একই ঘরে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের লাশ

গাজীপুরে ঘরে নেশা করতে বাঁধা দেওয়ায় মাদকাসক্ত এক যুবক তার দুই মাসের শিশু কন্যাসহ স্ত্রীকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছে। মঙ্গলবার পুলিশ নিহতদের লাশ তাদের ঘর থেকে উদ্ধার করেছে।
নিহতরা হলেন রংপুরের পীরগঞ্জ থানার থানার ফকিরটরি বড়গোপীনাথপুর গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে মোশারফ হোসেন (২৮), তার স্ত্রী হোসনে আরা (২২) ও মেয়ে মোহিনী (২ মাস)।
পুলিশ, বাড়ির কেয়ারটেকার মো. কবির হোসেন ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর থানার দক্ষিণ পানিশাইল এলাকার সোনালী পল্লীতে সাদেক আলীর বাড়ির একটি ঘরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভাড়ায় থাকতেন মোশারফ। তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন। তবে মাঝে মধ্যে এলাকায় রিকশা চালাতেন এবং রাজমিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করতেন।
অভাব অনটনের কারণে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে অহরহ ঝগড়া বিবাদ হতো। গত কয়েকদিন ধরে শাশুড়ির কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা ধার এনে দিতে স্ত্রী হোসনে আরার ওপর চাপ দিচ্ছিলেন মোশারফ।

টাকা এনে দিতে অস্বীকার করায় দুজনের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। সোমবার রাতে মোশারফ ঘরে বসেই গাঁজা সেবন করছিলেন। এ সময় তাকে বারণ করেন তার স্ত্রী। এ নিয়ে রাতে তাদের মধ্যে কলহ হয়। এক পর্যায়ে রাতের খাবার খেয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়েন।
মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে ঘরের দরজা বন্ধ থাকায় এবং কাউকে দেখতে না পেয়ে প্রতিবেশিরা তাদের ডাকাডাকি শুরু করেন। দীর্ঘক্ষণ ডাকার পরও তাদের কোনো সাড়া না পেয়ে ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি দেন প্রতিবেশিরা। এ সময় তারা মোশারফকে ঝুলে থাকতে এবং বিছানায় মা ও মেয়েকে পড়ে থাকতে দেখেন।
এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে কাশিমপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তারা দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে নিহত তিনজনের লাশ উদ্ধার করেন। নিহতদের মধ্যে মোশারফের লাশ ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঝুলন্ত এবং তার স্ত্রী ও মেয়ের লাশ বিছানায় পড়ে ছিল।
ময়না তদন্তের জন্য লাশগুলো শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহত হোসনে আরার ভাই হাসান জানান, মোশারফ হোসেন নেশা করতেন। নেশা করতে বাধা দিলে হোসনে আরাকে নির্যাতন করতেন তিনি। এমনকি হাতে টাকা না থাকলে ঘরের বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করে গাঁজা-ইয়াবা সেবন করতেন।
কাশিমপুর থানার ওসি আকবর আলী খান জানান, নিহতদের ঘরের ভেতরে কীটনাশকের খোলা বোতল পাওয়া গেছে। শিশুটির দুধের ফিডারে ও ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা বমিতেও কীটনাশকের দুর্গন্ধ ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কৌশলে স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে বিষ পান করিয়ে হত্যার পর মোশারফ নিজে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন। তবে এ ঘটনায় তদন্ত চলছে।