করোনায় মৃত্যু কমতে আরও এক সপ্তাহ লাগবে
দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের এখন পিক-টাইম চলছে। কম টেস্ট হওয়ার কারণে নতুন রোগী শণাক্তের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে এখন কিছুটা স্থির হয়েছে। কিন্তু, প্রতিদিনই মৃত্যুর নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। করোনায় মৃত্যু কমতে আরও এক সপ্তাহ লাগবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে আগামী এক সপ্তাহ পর লকডাউন না থাকলেও- কুরবানির ঈদ পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মানায় শিথিলতা করলে সেকেন্ড ওয়েভ আরও দীর্ঘ হতে পারে।
গত শুক্রবার প্রথম দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ১০০- এর ঘর ছাড়ায়, তারপর থেকেই মৃত্যুর ঊর্ধ্বমুখী মিছিল দেখছে বাংলাদেশ। শুক্র ও শনিবার দুদিনই ১০১ জনের প্রাণ কেড়ে নেয় সর্বনাশা ভাইরাস, রোববার মারা যান ১০২ জন। তারপর আজ সোমবার (১৯ এপ্রিল) ঝড়ে গেছে আরও ১১২ জনের জীবন, যা দেশের মৃত্যু সংখ্যার নতুন রেকর্ড।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিগত ২৪ ঘণ্টার যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, তাতে দেশের মোট প্রাণহানি পৌঁছে গেছে ১০,৪৯৭-এ, মৃত্যুহার ১.৪৫ শতাংশ।
এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান লকডাউনের ফলে আগামী মে মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে সংক্রমণ যতটা দ্রুত বেড়েছে, ততো দ্রুত কমবেনা।
বাংলাদেশ মহামারি রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের এখন পিক টাইম চলছে। নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যা যাই হোক না কেন- ইনফেকশন রেট যদি এক সপ্তাহের বেশি ২০ শতাংশে নিচে থাকে তাহলে আমরা পিক টাইম পার করবো। ৫ এপ্রিল সরকার যে বিধিনিষেধ দিয়েছে তার প্রভাব শনাক্তের হারের ওপর পড়তে শুরু করবে। তবে মৃত্যু সংখ্যার ওপর এর প্রভাব পরবে কিনা- তা আরো এক সপ্তাহ দেখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সর্বাত্মক লকডাউন হয়তো আরো এক সপ্তাহ থাকবে, কিন্তু কিছুতেই ৫ এপ্রিলের আগের যায়গায় ফিরে যাওয়া যাবে না। তা না হলে আবার দুই ঈদে সংক্রমণের পিক হবে।
এব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এবং কোমো সদস্য (কোভিড-১৯ মডেলিং কনসোর্টিয়াম অব অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি) শাফিউন শিমুল বলেন,এখন যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে তারা আরও তিন সপ্তাহ আগে আক্রান্ত হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ পর মৃত্যু কমতে পারে। আমাদের মডেলিং বলছে, লকডাউনের কারণে আগামী মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুনের শুরুতে সংক্রমণ কমবে। তবে কঠোর বিধিনিষেধ না থাকলে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে শনাক্ত সংক্রমিত হয়েছে ৪,২৭১ জন, ফলে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা পৌছালো ৭,২৩,২২১ জনে।
গত ৪ থেকে ৭ এপ্রিলের মধ্যেই নতুন কেসের সংখ্যা ৭ হাজার ছাড়ায়, গত ১৫ এপ্রিল তা ৫ হাজারের ঘর থেকে কমে ৪,১৯২ জনে নামে।
সোমবার নাগাদ ২৪ ঘণ্টায় ২৪,১৫২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়, গত রোববার করা হয় ১৯,৪০৪টি। গত চারদিনে দৈনিক নমুনা পরীক্ষা ২০ হাজারের কম ছিল। সেই তুলনায় দৈনিক সংক্রমণের হার ১৭.৬৮ শতাংশ বলে জানানো হয়।
এনিয়ে কোভিড-১৯ বিষয়ক জনস্বাস্থ্য পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবু জামিল ফয়সাল টিবিএস'কে বলেন, "তিন সপ্তাহ আগে যে ব্যাপক জন-সমাগম হয়েছে সেটার নেতিবাচক প্রভাব এখন দেখা যাচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে নতুন রোগী শনাক্ত কম হলেও সংক্রমণ হার খুব একটা কমেনি। তার মানে হলে রোগী আছে, কিন্তু শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বেশি টেস্ট করে শনাক্ত রোগীদের আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও মৃত্যু কমাতে সামাজিক শক্তিগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেতে হবে।"