উচ্চ সংক্রমণের জেলাগুলোয় কোভিড নিয়ন্ত্রণে তিন ক্লাস্টারে কাজ করছে সরকার
দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ রোধে তিন ক্লাস্টারে কাজ করছে সরকার। দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে রোববার (১৩ জুন) প্রদত্ত অনলাইন বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র প্রফেসর নাজমুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জনানো হয়, শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের বেশি রংপুর বিভাগের এমন চারটি জেলা নিয়ে গঠন করা হয়েছে প্রথম ক্লাস্টার। এই ক্লাস্টারে আছে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাাঁও ও দিনাজপুর জেলা।
দ্বিতীয় ক্লাস্টারে আছে- রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ। সেখানে ১০ শতাংশের বেশি সংক্রমণের কথা উল্লেখ করা হয় বুলেটিনে।
তিন নম্বর ক্লাস্টারটি গঠন করা হয়েছে, সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গাকে নিয়ে। এই ক্লাস্টারে ৫-১০ শতাংশ সংক্রমণের কথা বলা হয়েছে।
যদিও রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তির তথ্য বলছে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ক্লাস্টারে সংক্রমণ কোনটাই এখন ২০ শতাংশের কম নয়।
বরং এই ক্লাস্টারগুলোর মধ্যে এখন সর্বাধিক সংক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছে সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গাকে নিয়ে গঠিত তৃতীয় ক্লাস্টারে। এদিন তিন নম্বর এই ক্লাস্টারে সংক্রমণের হার ছিল ৩৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
এছাড়া বাকি দুই ক্লাস্টারের মধ্যে; লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাাঁও ও দিনাজপুর নিয়ে গঠিত প্রথম ক্লাস্টারে সংক্রমণের হার দেখা গেছে ৩৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ নিয়ে গঠিত দ্বিতীয় ক্লাস্টারে রোববার সংক্রমণ ছিল ২০ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, খুলনা বিভাগে গত এক মাসের ব্যবধানে চিকিৎসাধীন করোনা রোগী বেড়েছে ৩ হাজার ৯৬৭ জন। চিকিৎসাধীন রোগী বাড়ার হার ২০৭ শতাংশ। আবার হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। গত এক মাসে এক হাজার ৩৯ জন করোনা রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর আগের এক মাসে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন ৫৪০ জন।
চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান ঢেউয়ে দৈনিক শনাক্ত বেশি হচ্ছে। সুস্থ হওয়া রোগীর চেয়ে শনাক্ত দুই থেকে পাঁচ গুণ বেশি হওয়ায় সক্রিয় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ প্রেক্ষিতে হাসপাতালের দেখা দিচ্ছে শয্যা সংকট।
এনিয়ে অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম বলেন, এসব এলাকায় যারা বসবাস করেন এবং স্বাস্থ্য সেবায় কাজ করেন তাদেরকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। স্বানীয় ব্যবস্থাপনার সাথে যারা সংশ্লিষ্ট তাদেরকে লজিস্টিক দিয়ে সার্পোট দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, করোনা পরীক্ষার ফল দ্রুত পেতে সীমান্তবর্তী জেলার পাশের এলাকাগুলোর ল্যাবে নমুনা পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ল্যাবে জমে যাচ্ছে নমুনা। এসব নমুনা নওগাঁ ও নাটোরে পাঠানো হচ্ছে। একই চিত্র আরও অনেক জেলার।
নমুনা পরীক্ষার বিষয়টি নতুন করে সমন্বয়ের পরিকল্পনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে নাজমুল ইসলাম বলেন, "রাজশাহী জেলাসহ যেসব এলাকায় সংক্রমণ বেশি, সেসব এলাকার করোনা নমুনা যেসব এলাকায় চাপ কম, সেখানে পাঠিয়ে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।রাজশাহীর পাশাপাশি বগুড়াতেও কিছু নমুনা পাঠানো হবে। এছাড়া যেখানে চাপ কম আছে, সেখানে এই নমুনা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে নমুনা পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে।"
তিনি বলেন, "রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁসহ দক্ষিণপশ্চিমের সীমান্তবর্তী জেলায় সংক্রমণের হার অনেক বেশি। যেকারণে সরকারি উদ্যোগে বিধিনিষেধ চলমান রয়েছে। তাই এ অঞ্চলগুলোতে অ্যান্টিজেন টেস্ট বাড়ানো হয়েছে। এমনকি করোনা পরীক্ষার জন্য যে ১০০ টাকা নেওয়া হতো, সেটাও নেয়া হচ্ছে না।"
এদিকে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আগের দিনের চেয়ে করোনাভাইরাসে নতুন শনাক্ত রোগী ও মৃত্যু বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস সংক্রমিত আরও ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে; যা ৩৫ দিনের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।
২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৪৩৬ জন। এর আগে একদিনে এর চেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছিল গত ৯ মে, ৫৬ জনের।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজার ৭৪৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৯৯ শতাংশ।