এবার লবণে প্লাস্টিকের কণা পেলেন গবেষকরা
সমুদ্র দূষণের কারণে মাছের পেটে প্লাস্টিকের কণা পাওয়ার খবর নতুন নয়। তবে এবার অশোধিত লবণের মধ্যেও পাওয়া গেছে প্লাস্টিকের কণা।
তবে এই অশোধিত লবণ প্রক্রিয়াজাতকরণের পর যখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে তখন এর মধ্যে প্লাস্টিকের অস্তিত্ব থাকছে কিনা তার ওপর গবেষণাটি এখনো পরিচালনা করা হয়নি।
আন্তর্জাতিক জার্নাল নেচার এ গত ৩০ নভেম্বর 'মাইক্রোপ্লাস্টিকস পলিউশন ইন সল্ট প্যানস ফ্রম দ্য মহেশখালী চ্যানেল, বাংলাদেশ' শিরোনামে একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয়। গবেষণাটি বাংলাদেশ ও বিভিন্ন দেশের কয়েকজন গবেষকের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে।
গবেষক দলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফান্ডিং পেলে তারা অধিকতর গবেষণার কাজটি করতে আগ্রহী।
গবেষক দলের একজন সদস্য নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও গবেষক মো. রিফাত জাহান রাকিব বলেন, "আমরা মহেশখালী এবং এর আশপাশের এলাকা থেকে অশোধিত লবণ সংগ্রহ করে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছি। এটা খুবই সুক্ষ্ম, আলাদাভাবে বোঝার কোন উপায় নাই এটা প্লাস্টিকের কণা।"
"আমরা যখন এই অশোধিত লবণকে বিভিন্ন কেমিক্যালের মিশ্রণে নিয়ে এসেছি তখন প্রকৃত চিত্র উঠে এসেছে। প্লাস্টিকের কণা চিহ্নিত করতে পেরেছি। তবে আমাদের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, এই লবণ বাজারজাত করার আগে রিফাইনিং করার পরেও তাতে এই প্লাস্টিকের কণা থেকে যাচ্ছে কি না তা জানা সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে ফান্ড পেলে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা করতে আগ্রহী।"
গবেষকরা প্রতি কেজি লবণের মধ্যে ৭৮ থেকে ১৩৭টি পর্যন্ত প্লাস্টিকের কণা পেয়েছেন। তবে গবেষকরা বলছেন, যে পরিমাণ কণার উপস্থিতি পাওয়া গেছে তা মূলত কম ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাটাগরিতে পরেছে।
গবেষণায় মহেশখালির ৮টি লবণ সংগ্রহ কেন্দ্র থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এই নমুনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতি কেজি লবণের মধ্যে টেরিপথ্যালেট ৪৮ শতাংশ, পলিপ্রোপাইলিন ২০ শতাংশ, পলিথিলিন ১৭ শতাংশ এবং পলিস্টিরিন ১৫ শতাংশ প্লাস্টিকের উপাদান পাওয়া গেছে।
এই গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলকে বিশ্বের অন্যান্য লবণ গবেষণার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তবে আগের বেশিরভাগ গবেষণাই রিফাইন করা বাণিজ্যিক সমুদ্রের লবণের উপর হয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, লবণ শুকানোর সময় প্লাটিকের কভারের ব্যবহার ছাড়াও শিল্পায়ন, পর্যটন, মৎস্য উৎপাদনের বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে এ দূষণ হতে পারে। গবেষণাটি বাংলাদেশে সামুদ্রিক লবণে প্লাস্টিকের উপস্থিতি সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে ও দূষণ কমাতে সহায়তা করবে।
এদিকে গবেষণায় বিভিন্ন দেশের সমুদ্র লবণে কী পরিমাণ প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে তার একটি চিত্রও তুলে ধরেছে।
এই চিত্র থেকে দেখা গেছে, ভারতের সমুদ্রিক লবণের মধ্যে ৫ ধরনের প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে। প্রতি কেজিতে কণার সংখ্যা ১০০-৫০০০ পর্যন্ত। অন্যদিকে মালয়শিয়ার অবস্থা অবার ঠিক উল্টো। দেশটির সামুদ্রিক লবণের মধ্যে মাত্র একটি প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে। সংখ্যার হিসেবে এটি প্রতি কেজিতে ০-১ টি। একই অবস্থা নিউজিল্যান্ড, জাপান, ফ্রান্স, সাউথ আাফ্রিকা সহ কয়েকটি দেশের।
তবে ভিয়েতনাম, স্পেইন, ক্রোয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা বেশ খারাপ। তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের অবস্থা এখনো বেশ ভালো আছে বলে এ তুলনায় দেখিয়েছেন গবেষকরা।