কোভিড উদ্বেগে ইংরেজিমাধ্যম স্কুলগুলোতে উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে কম
১২ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের বিশ্ববদ্যালয়গুলো ছাড়া অন্যান্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ইংরেজি মাধ্যমের অনেক স্কুল এখনও পর্যন্ত সরাসরি শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে পারেনি। যেসব স্কুল প্রতি সপ্তাহে একটি করে সরাসরি ক্লাস নিচ্ছে সেখানেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারেই কম।
বেশ কয়েকজন অভিভাবক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণের আশঙ্কায় তারা এখনও তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে রাজি না। সন্তানদের টিকা না দেওয়া পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবেন, এরপরেই তাদেরকে আবার স্কুলে পাঠাবেন।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, ১২ বছর বা তার বেশি বয়সের শিক্ষার্থীদের কোভিড-১৯ টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা আছে সরকারে। এছাড়াও পর্যায়ক্রমে দেশের ৮০ শতাংশ জনসংখ্যাকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুসারে, বর্তমানে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী সরাসরি ক্লাস করছে। অন্যদিকে, সরকারি, এমপিওভুক্ত ও বেসরকারি খাতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি প্রায় ৭০ শতাংশ।
এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব জিএম নিজাম উদ্দিন বলেন, 'ভালোসংখ্যক স্কুল শ্রেণীকক্ষে সরাসরি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে এবং কিছু স্কুল আবার ক্লাস শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এটা সত্য যে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই কম। বেশিরভাগ অভিভাবক এখনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে অনেকেই আবার তাদের বাচ্চাদের স্কুলে ফেরত পাঠাতেও শুরু করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলো স্কুলপ্রাঙ্গণে তাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।'
নিজাম উদ্দিন অভিভাবকদের আশ্বস্ত করেছেন, স্কুলগুলো বাচ্চাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনুসরণে কোনো ধরনের অবহেলা করবে না।
অভিভাবক প্রকৌশলী মো. শফিউল আজমের সন্তান ঢাকার দিল্লি পাবলিক স্কুলের শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, 'আমার মেয়ে এখন স্কুলের ওয়েব পোর্টাল থেকে তার ক্লাসের লেকচার সংগ্রহ করছে। যদি মাসখানেকের মধ্যে স্কুলে ভাল পরিবেশ এবং যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমি দেখতে পাই, তবে মেয়েকে আবার স্কুলে পাঠাব।'
বেশিরভাগ অভিভাবক একইরকম ভাবছেন
বাংলাদেশ ইংলিশ স্কুল প্যারেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মাসুদ খান বলেন, 'অভিভাবকরা সন্তানদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। সরাসরি শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির প্রধান কারণ এটি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা প্রকৃতপক্ষে নিশ্চিত হতে চাই যে, স্কুলগুলো কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণ করছে। যদিও এটা সত্য যে, বাচ্চারা ঘরে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। সরকার যদি স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা দেয় তাহলে আমাদের আর কোনো দুশ্চিন্তা থাকবে না।'
বাংলাদেশে ২০০টিরও বেশি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল রয়েছে। এসব স্কুলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা অন্তত ৪ লাখ।
নিউ স্কুল ঢাকা-র অধ্যক্ষ সবুজ আহমেদ জানান, তার প্রতিষ্ঠান আগামী সপ্তাহে সরাসরি ক্লাস শুরু করবে।
তিনি বলেন, 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা স্বাস্থ্য সুরক্ষা নির্দেশিকা অনুসরণ করে আমরা পুনরায় শ্রেণীকক্ষে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছি।'
সবুজ অবশ্য আরও জানিয়েছেন, মহামারির কারণে গত বছর সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর থেকে তার স্কুল আর্থিক সংকটে পড়ে গেছে। তিনি বলেন, 'ক্লাস পুনরায় চালু করতে আমাদের আরও তহবিলের ব্যবস্থা করতে হবে।'
তবে এর মাঝেও স্বস্তির খবর হলো, কিছু ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ৭০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত উপস্থিতি দেখা গেছে। এগুলোর মধ্যে সাউথ পয়েন্ট স্কুল একটি। এ স্কুলে গত কয়েকদিনের সরাসরি ক্লাসে গড়ে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী শ্রেণীকক্ষে উপস্থিত ছিল।
সাউথ পয়েন্ট স্কুলের বনানী শাখার অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, 'স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকনির্দেশনা মেনে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যক্রম দিচ্ছি। এ কারণেই শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
'মহামারী চলাকালীন আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। আমরা অভিভাবকদেরও আশ্বস্ত করেছি যে, আমরা চিঠিতে উল্লিখিত স্বাস্থ্য সুরক্ষা নির্দেশিকা অনুসরণ করছি। মহামারির আগে আমাদের স্কুলে সামগ্রিক উপস্থিতির হার ছিল বেশি ৯৫ শতাংশের বেশি।'
অনলাইন ক্লাসও চলছে
গত বছর বাংলাদেশে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলো তাদের সমস্ত ক্লাস অনলাইনে নিতে শুরু করে। বর্তমানে এই মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে পাঁচ দিন অনলাইনে ক্লাসে করছে, আর এক দিন সরাসরি শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করছে।
ব্রিটিশ কাউন্সিল সূত্র জানিয়েছে, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো বাংলাদেশ সরকারের কোভিড-১৯ প্রটোকল অনুসরণ করবে বলে আশা করছে তারা। সেইসাথে এই মাধ্যমের স্কুলগুলো ডব্লিউএইচও-র নির্দেশিত প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অনুসরণ করবে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও খুলনার সব পরীক্ষাকেন্দ্রে নিরাপত্তাবিধি প্রয়োগ করা হবে। সুরক্ষাবিধির মধ্যে রয়েছে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরা, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখ, পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রাঙ্গণ পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখা।
এছাড়া ব্রিটিশ কাউন্সিলও গত বছরের সেপ্টেম্বরে স্বাস্থ্যবিধি প্রণয়ন করে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল।