এ বছরই শুরু হচ্ছে বিরল স্থলবন্দরের কার্যক্রম

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর চলতি বছরই শুরু হতে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় দিনাজপুরের বিরল স্থলবন্দরের কার্যক্রম। এরই মধ্যে সেখানে ইমিগ্রেশন, কাস্টমস ও বিজিবি চেকপোস্টের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এখন স্থলবন্দর থেকে ভারতের অভ্যন্তরে দেড়শ' গজের সংযোগ সড়ক নির্মাণ হলেই শুরু হবে স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম।
স্থলবন্দর পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন- শুধু সড়ক পথেই নয়, এ বছরই শুরু হতে পারে রেলওয়ে দিয়েও পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও। আর এজন্য রেলওয়ের সাইট লাইন নির্মাণের জন্য ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়েছে, যা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।
দিনাজপুরের বিরল স্থলবন্দর বাংলাদেশের একমাত্র স্থলবন্দর, যা ব্যবহার করে একই সঙ্গে রেল ও সড়কপথে বাংলাদেশ থেকে ভারত, ভুটান ও নেপালে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা যাবে। বন্দরের বাংলাদেশ অংশে রয়েছে দিনাজপুরের বিরল উপজেলা ও ভারত অংশে রয়েছে উত্তর দিনাজপুরের রাধিকাপুর।
ব্রিটিশ আমল, স্বাধীনতার পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে দিনাজপুরের বিরলের এ অংশ দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু ছিল। রেলওয়ে ও সড়কপথে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, নেপাল ও ভুটানের বাণিজ্যিক লেনদেনের সম্ভাবনা দেখে ২০০৫ সালে বিরল স্থলবন্দর স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৬ সালে ভারত সরকার সীমান্তের ওপারে রাধিকাপুর পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথকে ব্রডগেজে রুপান্তর করে। কিন্তু বিরল স্থলবন্দর থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ না থাকায় ওই বছরই স্থলবন্দর স্থাপনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

২০১১ সালে পার্বতীপুর থেকে বিরল সীমান্ত পর্যন্ত মিটারগেজ রেললাইনকে ব্রডগেজে রুপান্তর করা হয়। ২০১৭ সালে ওই ব্রডগেজ রেলপথ দিয়ে বাণিজ্য শুরু হয়। বর্তমানে রেলপথ দিয়ে তেলবাহী ট্রেন বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। বন্দরে যানবাহন চলাচলের জন্য সাড়ে তিন কিলোমিটার লিংক রোড স্থাপনের পাশাপাশি প্রশস্ত সড়ক নির্মাণ করা হয়। ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে আসা পণ্য স্থলবন্দরে খালাস হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরনের জন্য সড়ক নির্মাণে ৭১ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয় হয়।
বিরল উপজেলার ভান্ডারা ইউনিয়নের পাকুড়া মৌজায় এই স্থলবন্দরটি। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সেখানে গিয়ে দেখা যায়, নবনির্মিত পাকা সড়কের পাশেই কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। দুজন ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক সেখানে গোডাউন নির্মাণ করবেন মর্মে পরিকল্পনায় মগ্ন।
স্থলবন্দরে কথা হয় আমদানিকারক এস এস এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী নুরুল আমীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, গোডাউন বানানোর জন্য আমি এখানে একটি জমি কিনে রেখেছি। স্থলবন্দরটি চালু হলে দিনাজপুর খুব কাছে হওয়ায় আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সুবিধে হবে। দিনাজপুর, রংপুর ও পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা এতে উপকৃত হবেন। পোর্টটি দ্রুত চালু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মেসার্স সান্তনা মা ট্রেডার্সের ব্যবসায়ী মোকাররম হুসেন লিটন বলেন, দূরের বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করলে পরিবহন খরচ অনেক বেশি পড়ে যায়। এই বন্দর থেকে আমাদের ব্যবসায়ীক এলাকা দিনাজপুর অনেক কাছে। ফলে বন্দরটি দিয়ে আমদানি শুরু হলে পণ্য পরিবহন বাবদ খরচ অনেক কমবে। ফলে অনেক ছোট ব্যবসায়ীও পণ্য আমদানি করতে পারবে।
ব্যবসায়ী মোখলেসুর রহমান বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করছি। এ বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি শুরু করলে আমাদের খরচ অনেক কমবে।
স্থানীয় হবিবুর রহমান বলেন, বন্দরটি চালু হলে স্থানীয়দের মধ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে- এমন আশায় বন্দরের জন্য আমরা জমি দিয়েছি। শুনেছি শিগগিরই বন্দরটি চালু হতে যাচ্ছে।
বিরল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিনাত রহমান বলেন, ভারতীয় অংশে সংযোগ সড়ক নির্মিত না হওয়ায় সম্পূর্ণভাবে স্থলবন্দরের কাজ শুরু করতে পারিনি। এরই মধ্যে বাংলাদেশ অংশে চেকপোস্ট ও ইমিগ্রেশন পোস্ট নির্মিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, স্থলবন্দরটির কার্যক্রম শুরু করার জন্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বর্ডার হাট কনফারেন্সে ভারতীয় কর্মকর্তাদের ভারত অংশে সংযোগ সড়ক দ্রুত নির্মাণের বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারাও এই সংযোগ সড়ক দ্রুত নির্মাণ করার কথা জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি। সংযোগ সড়ক হলেই স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু করা যাবে।
বিরল কাস্টমস অফিসের কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ভারত অংশে অবকাঠামোর ব্যাপারে জানার জন্য গত ৬ থেকে ৭ মাস আগে এনবিআর থেকে একটি চিঠি এসেছিল। পরে ভারত অংশের কার্যক্রম জেনে সেই বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে এনবিআর-এ প্রেরণ করা হয়েছে। স্থলবন্দরটি চালু হলে রাজস্ব অনেক বাড়বে এবং অনেক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বিরল ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বলেন, বহুল প্রত্যাশিত দিনাজপুরের বিরল স্থলবন্দরটির কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যেই সেখানে ইমিগ্রেশন চালু হয়েছে। বিরল স্থলবন্দরের ভেতরে রেল অধিদপ্তরের যে সাইট লাইনটি করার কথা তার জন্য ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। রেলপথের সাইট লাইন নির্মাণ হলে এ বছরই বিরল স্থলবন্দর পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে।
এ ছাড়াও স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ এবং তা স্থলবন্দর পর্যন্ত সংযোগ সম্পন্ন হয়েছে। ভারতের শূন্য রেখার সড়ক সংযোগের কিছু অংশের কাজটি বাকি রয়েছে। ভারত এই কাজটি সম্পন্ন করলে সড়ক পথেও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হবে।