'কঠোর' লকডাউনেও ঢাকার রাস্তায় যানজট
কোভিডের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার দেশজুড়ে সপ্তাহব্যাপী কঠোর ও সর্বাত্মক লকডাউন কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। কিন্তু লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দেখা গেল যানবাহনের দীর্ঘ সারি।
বেশকিছু সড়ক ঘুরে দেখা যায়, পুলিশের চেকপয়েন্টগুলো যানজট বৃদ্ধির পেছনে অনেকাংশে দায়ী।
বিমানবন্দর সড়কের নিকটবর্তী পুলিশ চেকপোস্টে প্রায় প্রতিটি গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায়। ফলে সেখানে গাড়ির লম্বা লাইন তৈরী হয়।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনেও একইভাবে পুলিশি নজরদারির কারণে সড়কে গাড়ির গতি ধীর হয়ে আসে।
পুলিশ সড়কে যাত্রীদের থামিয়ে চলাচলের কারণ জানতে চাইলেও সরকার কর্তৃক জারি করা মুভমেন্ট পাস দেখতে চায়নি বলে অভিযোগ কয়েকজন যাত্রীর।
প্রগতি সরণিতে জ্যামে আটকা পড়া যাত্রী মাহবুব আলম শোয়েব দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আজ লকডাউন নিষেধাজ্ঞা খুবই শিথিলভাবে পালন করা হচ্ছে। রাস্তায় প্রচুর লোক, অন্যদিকে পুলিশের জেরাও কম। আমি কাউকে পাসের জন্য জিজ্ঞেস করতে দেখিনি"।
বাংলাদেশ শ্যুটিং ফেডারেশন ভবনের সামনে থেকে গাড়ির লম্বা লাইন চলে যেতে দেখা যায় পুলিশ প্লাজা ব্রিজ পর্যন্ত।
সেখানে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদের দায়িত্বে থাকা একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, 'যারা বাইরে আসার যথাযথ কারণ ব্যাখ্যা করতে পারছে না, তাদের চেক পোস্ট পেরোনোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না"।
প্রগতি সরণি, বাড্ডা, গুলশান, কারওয়ান বাজার ও বিজয় সরণি এলাকায়ও যানজট লক্ষ্য করা গেছে।
নিয়মিত যাত্রী ও সরকারী চাকুরিজীবী জিসান হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বৃহস্পতিবার তুলনামূলকভাবে বাইরে আসা লোকজনের সংখ্যা অনেক বেশি।
বিপরীতে গতকাল বুধবার লকডাউনের প্রথম দিন রাজধানীর পথঘাট ছিল নির্জন, বিভিন্ন সড়কে ছিল পুলিশের চেকপোস্ট। যারা লকডাউন নিয়ম লঙ্ঘন করে বেরিয়ে আসে, তাদের জরিমানা করা হয়। এদিন নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম দেখা যায়; দোকানগুলো আধ-খোলা অবস্থায় বিক্রিবাট্টা চালিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, কারখানা এবং ব্যাংক খোলা থাকায় গতকালের তুলনায় আজ সড়কে লকডাউন বিধি অমান্য করে বেরিয়ে আসা মানুষ এত বেশি।
ডিএমপির মহাখালী ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. শামসুল ইসলামও একই কথা বললেন। তিনি বলেন, 'গতকাল সরকারী ছুটি ছিল। আজ তাই তুলনামূলকভাবে বাইরে লোকের সংখ্যা বেশি'।
"গতকালের চাইতে আজ জনসমাগম তিন থেকে চারগুণ বেশী", যোগ করেন তিনি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় দেশজুড়ে চলমান সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিন আজ।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ থেকে কলকারখানাগুলো খোলা রাখা হবে।
এছাড়া আর্থিক লেনদেনের সুবিধার্থে ব্যাংকের কার্যক্রম চলবে সকাল দশটা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। তবে, লেনদেন পরবর্তী আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ব্যাংক খোলা রাখতে পারবে।
এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউন চলাকালে অতি জরুরি প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হবেন যারা, তাদের জন্য মুভমেন্ট পাসের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। এটি ছাড়া বের হওয়ার কোন অনুমতি নেই। চেকপোস্টগুলোতে নিজ নিজ মুভমেন্ট পাস দেখাতে না পারলে মানুষকে ঘরে ফেরত পাঠানো হবে।
একদিন আগে অ্যাপটি চালু হওয়ার পর আজ সকাল ৭টা পর্যন্ত মুভমেন্ট পাস পেয়েছে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ।
'movementpass.police.gov.bd.'-এই ঠিকানায় ভিজিট করে অ্যাপের মাধ্যমে পাস পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, এ দফায় লকডাউন চলবে আগামী ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত।