একদিনে ৮১ মৃত্যু, শনাক্ত ৭৩ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে আরও ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত এক বছরেরও বেশি সময়জুড়ে প্রাণঘাতি এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা সাড়ে ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে ১৩ হাজার ৮৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিডজনিত কারণে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যার গ্রাফ গত দেড় মাস ধরে ৩০ থেকে ৫০ এর ঘরে উঠানামা করছিল। তবে গত দুই সপ্তাহ সপ্তাহ থেকে তা আবার বাড়তে শুরু করেছে। গত এক বছরে দেশে যতো মানুষ করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছে তাদের মধ্যে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে এই রোগে।
মারাত্মক সংক্রামক এই ভাইরাসটি গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে দেশের আরও ৬ হাজার ৫৮ জনের দেহে যা গত ৭৩ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ১২ এপ্রিল ৭ হাজার ২০১ জন শনাক্ত হয়।
মহামারি শুরুর পর থেকে সব মিলিয়ে এই শনাক্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৮ লাখ ৭২ হাজার ৯৩৫ জনে। সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভে গত মাসে সংক্রমণের সংখ্যা হু হু করে বাড়লেও রমজান মাস ও পরবর্তী সময়ে দেশজুড়ে লকডাউনের পর শনাক্তের সংখ্যা কিছুটা কমেছিল। তবে জুনের প্রথমার্ধেই তা বাড়তে শুরু করেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০ হাজার ৩৯১টি কোভিড পরীক্ষার বিপরীতে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে শতকরা ১৯ দশমিক ৯৩ জনের মধ্যে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে করোনাভাইরাস বিষয়ে পাঠানো নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত এক বছরে মোট ৬৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪৬৬ টি নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় গত এক বছরে সংক্রমণের হার ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে পুরুষ ৫৫ জন ও নারী ২৬ জন।
অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে দেশে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা নারীদের প্রায় তিনগুণ বেশি।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ হাজার ২৩০ জন কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে মোট ৭ লাখ ৯৪ হাজার ৭৮৩ জন সেরে উঠলেন প্রাণঘাতি এই ভাইরাস থেকে।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমিত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে সে বছরের ১৮ মার্চ।
করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের জন্য একটি বিশেষ ওয়েবসাইট (www.corona.gov.bd) চালু রেখেছে সরকার।
ভাইরাসটির মোকাবিলায় ফেব্রুয়ারি থেকেই দেশজুড়ে টিকাদান কর্মসূচী শুরু করে সরকার। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে আনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন দিয়ে এই কর্মসূচী শুরু হলেও ভারত ভ্যাকসিন রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এই কর্মসূচী অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়ে। বর্তমানে চীন থেকে আনা সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন এবং ভ্যাকসিন বিষয়ক আন্তর্জাতিক জোট গ্যাভির বিশ্বব্যাপী টিকাদান কার্যক্রম কোভ্যাক্সের মাধ্যমে পাওয়া ফাইজারের মাধ্যমে ফের এ কর্মসূচি চালু করার প্রক্রিয়ায় আছে সরকার।
এক নজরে বাংলাদেশের করোনাচিত্র:
মোট শনাক্ত: ৮ লাখ ৭২ হাজার ৯৩৫ জন।
মারা গেছেন: ১৩ হাজার ৮৬৮ জন।
মোট সুস্থ: ৭ লাখ ৯৪ হাজার ৭৮৩ জন।
মোট নমুনা পরীক্ষা: ৬৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪৬৬টি।
এদিকে, করোনার পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বেলা ৫টা পর্যন্ত বৈশ্বিক এ মহামারিতে সারা বিশ্বে ১৮ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৯৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৮৩ জন সেরে উঠলেও প্রাণ গেছে ৩৯ লাখ ৯ হাজার ৩১২ জনের। বাকী ১ কোটি ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ৪০৩ জন মৃদু বা মারাত্মক উপসর্গ নিয়ে এই রোগের সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছেন।
কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের সংখ্যায় সবার ওপরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ পর্যন্ত ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৪ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত করেছে দেশটি। এ শনাক্তের জন্য তারা ৫০ কোটি ১৩ লাখ ৬৮ হাজার টেস্ট করে। শনাক্তের দিক থেকে দ্বিতীয়তে আছে ভারত। দেশটির ৩ কোটি ৮২ হাজার ৭৭৮ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। তিন নম্বরে রয়েছে ব্রাজিল যাদের শনাক্তের সংখ্যা ১ কোটি ৮১ লাখ ৭০ হাজার ৭৭৮ জন।
সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে যেসব দেশে:
যুক্তরাষ্ট্র: ৬ লাখ ১৮ হাজার ২৯৪ জন।
ব্রাজিল: ৫ লাখ ৭ হাজার ২৪০ জন।
ভারত: ৩ লাখ ৯২ হাজার ১৪ জন।
মেক্সিকো: ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৪৭ জন।
পেরু: ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩ জন।
রাশিয়া: ১ লাখ ৩১ হাজার ৪৬৩ জন।
যুক্তরাজ্য: ১ লাখ ২৮ হাজার ২৭ জন।
ইতালি: ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৫২ জন।
ফ্রান্স: ১ লাখ ১০ হাজার ৮৬২ জন।
কলম্বিয়া: ১ লাখ ১ হাজার ৯৪৭ জন।