করোনার ওমিক্রন ধরন প্রতিরোধে ‘নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস’ নীতি নিল বাংলাদেশ
করোনাভাইরাসের নতুন ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট প্রতিরোধে প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এজন্য টিকা না নেওয়াদের কোনো প্রকার সেবার সুবিধা দেওয়া হবে না।
সরকারের এই 'নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস' নীতির ব্যাখ্যা দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন,'অনেকেই টিকা নেওয়ার কোনো আগ্রহই দেখাচ্ছেন না, সেজন্যই এমন সিদ্ধান্ত।'
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সকল মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তরে চিঠি দেবে।
জাহিদ মালেক ওমিক্রন নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে এসব কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, 'দেশের সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলো থেকে আসা ফ্লাইটের সংখ্যা কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের আরেকটি ঢেউ প্রতিরোধে আমরা এসব দেশে থাকা ব্যক্তিদের এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আসতে নিরুৎসাহিত করছি।'
আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে শিক্ষা,পরিকল্পনা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা যোগ দেন। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান জাহিদ মালেক।
এরমধ্যেই যেসব দেশে ওমিক্রন সংক্রমণ ছড়িয়েছে সেখান থেজে আসাদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কোয়ারেন্টিন স্থাপনাগুলো নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব সশস্ত্র বাহিনীকে দেওয়া হবে।
একইসঙ্গে করোনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং কোয়ারেন্টিন স্থাপনার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জাহিদ মালেক বলেন,সরকার যারা দুরারোগ্য বা একাধিক জটিল রোগে আক্রান্ত তাদেরসহ ৬০ বছরোর্ধ ব্যক্তিদের করোনা টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুসারে, যেসব দেশে করোনা সংক্রমণ কম সেখান থেকে যারা আসবেন তাদের কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ থাকলে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। কিন্তু,আগমনের দেশে করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী থাকলে তাদেরকেও ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
এছাড়া, বর্তমানে ফ্লাইটে ওঠার অন্তত ৭২ ঘণ্টা আগে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করাতে হয় যা ৪৮ বা ২৪ ঘণ্টায় নামিয়ে আনা হবে।
নজরদারির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, প্রবাসীদের ওপর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের খোঁজখবর রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিষয়ক সব ধরনের নির্দেশনা প্রতিপালন নিশ্চিত করা যাবে। কেউ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে এলে বা স্বাস্থ্যবিধি না মানলে তার বাড়ি লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে চিহ্নিত করার উদ্যোগও নেওয়া যেতে পারে।
গত এক মাসে ২৪০ জন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরেছেন। কিন্তু, মুঠোফোন বন্ধ রাখায় তাদের 'ট্রেস' করা সম্ভব হয়নি। এরপর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানানো হলে, তারা এমন কয়েকজনকে খুঁজে বের করেন।
সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, এটি নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্টও গঠন করা হবে। এরমধ্যেই, সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে সরাসরি বৈঠক পরিহার করে ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
জাহিদ মালেক জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সব ধরনের জনসমাগম বন্ধ রাখা এবং কোনো প্রকার অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি না দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস চলবে:
স্কুল ও কলেজে আপাতত শ্রেণিকক্ষে পাঠদান অব্যাহত থাকবে, তবে ক্লাসের সংখ্যা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সকলে যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তা নিশ্চিত করতে তিনি শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ করেন।