এই হচ্ছে আমলাতন্ত্র!
কোভিড মোকাবেলায় অনুদান হিসেবে বাংলাদেশকে ৮৩ কোটি টাকার পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এয়ারওয়ে বিল নাম্বারে অমিল থাকায় এ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় গত দুই মাস ধরে সেগুলো বিমানবন্দরের গুদামে পড়ে আছে।
বিল নাম্বারের অমিলের কারণে পিপিইগুলো ঢাকায় পৌঁছানোর পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শুল্ক ছাড়পত্র না পাওয়ায় ১৫ দিন সেগুলো গুদামে ছিল। এই পনের দিনের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স গুদাম ভাড়া বাবদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে প্রায় ৩৩ লাখ টাকা ড্যামারেজ চার্জ দাবি করে।
ড্যামারেজ চার্জ মওকুফ করা নিয়ে গত ডিসেম্বর থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চিঠি চালাচালির পর চলতি সপ্তাহে তা মওকুফ করে বিমান কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু এরপরই আবারো একমাসের ড্যামারেজ চার্জ আরোপ বসে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এ অবস্থায় পিপিইগুলো ছাড় করা নিয়ে নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে। কবে নাগাদ এগুলো ছাড় করা যাবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোকাব্বির হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রথম ১৫ দিনের ড্যামারেজ চার্জ মওকুফ করেছি। তবে বাকি দিনগুলোর ড্যামারেজ চার্জ পরিশোধ করে পিপিইগুলো খালাস করতে হবে।'
তিনি বলৈন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চার্জ পরিশোধ করে পণ্যগুলো নিতে পারে। বিমান বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। তাই চাইলেই নিজ থেকে কোনো চার্জ মওকুফ করতে পারে না।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সরকারের অনুরোধে কোভিড নিয়ন্ত্রণে ৯,৮০,৭১৬ ডলার বা প্রায় ৮৩ কোটি টাকা মূল্যের পিপিইর দুটি কনসাইনমেন্ট গত নভেম্বরে অনুদান হিসেবে বাংলাদেশে পাঠায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ২০ ও ২১ নভেম্বর এগুলো ঢাকায় এসে পৌঁছে।
কিন্তু অনলাইন আইজিএম (আসাকুডা সিস্টেম) এবং হাউজ এয়ারওয়ে বিল নম্বর ও প্রকৃত এয়ারওয়ে বিল নম্বরের মধ্যে মিল না থাকায় শুল্ক ছাড়পত্র পেতে অতিরিক্ত সময় লাগায় পিপিইগুলো বিমানবন্দরের গুদামে রাখা হয়।
নিয়মানুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে গুদাম থেকে পণ্য বের করে আনলে কোন চার্জ দিতে হয় না। কিন্তু চার্জমুক্ত প্রথম ১৫ দিনের পর অতিরিক্ত ১৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর বিমান বাড়তি সময়ের জন্য ড্যামারেজ চার্জ হিসেবে ৩২ লাখ ৯৬ হাজার টাকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে দাবি করে।
চার্জ মওকুফ করে পিপিই ছাড় করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৭ ডিসেম্বর বিমানের এমডিকে চিঠি দেন।
ড্যামারেজ চার্জ মওকুফ করে পিপিইগুলো অবমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গত ২৮ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নানকে চিঠি লিখেন।
১৫ দিনের ড্যামারেজ চার্জ মওকুফ করে অতি দ্রুত পিপিইগুলো ছাড় করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত ১৮ জানুয়ারি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ চিঠি দেয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে।
চিঠি পাওয়ার পর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ১৫ দিনের ড্যামারেজ চার্জ মওকুফ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। একইসঙ্গে আরো এক মাসের ড্যামারেজ আরোপ করা হয়, যা মওকুফ করতে নারাজ বিমান কর্তৃপক্ষ।