মালয়েশিয়াগামী ট্রলারডুবি: ১৫ রোহিঙ্গার মরদেহ উদ্ধার
কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে সাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গাবোঝাই একটি নৌকা ডুবে গেছে।
সোমবার গভীর রাতের এ ঘটনায় নারী-শিশুসহ অন্তত ১৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।
প্রাণ হারানো যাত্রীদের মধ্যে ১২ জন নারী ও তিন শিশু রয়েছে। এ ঘটনায় জীবিত উদ্ধার হয়েছে ৭১ জন। তাদের মধ্যে ২৪ পুরুষ, ৪৪ নারী ও তিন শিশু রয়েছে।
উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে অধিকাংশই তরুণী। এখনও কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তাদের মধ্যে অনেকে সাঁতরে সেন্টমার্টিন উপকূলে ফিরেছে বলে খবর এসেছে।
উদ্ধারে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, বিজিবি ও সেন্টমার্টিন বোট মালিক সমিতি যোগ দেয় বলে জানিয়েছেন কোস্টগার্ড সেন্টমার্টিন স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট নাঈম উল হক।
জীবিত উদ্ধার হওয়াদের বরাত দিয়ে নাঈম উল হক বলেন, সকালে স্থানীয় জেলেদের মাধ্যমে খবর পেয়ে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সৈকতের বাহারছড়া উপকূল হয়ে দেড়শ জনের মতো রোহিঙ্গা মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশে সোমবার দিবাগত রাতের আঁধারে দুইটি ট্রলারে ওঠে।
তিনি বলেন, গভীর রাতে হঠাৎ একটি ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে ট্রলারটি পানিতে ডুবে যায়। সাঁতার না জানায় ও আতঙ্কে শিশু ও নারীদের অনেকের মৃত্যু হয়।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুর রব জানান, উদ্ধার রোহিঙ্গাদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা মালয়েশিয়া যেতে দালালদের মাধ্যমে ট্রলারে উঠেছিল। জনপ্রতি ১০-২০ হাজার টাকা নিয়ে তাদের রাতের আঁধারে ট্রলারে তুলে দালালচক্র।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা তরুণীদের অধিকাংশই ক্যাম্পে স্বজাতিদের দ্বারা নিগৃহীত হওয়ায় অন্তত বিয়ে করে নিরাপদ জীবনের আশায় মালয়েশিয়া যেতে ঝুঁকি নিয়েছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ‘‘বিপদাপন্নদের ধারণা, অর্থলোভী পাচারচক্র ইচ্ছে করেই সাগরের মাঝপথে ট্রলারটি ফুটো করে ডুবিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ সহায় ছিলেন বলে মৃতের সংখ্যা কম হয়েছে, এমনটি বিশ্বাস উদ্ধার হওয়াদের। ডুবে যাওয়া ট্রলারে ১২০ থেকে ১২৫ জন নারী-পুরুষ ও শিশু ছিল।’’
সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফজলুল হক বলেন, বোট ডুবির ঘটনায় নিহত যাত্রীদের মধ্যে ১২ নারী ও চার কিশোরের মরদেহগুলো পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। জীবিত উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিপদাপন্নদের জেটি ঘাটে এনেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। জ্যেষ্ঠ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইকবাল হোসাইন বলেন, কঠোর নজরদারি থাকায় গত বছর শত চেষ্টা করেও আদম পাচারকারী চক্র অবৈধপথে মালয়েশিয়া যেতে ট্রলারে ভিড়াতে পারেনি। এরপর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সোমবার চক্রটি রোহিঙ্গাবোঝাই ট্রলার সাগরে নামিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উদ্ধার হওয়াদের কাছ থেকে তথ্য আদায়ের পর দালালদের শনাক্তে কাজ করছে পুলিশ।
এত মৃত্যুর পরও রোহিঙ্গারা প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা না মানলে এ মর্মান্তিকতা রোধ করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে মঙ্গলবার জাতীয় জাদুঘরে এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেছেন, বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া মালয়েশিয়াগামী ট্রলারটিতে ক্যাম্পের বাইরে থাকা রোহিঙ্গারা অবস্থান করছিল। তারা অবৈধভাবে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।