস্ত্র আছে।এ কথা বলে তাদের একজন খোঁজ শুরু করেন। এক পর্যায়ে সবকিছু তছনছ করেন। এসময় মসজিদের বাইরে অবস্থানরত হোসেন আলী (৩৫) নামে এক মুসল্লিসহ ৬-৭ জন মুসল্লি মসজিদে প্রবেশ করে দুই জনকে আটক করে বাইরে নিয়ে আসেন।
মসজিদের বারান্দার সিঁড়িতে প্রথম দফায় তাদের মারধর করে। পরে হাফিজুল ইসলাম মেম্বার এসে তাদেরকে নিয়ে যায়।এরপর কী হয়েছে আমি জানি না।'
পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন কুমার মোহন্ত জানান,ঘটনার পর পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েও ওই যুবককে পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।
লালমনিরহাট জেলার পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা জানান,ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। কোরআন শরীফকে অপমান করার ঘটনা