কাঞ্চনজঙ্ঘার টানে পঞ্চগড়ে পর্যটকদের ভিড়
প্রতি বছরের মতো এবারও দেশের পঞ্চগড় জেলায় উঁকি দিয়েছে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এখন স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে এই পর্বতকে। কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ সৌন্দর্য্য দেখতে এরই মধ্যে পঞ্চগড়ে ভিড় করেছেন পর্যটকেরা।
ভারতের সিকিম ও নেপালের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক অনবদ্য সৌন্দর্য্যের রানী। স্থানীয় জনসাধারণের ভাষ্যে, এ বছর ১১ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রথমবারের মতো কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মেলে। এরপর আকাশ মেঘলা হয়ে যাওয়ার এটি মেঘের আড়ালে হারিয়ে যায়। কিন্তু গত ৯ নভেম্বর আবারও পঞ্চগড় থেকে দেখা যাচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া কেন্দ্রের অফিসার ইন-চার্জ রাসেল শাহ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাতাসে ধুলাবালি কম থাকায় এবং আকাশ পরিষ্কার ও মেঘমুক্ত থাকায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে।
পঞ্চগড়ের আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘার উঁকি দেওয়ার খবর এবং এর অনিন্দ্য সুন্দর সব ছবি ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই তেঁতুলিয়ামুখী হয়েছেন ভ্রমণপিপাসুরা। শীতকালে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য্য অবলোকন করা থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখতে রাজি নন কেউই। এমনকি জেলার সরকারি-বেসরকারি রেস্ট হাউজগুলো আগাম বুকিং দিয়ে রাখছেন অনেকে।
কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য্য দেখতে পঞ্চগড়ে ছুটে এসেছেন দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী তাসনিম ইবনাত ও আফিয়া মোবাশশিরা। তারা বলেন, "সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় এই পাহাড়ের চূড়ায় যে আলোর খেলা চলে, সেই সৌন্দর্য্যে সবাই মুগ্ধ হতে বাধ্য। এটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ আপনাকে নিজে এসে দেখতে হবে।"
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি বিষয়ক আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহ বলেন, "যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে, তাহলে পঞ্চগড় জেলার সব জায়গা থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা সম্ভব। কিন্তু তেঁতুলিয়া ডাক বাংলোর কাছে মহানন্দা নদীর তীর এবং শালবাহন ও বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা সবচেয়ে সুন্দরভাবে দেখা যায়।"
স্থানীয় দুই ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান ও নাহিরুল ইসলাম জানান, পর্যটকদের ভিড় বেড়ে যাওয়ার সুবাদে এখানে ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো চাঙা হয়ে উঠেছে। বহু মানুষ এখন এই মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন যেন পর্যটকদের আগমনের সুবাদে তারা কিছু উপার্জন করতে পারেন।
তাছাড়া সরকার ইতোমধ্যেই বড় সংখ্যক পর্যটকের থাকা-খাওয়ার সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিয়েছে।
তেঁতুলিয়া ডাক বাংলোর তত্ত্বাবধায়ক শহীদুর রহমান জানান, পর্যটকদের আগমন উপলক্ষে সবগুলো রেস্ট হাউজ জীবানুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, "তেঁতুলিয়ায় দুটি জেলা কাউন্সিল ডাক বাংলো আছে। উপজেলা প্রশাসনেরও পিকনিক কর্নার এবং বেরাং কমপ্লেক্সে দুটি রেস্ট হাউজ আছে। এর পাশাপাশি আরও অনেক বেসরকারি হোটেল তো আছেই। পর্যটকরা যদি রাতে থাকতে চান, তাহলে আমাদের অনুরোধ থাকবে তারা যেন আগেভাগেই যোগাযোগ করেন।"
পঞ্চগড় পর্যটন পুলিশ পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছে পর্যটন পুলিশ। প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্ত প্রায় দুই থেকে পাঁচ হাজার পর্যটক এখানে আসেন। আবহাওয়া যদি ভালো থাকে, তাহলে জানুয়ারি পর্যন্ত এখানে পর্যটকদের আনাগোনা থাকবে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, "আমাদের বাংলোগুলোকে সংস্কার করা হয়েছে এবং নতুন করেও কিছু বানানো হয়েছে। পর্যটকদের চলাচলের সুবিধার জন্য মহানন্দা নদীর তীর থেকে দোকানপাট উচ্ছেদ করে দিয়েছে উপজেলা কর্তৃপক্ষ। পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা এখানে কমিউনিটি ট্যুরিজম চালু করার কথা ভাবছি।"
পঞ্চগড়ের ডেপুটি কমিশনার জহুরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "পর্যটকদের কাছে মূল আকর্ষণই হলো কাঞ্চনজঙ্ঘা। আমরা সবাইকেই এখানে আসতে উদ্বুদ্ধ করি, তবে তা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে।"