কোভিড-১৯: সেকেন্ড ওয়েভে মৃত্যু বাড়ছে তরুণদের
দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর প্রতিদিনই নতুন নতুন রেকর্ড ভাঙ্গছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে বাংলাদেশে ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে; মহামারি শুরুর পর থেকে এ যাবতকালের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। এ নিয়ে ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৯ হাজার ৬৬১ জনে।
দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় মৃতদের মধ্যে ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের হার বেশি। তবে করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভে তরুণদের মৃত্যু বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে করোনায় মৃতদের মধ্যে ৬০ বছরের বেশি বয়সী ৫৬.২% মানুষ। এরপর ৫১-৬০ বছর বয়সী ২৪.৬১%, ৪১-৫০ বছর বয়সী ১১.১২%, ৩১-৪০ বছর বয়সী ৪.৯৭%, ২১-৩০ বছর বয়সী ১.৯৭% এবং ০-২০ বছর বয়সী ৭৭% মানুষ করোনায় মারা গেছেন।
আগে ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুর হার বেশি থাকলেও গত দুই সপ্তাহে দেখা গেছে অল্পবয়সীরাও মারা যাচ্ছে। গত দুই সপ্তাহে ১০ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৬৪ জন মারা গেছেন। এছাড়া এখন তরুণরা আক্রান্তও হচ্ছে বেশি।
সেকেন্ড ওয়েভে তরুণদের মধ্যে মৃত্যুর হার অনেক বেশী বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকেরা। শনিবার গত ২৪ ঘন্টায় ২১ থেকে ৪০ বয়সী ছয়জন করোনায় মারা গেছেন।
৫০০ শয্যাবিশিষ্ট কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অ্যানাস্থেসিওলজিস্ট ডা. নাজনীন রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা আইসিইউতে ৩০ বছরের কম বয়সী রোগী পাচ্ছি। এখন ৩০-৪০ বছর বয়সী অনেক রোগী পাওয়া যাচ্ছে।"
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) জানিয়েছে, দেশে করোনার দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট থেকে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আইসিডিডিআরবি বলে, "বাংলাদেশে মার্চের চতুর্থ সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টটি ৮১% সংক্রমণ দখল করে ছিল"।
গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টটি অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট থেকে ৭০% বেশি মারাত্মক।
দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের পাশাপাশি দেশে ইউকে ভ্যারিয়েন্টও পাওয়া গেছে। নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে এবার রোগীদের দ্রুত অবস্থার অবনতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এছাড়া এবার একই পরিবারে কয়েকজন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে।
করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য, দেশের অন্যতম শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে এখন সব বয়সী মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। আগে বয়স্ক ও স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে এমন রোগীরা বেশি মারা যেত। কিন্তু এখন তরুণরাও মারা যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা ছাড়িয়ে যাওয়ায় অনেক রোগী চিকিৎসার অভাবেও মারা যাচ্ছে'।
ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, 'তরুণেরা স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কিছুটা উদাসীন। তবে এখন সব বয়সী মানুষকে মাস্ক পরতে হবে ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। কারণ নতুন ভ্যারিয়েন্টে রোগীর অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে। সবাইকে নিজেকে আক্রান্ত হওয়া থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে'।