ইউএনও ওয়াহিদার ওপর হামলার মূল অভিযুক্তসহ আটক ২
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনায় দু'জনকে গ্রেফতার আটক করেছে র্যাব ও পুলিশের যৌথ দল। শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে পুলিশ ও র্যাবের যৌথ অভিযানে দিনাজপুরের হাকিমপুর এলাকার হিলির কালিগঞ্জ এলাকা থেকে থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- মূল হামলাকারী আসাদুল ওরফে আরশাদুল ও জাহাঙ্গীর।
মূল হামলাকারী আসাদুল ওরফে আরশাদুল (৩৫)। সে ঘোড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুরের আমজাদ হোসেনের ছেলে। এই ঘটনায় তার সহযোগী জাহাঙ্গীর হোসেনকেও আটক করা হয়েছে। জাহাঙ্গীর হোসেন উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক বলে জানা গেছে। তিনি সাগর পাড়া এলাকার আবুল কালামের ছেলে।
হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, পুলিশ আর র্যাবের যৌথ অভিযানে তারা ধরা পড়ে। তারা দুজনই ইউএনওর বাসায় ঢোকেন। সিসিটিভিতে তাদেরই দেখা গেছে।
এদিকে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম জানান, আটক দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আসাদুল হক র্যাবের হেফাজতে ও জাহাঙ্গীর ডিআইজির হেফাজতে রয়েছে। জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিষয়টি জানতে পুলিশ সুপারকে বারবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাকিমপুর, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট থানা এবং র্যাব রংপুরের একটি দল যৌথভাবে কালিগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসাদুল হককে আটক করে। পরে তাকে রংপুরে র্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া।
এদিকে, হামলার ঘটনায় তার বড় ভাই শেখ ফরিদ উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৪ থেকে ৫ জনের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেছেন। রাত সাড়ে ১১ টার দিকে ঘোড়াঘাট থানায় তিনি এই এজাহার দায়ের করেন।
ঘোড়াঘাট থানা ওসি আমিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে সরকারি বাসভবনে ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবাকে পিটিয়ে আহত করে দুষ্কৃতকারীরা। ওয়াহিদা খানমের বাবার নাম ওমর আলী। নওগাঁ থেকে মাঝে মাঝে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন মুক্তিযোদ্ধা বাবা ওমর আলী। ওয়াহিদা খানমের স্বামী মেজবাহুল হোসেন রংপুরের পীরগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। তাদের তিন বছরের ছেলে সন্তান রয়েছে। হামলার সময় শিশুটি ঘুমন্ত ছিল। বর্তমানে সে ভালো আছে।
দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাহমুদুল আলম জানান, আনুমানিক রাত ৩টার দিকে ঘরের ভেন্টিলেটর দিয়ে দুর্বৃত্তরা প্রবেশ করে। প্রথমে তার বাবাকে আহত করে পাশের ঘরে বাথরুমে আটকে রাখে। পরে ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলা চালায়। এলোপাতাড়ি তাকেও পিটিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
তাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে পরে রংপুর কমিউনিটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা দেয়া হয়। তার বাবাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওয়াহিদা খানমকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় পাঠানো হয়।
বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টা ৫ মিনিটের দিকে তার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের উপপরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ইউএনও ওয়াহিদার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। অস্ত্রোপচার শেষে তাকে আইসিইউতে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। আগের চেয়ে অবস্থা কিছুটা উন্নতি বলা যায়, তবে তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন।