একটি ব্যতিক্রমী বিয়ের অনুষ্ঠান
বিয়েবাড়িতে আলোকসজ্জা করে রাখা হয়েছে। চলছে রান্নাবান্না। বিয়েবাড়ির গেইটে অপেক্ষা করছেন তরুণ-তরুণীরা। টেবিলে সাজানো সুস্বাদু খাবার। কিছুক্ষণ পর সেখানে বহর নিয়ে উপস্থিত হলেন সবার মধ্যমণি। তবে তিনি বর নন, তিনি বিয়ের কনে।
গতকাল শনিবার এমনই একটি ব্যতিক্রমী বিয়ের আয়োজন হয়েছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চৌগাছা গ্রামে।
গেইটে কনেকে বরণ করার পরই সকলের জন্য নাস্তার আয়োজন করা হয়। তারপর বিয়ে। বিয়েবাড়িতে ‘কনেযাত্রী’দের জন্য বরপক্ষ সব ধরনের খাবারের আয়োজন রাখে। কোনো কিছুরই কমতি ছিল না সেখানে।
প্রচলিত সামাজিক ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, সমস্ত রেওয়াজ ভেঙে, বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর বর তরিকুল ইসলামকে নিয়ে নিজের বাড়ির পথে রওনা দেন কনে খাদিজা আকতার। কনের বাড়িতেই রাত্রিযাপন করেন এই নবদম্পতি।
এরপর আজ রোববার নিজের বাড়িতে বরপক্ষকে নিমন্ত্রণ দিয়ে আপ্যায়ন করান কনের পরিবার। প্রচলিত শব্দ ‘বউভাত’ এর পরিবর্তে তারা এর নাম দিয়েছেন ‘বরভাত’।
ব্যতিক্রমী এই বিয়ের কনে চুয়াডাঙ্গা জেলার হাজরাহাটি গ্রামের কামরুজ্জামানের মেয়ে খাদিজা আকতার। আর বর মেহেরপুর গাংনী উপজেলার চৌগাছা গ্রামের কমরেড আবদুল মাবুদের ছেলে তরিকুল ইসলাম।
কমরেড মাবুদ বলেন, “পুরুষশাসিত সমাজে নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্যতিক্রমী এ বিয়ের আয়োজন। সমাজের সবাই সমান। নারী-পুরুষ আলাদা কোনো সত্তা নয়। নারী-পুরুষ একসঙ্গে কাজ করতে পারলেই সমাজ আলোকিত হবে। দূর হবে সকল কুসংস্কার।”
তিনি আরও বলেন, “সমাজে সমস্ত দায়ভার দেওয়া হয় কনেপক্ষের ওপর। কনেপক্ষের কাছ থেকে অনেক সময় পণও আদায় করে থাকেন বরপক্ষ। সেই বৃত্ত থেকে যে বের হয়ে আসা যায় এই বিয়েটা তারই একটি উদাহরণ।”
এ বিয়েতে খুশি কনে ও বর। সংসারজীবনে যাতে তারা সুখী হতে পারেন এজন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তারা।
ব্যতিক্রমী এই বিয়ে দেখতে ভিড় জমান স্খানীয়রা।বিয়েতে এমন আয়োজনে অনেকেই অবাক হয়েছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এর আগে এমন বিয়ে কখনওই দেখেননি তারা।
মেহেরপুর মুজিবনগর সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক জাহির হোসেন চঞ্চল বলেন, “হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান-- অনেকের বিয়েতেই গিয়েছি। তবে কখনও কনে বরের বাড়িতে গিয়ে বিয়ে করেছেন এমন অসাধারণ ব্যাপার দেখিনি।”