করোনায় প্রাণ গেল আরও ৫৬ জনের, ৮১ দিনে সর্বনিম্ন

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে আরও ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের কারণে গত দুইমাস টানা শতাধিক মৃত্যু হলেও গত সপ্তাহ থেকে তা কমেছে।
গত এক বছরেরও বেশি সময়জুড়ে মারাত্মক সংক্রামক এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ২৬ হাজার ছাড়িয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে ২৬ হাজার ৬৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিডজনিত কারণে।
গত এক বছরে দেশে যতো মানুষ করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ১ দশমিক ৭৬ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে এই রোগে।
মারাত্মক সংক্রামক এই ভাইরাসটি গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে দেশের আরও ২ হাজার ৬৩৯ জনের দেহে।
এর আগে গত ২৮ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জনের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছিল।
মহামারি শুরুর পর থেকে সব মিলিয়ে এই শনাক্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ১৫ লাখ ১৯ হাজার ৮০৫ জনে। গত বছর থেকে দুইটি আলাদা ওয়েভে দেশে করোনার উচ্চ সংক্রমণ দেখা গেলেও চলতি বছরের জুনের প্রথমার্ধ থেকেই করোনা শনাক্তের পরিমাণ ব্যাপকহারে বাড়তে শুরু করে। তবে টানা লকডাউনের প্রভাবে বর্তমানে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭ হাজার ২৩৩টি কোভিড পরীক্ষার বিপরীতে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে শতকরা ৯ দশমিক ৬৯ জনের মধ্যে। বিগত কয়েক সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য হারে কমতে কমতে বর্তমানে করোনার সংক্রমণ ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর এর মতে, কোনো এলাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার ১০ শতাংশের বেশি হলে সেটিকে 'উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ', ৫-১০ শতাংশের মধ্যে হলে 'মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ' এবং ৫ শতাংশের নিচে হলে 'স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ' হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে করোনাভাইরাস বিষয়ে পাঠানো নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত এক বছরে মোট ৯১ লাখ ১৮ হাজার ৮৪৩ টি নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় গত এক বছরে সংক্রমণের হার ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে পুরুষ ১৯ জন ও নারী ৩৭ জন।
অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে দেশে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা নারীদের প্রায় দ্বিগুণ।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫ হাজার ৫৬৭ জন কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে মোট ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭৫৪ জন সেরে উঠলেন প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমিত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে সে বছরের ১৮ মার্চ। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারে গত জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে ১৪ লাখ পেরিয়ে যায় গত ১৩ অগাস্ট।
করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের জন্য একটি বিশেষ ওয়েবসাইট (www.corona.gov.bd) চালু রেখেছে সরকার।
ভাইরাসটির মোকাবিলায় ফেব্রুয়ারি থেকেই দেশজুড়ে টিকাদান কর্মসূচী শুরু করে সরকার। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে আনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন দিয়ে এই কর্মসূচী শুরু হলেও ভারত ভ্যাকসিন রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এই কর্মসূচী অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়ে। বর্তমানে চীন থেকে আনা সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন এবং ভ্যাকসিন বিষয়ক আন্তর্জাতিক জোট গ্যাভির বিশ্বব্যাপী টিকাদান কার্যক্রম কোভ্যাক্সের মাধ্যমে পাওয়া ফাইজার ও মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার মাধ্যমে এ কর্মসূচি চলছে।
এক নজরে বাংলাদেশের করোনাচিত্র:
- মোট শনাক্ত: ১৫ লাখ ১৯ হাজার ৮০৫ জন।
- মারা গেছেন: ২৬ হাজার ৬৮৪ জন।
- মোট সুস্থ: ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭৫৪ জন।
- মোট নমুনা পরীক্ষা: ৯১ লাখ ১৮ হাজার ৮৪৩টি।
এদিকে, করোনার পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা ৫টা পর্যন্ত বৈশ্বিক এ মহামারিতে সারা বিশ্বে ২২ কোটি ২১ লাখ ১৩ হাজার জন আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৯ কোটি ৮৭ লাখ ৩৮ হাজার ৪৮৭ জন সেরে উঠলেও প্রাণ গেছে ৪৫ লাখ ৯২ হাজার ৪৩ জনের। বাকী ১ কোটি ৮৭ লাখ ৮২ হাজার ৪৭০ জন মৃদু বা মারাত্মক উপসর্গ নিয়ে এই রোগের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছেন।
কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের সংখ্যায় সবার ওপরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ পর্যন্ত ৪ কোটি ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৭৯৪ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত করেছে দেশটি। শনাক্তের দিক থেকে দ্বিতীয়তে আছে ভারত। দেশটির ৩ কোটি ৩০ লাখ ৫৮ হাজার ৮৪৩ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। তিন নম্বরে রয়েছে ব্রাজিল যাদের শনাক্তের সংখ্যা ২ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার ৯৩৩ জন।
সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে যেসব দেশে:
- যুক্তরাষ্ট্র: ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৯ জন।
- ব্রাজিল: ৫ লাখ ৮৩ হাজার ৮৬৬ জন।
- ভারত: ৪ লাখ ৪১ হাজার ৭৫ জন।
- মেক্সিকো: ২ লাখ ৬৩ হাজার ৪৭০ জন।
- পেরু: ১ লাখ ৯৮ হাজার ৫২৩ জন।
- রাশিয়া: ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭৮৫ জন।
- ইন্দোনেশিয়া: ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৫৫ জন।
- যুক্তরাজ্য: ১ লাখ ৩৩ হাজার ২৭০ জন।
- ইতালি: ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৬৭ জন।
- কলম্বিয়া: ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৩১ জন।