কোভিড-১৯: তিন মাসে মোট আক্রান্তের ৩৬ শতাংশই মার্চের প্রথম ২১ দিনে
গত তিন সপ্তাহ ধরে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। যা গত তিন মাসের মোট শনাক্তের ৩৬%। ২২ ডিসেম্বর থেকে গত তিন মাসে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮,৬৯৫ জন ও মারা গেছেন ১৩৭৮ জন। এর মধ্যে মার্চের ২১ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ২৪,৬৬২ জন বা ৩৬%; এই ক'দিনে মৃত্যুবরণ করেছেন ২৮২ জন বা ২১%।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানা, সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান বেড়ে যাওয়ায় সংক্রমণ বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (গবেষণা ও পরিকল্পনা) ও দেশের ভ্যাকসিন ডিপ্লয়মেন্ট কমিটির চেয়ার অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, 'বর্তমানে মাস্কের ব্যবহার এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের ধরন একেবারে স্বাভাবিক অবস্থার মতো ফিরে যাচ্ছে। তারই প্রেক্ষিতে সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে বলে আমরা মনে করছি'
রোববার (২১ মার্চ) সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরস ডিপো-সিএমএসডি'র নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।
এখন করোনার সংক্রমণের উর্ধ্বগতি কেবল বাংলাদেশেই নয়, পুরো পৃথিবীতেই; তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া কোনও বিকল্প নেই বলে জানালেন ফ্লোরা। টিকা গ্রহণের পাশাপাশি সঠিকভাবে মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে এবং হাত ধোয়ার অভ্যাস চর্চা করে করোনাকে প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা আবারও বেড়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় সংক্রমণের হার ছিল ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিগত এক বছরে মৃত্যুর এ মিছিলে নাম উঠল ৮ হাজার ৬৯০ জনের।
এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ১৭২ জনের শরীরে শনাক্ত হয় ভাইরাসটি। এ নিয়ে মোট শনাক্ত সংখ্যা ৫ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৮-এ পৌঁছাল।
রোববার দুপুরে করোনাভাইরাস বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন শুরু হয়েছে। রোববার সারাদেশে ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৮০,২২২ জন। এখন পর্যন্ত দেশে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৪৮,৪০,৯৬৯ জন।
আগামী ৮ এপ্রিল থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হবে বলে জানান ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, 'দ্বিতীয় ডোজ টিকা পাওয়ার জন্য সবাই টিকাকার্ডে দেওয়া মোবাইল নাম্বারে এসএমএস পাবেন। এ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবার কিছু নেই। যাদেরকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে তাদের দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করেই পরবর্তী টিকা কার্যক্রম প্রসারিত করা হচ্ছে'।
দেশে সংক্রমণ বাড়ছে, এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের মতো এবারও লকডাউন দেওয়া হবে কিনা, সে বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, 'এখন পর্যন্ত এরকম কোনও সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে নেই। তবে জাতি স্বাধীনতা দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে, সারা পৃথিবীতে বাঙালিরা উদযাপন করছে। পরবর্তীতে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে হলে আমরা নেব'।
তবে এখন পর্যন্ত সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে লকডাউনের সিদ্ধান্ত আসে নি বলেও জানান স্বাস্থ্য সচিব।
ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে টিকার পরবর্তী চালান কবে আসবে সে বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, '২৬ মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসবেন। আমরা আশা করছি তার সফরের সঙ্গে বা তার পরপরই সেরাম থেকে পরবর্তী চালান পাবো। তবে মার্চের চালান এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেও আসতে পারে'।