কক্সবাজারে মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা, সমর্থকদের অবরোধ-ভাঙচুরে আতঙ্কিত পর্যটকরা
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও জেলা যুবলীগ নেতা এমএ মোনাফ সিকদারকে গুলি করার নির্দেশদাতা হিসেবে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভা মেয়র মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে সদর থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা লিপিবদ্ধ হয়েছে।
রোববার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে মেয়র মুজিবসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করেছেন আহতের বড় ভাই। মামলায় আরো আটজনকে অজ্ঞাত রাখা হয়েছে।
সন্ধ্যার দিকে মামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে কক্সবাজার শহরের সকল দোকান-পাট বাস-কাউন্টার বন্ধ করে দিয়েছে মেয়র মুজিবুরের অনুসারীরা। পাশাপাশি সড়কের মাঝখানে পৌরসভার ময়লার গাড়ি রেখে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে তারা। ভাঙচুর চালানো হয়েছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে। এ নিয়ে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে শহরবাসী ও পর্যটকদের মাঝে।
সূত্র জানায়, বুধবার (২৭ অক্টোবর) রাতে শহরের কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টে একটি মার্কেটের সামনে আড্ডারত মোনাফ সিকদার (৩২) কে গুলি করা হয়। তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকৎসাধীন রয়েছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় আহত মুনাফ সিকদার এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন,"আমাকে মুজিবুর রহমান মেয়রের নির্দেশে গুলি করা হয়েছে। ওরা গুলি করার সময় বলছিল 'তুই মুজিব চেয়ারম্যানের সাথে লাগছিস? মুজিব চেয়ারম্যানের সাথে আর লাগবি?' এই বলে পিছন থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়।"
ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ ঘটনায় বক্তব্য নিতে সাংবাদিকদের ফোন না ধরলেও তার বাড়ির এলাকার (বিমানবন্দর সড়কের মাথায়) একটি প্রতিবাদ সভায় মেয়র মুজিবুর রহমান, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মোনাফ সিকদারকে গুলি করার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। সমাবেশে মেয়র মুজিব বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যে ছেলেটা গুলিবিদ্ধ হয়েছে, তাকে একজন শিখিয়ে দিয়ে বলতেছে, বল মেয়র মুজিবের নির্দেশে তোমাকে গুলি করা হয়েছে। সে শেখানো কথা বলেছে।'
তিনি বলেন, 'আমি এ সমাবেশে বলতেছি, কারও যদি জায়গা বা একটা হোটেলও দখল করে থাকি প্রমাণ দেন, রাজনীতি ছেড়ে দেব, এ শহর থেকে চলে যাব।'
শুক্রবার এ প্রতিবাদ সভার দুদিন পর রোববার, বিকেলে মোনাফ সিকদারকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। মামলায় হুকুমদাতা হিসেবে প্রধান আসামী হয়েছেন মুজিবুর রহমান।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, হত্যাচেষ্টা ধারায় মেয়র মুজিবকে প্রধান আসামী করে একটি মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, মেয়র মুজিবুরের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার খবর প্রচার পাবার পরপরই পুরো শহরে মেয়রের অনুসারী একদিকে বিক্ষোভ মিছিল করছে অন্যদিকে দোকানপাট বন্ধ করে দিচ্ছে। হোটেল-মোটেল জোনের কলাতলীর প্রধান সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে তারা। ঘটনাস্থলগুলোয় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর উপস্থিতি দেখা না যাওয়ায় শহর জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে দেখা যায়, কক্সবাজার শহরের বাজারঘাটা থেকে শুরু করে ফিশারিঘাট পর্যন্ত ও বিমানবন্দর সড়ক থেকে কলাতলী পর্যন্ত প্রায় দোকান-পাট জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চাননি তাদের ওপর হামলা করতে উদ্যোত হন বিক্ষোভকারীরা। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে এবং পাথর রেখে রাস্তা ব্লক করে রাখায় কলাতলী হতে বাসটার্মিনাল ও কলাতলী হতে বিমানন্দর সড়ক পর্যন্ত উভয়পাশে শত শত যানবাহন আটকে যায়। সেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ফেরা জিও-এনজিও কর্মকর্তাদের গাড়ির পাশাপাশি অনেক এ্যাম্বুলেন্স এবং পর্যটকদের গাড়িও ছিল। অনেক পর্যটক আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে হোটেলে ফিরেছে। রাস্তার পাশের অনেক হোটেলের ফটক বন্ধ করে দেয় আতঙ্কিত কর্তৃপক্ষ।
ঘটনার বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, "আমাকে মিথ্যেভাবে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি মোনাফকে গুলি করার নির্দেশ দিইনি। জেলা আওয়ামীলীগ থেকে আমরা গতকাল একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছি, এ ঘটনার সুষ্ট তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে প্রশাসনকে সহযোগিতা করব। কিন্তু সরকার দলীয় একজন শীর্ষ নেতাকে প্রধান আসামী করে পুলিশ হত্যা প্রচেষ্টা মামলা নথিভুক্ত করল। এতে প্রতীয়মান হয়, আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলার খবর পেয়ে নেতাকর্মীরা হয়তো মাঠে নেমে বিক্ষোভ করছে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, "অপরাধীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। কারও ইন্ধনে এ ঘটনা হলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। কোন নেতা নয়, ব্যক্তি অপরাধীর পেছনে লড়বে প্রশাসন।"