ইভ্যালির গ্রাহকদের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে: টিক্যাব
ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, সিরাজগঞ্জ শপ, ধামাকাসহ বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের যে সকল গ্রাহক অর্থ পরিশোধের পরও পণ্য পাননি তাদের সে অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে টেলি কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিক্যাব)।
আজ ২৪ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) রাজধানীর তোপখানা রোডস্থ রেল পোষ্য সোসাইটি মিলনায়তনে টিক্যাবের উদ্যোগে আয়োজিত "ই-কমার্সের নামে গ্রাহকের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার মহোৎসব : দায়টা আসলে কার?" শীর্ষক আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানায় সংগঠনটি।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে টিক্যাবের আহ্বায়ক মুর্শিদুল হক বলেন, "ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের কর্ণধাররা এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বন্দি। এ অবস্থায় নিজেদের অর্থ ফিরে পাওয়া নিয়ে আতঙ্কিত তাদের লাখ লাখ গ্রাহক। শুধু এ দুটি প্রতিষ্ঠানই নয়, প্রতিদিনই নতুন নতুন প্রতিষ্ঠানের নামে সারাদেশে একই কায়দায় লোভনীয় অফারের ফাঁদে ফেলে গ্রাহকদের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কিছু কুচক্রী মহল ই-কর্মাস ব্যবসার নামে লোভনীয় অফারের ফাঁদে ফেলে গ্রাহকদের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার মহোৎসবে মেতে উঠেছে। প্রকৃতপক্ষে গত দুই বছরে করোনা মহামারির কারণে ঘোষিত লকডাউনে সাধারণ মানুষ অনলাইন কেনাকাটায় আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। আর এ সুযোগেই প্রতারক চক্রগুলো ই-কমার্সের নামে এ ধরনের প্রতারনা শুরু করে। তাদের কর্মকান্ডে ই-কমার্স খাতের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন হলো।"
তিনি আরও বলেন, "ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন সুচতুর প্রতারনা প্রকাশের পর এখন প্রশ্ন হচ্ছে এর দায় কার? অবশ্যই এর প্রধান দায় প্রতারকচক্রের। এরপর দায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের, যারা সময়মত তদারকি করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। আর সবশেষে কিছুটা দায় গ্রাহকদের উপরেও বর্তায়। যারা বাস্তবতা বিবেচনা না করে লোভনীয় অফারে আকৃষ্ট হয়েছেন। দায় যারই হোক, গ্রাহকরা রাষ্ট্রের নাগরিক। তারা প্রতারণার শিকার হলে তাদের ন্যায় বিচার পাওয়ার ব্যবস্থা রাষ্ট্রকেই করতে হবে। অতীতের যুবক, ডেসটিনি, ইউনিপে'র মত ঘটনা আমাদেরকে আতঙ্কিত করলেও ডিজিটালাইজেশনের এ যুগ আমাদের আশান্বিত করছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনুমোদিত ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে লেনদেন করেছেন গ্রাহকরা। তাদের কাছে পণ্য অর্ডার ও পেইমেন্টের সম্পূর্ণ তথ্য রয়েছে। পাশাপাশি তাদের কাছে নেওয়া অর্থ ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জ কি করেছে সেটাও প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক একাউন্ট ও সার্ভার পরীক্ষা করলে পাওয়া যাবে। তাই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের তালিকা করা, তাদের পাওনা নির্ণয়, প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতিয়ে নেয়া অর্থ কোথায় তা বের করা ও গ্রাহকদের মাঝে সে অর্থ ফিরিয়ে দেওয়া কঠিন হবে বলে আমরা মনে করি না। যদি সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বিষয়টি বিবেচনা করে গ্রাহকদের অর্থ তাদের মাঝে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয় তবে তা দেশের ইতিহাসে যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ হিসেবে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।"
টিক্যাব আহ্বয়ক আরও বলেন, "গ্রেফতারে আগে গ্রাহকদের প্রায় ১১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে মালিকানা পরিবর্তনের নাটক সাজিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছে ই-অরেঞ্জ। একইভাবে ইভ্যালিও দায়সহ মালিকানা পরিবর্তনের চেষ্টা করছিল বলে র্যাবকে জানিয়েছে ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও এমডি। বিভিন্ন সময় ফেসবুক লাইভে এসে দায়গ্রস্ত একটি প্রতিষ্ঠানের মনগড়া ব্রান্ডভ্যালু জাহির করা তারই প্রমাণ। ফেব্রুয়ারিতে ইভ্যালির দায় ছিল ৪০৩ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪৩ কোটি টাকায়। দায় মেটাতে সময় নিয়ে উল্টো দায় বাড়িয়েছে ইভ্যালি। যদিও প্রকৃতপক্ষে তাদের দায় আরো অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইভ্যালির দেখানো পথে হেঁটে অস্বাভাবিক অফার দিয়ে গ্রাহকদের টাকা লুটে নেমে পড়েছে আরো বহু কোম্পানি। আমরা অবিলম্বে এসকল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।"
এ সময় টিক্যাব এর পক্ষ থেকে ৪ দফা দাবি জানানো হয়-
১) গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে আদালতের মাধ্যমে ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জে অবিলম্বে প্রশাসক নিয়োগ করে কার্যক্রম চলমান রাখতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমান সম্পদ থেকেই গ্রাহকদের মাঝে প্রোডাক্ট ডেলিভারী ও রিফান্ড অব্যাহত রাখতে হবে।
২) জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে একটি বিশেষ সেল গঠন করে সহজ পদ্ধতিতে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, সিরাজগঞ্জশপ, আলেশা মার্ট, কিউকমসহ সকল প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অভিযোগ দায়ের এবং তা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।
৩) 'ডিজিটাল কমার্স নির্দেশিকা ২০২১' এর পাশাপাশি এ খাতে শৃঙ্খলা আনয়ন, প্রতারনা ঠেকানো ও গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষায় 'আইন' প্রণয়ন করতে হবে।
৪) ই-কমার্স খাতের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা টিকিয়ে রাখতে একটি আলাদা কমিশন গঠন করে নিয়মিত মনিটরিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মঞ্জুর হোসেন ঈসা, যুবশক্তির প্রধান উপদেষ্টা হানিফ বাংলাদেশী, টিক্যাবের যুগ্ম আহবায়ক ওয়ায়েদ উল্লাহ, মুহাম্মদ আসিফ, মোঃ রফিকুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন বাবু, ফারুক হোসেন প্রমুখ।