আর্থিক অনিয়মে দিশা হারিয়েছে ঢাকায় দশ স্কুল নির্মাণের উদ্যোগ
রাজধানী ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকায় ১০টি সরকারি বিদ্যালয় নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু, শুরু থেকেই আর্থিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ওঠা বহুল আলোচিত প্রকল্পটিতে এসময়ে মাত্র ২ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।
ইতোপূর্বে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভূমি ক্রয়ের সময় অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে প্রকল্প পরিচালক কর্মকর্তাকে ওএসডি করে।
মন্ত্রণালয় এখন প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়াতে চাইছে। সে লক্ষ্যে একটি সংশোধিত বাজেট তৈরির কাজও এগিয়ে চলছে বলে ইতোপূর্বে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
গত ১০ মার্চ এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর পেরিয়ে গেছে আরও আট মাস, কিন্তু সে উদ্যোগেও অগ্রগতি প্রায় নেই বললেই চলে।
এরমধ্যেই আবার প্রকল্পের জন্য নতুন পরিচালক কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে চলেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক এটি নিশ্চিত করে বলেন, নতুন পরিচালক প্রকল্প সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রস্তুত করবেন। তিনি জানান, ঢাকা এবং এর আশেপাশের এলাকায় মানসম্মত শিক্ষার চাহিদা বাড়ার কারণেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ নেয়।
প্রকল্পের প্রথম দফা উদ্যোগের পক্ষ নিয়ে গোলাম ফারুক বলেন, এটা (প্রকল্প পরিচালককে ওএসডি করা) ভুল বার্তা দেয়। মন্ত্রণালয় তাকে ওএসডি'তে পাঠালেও তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের কোনো প্রমাণ পায়নি।
তবে প্রকল্প পরিচালক বাস্তবায়নে আরও সচেতন হতে পারতেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৭ সালে প্রধান শিক্ষকদের আবাসিক সুবিধাসহ ১০টি উচ্চ বিদ্যালয় এবং প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য একটি শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য প্রকল্পটি চালু করেছিল।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৭৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৪০০ কোটি টাকা ভূমি অধিগ্রহণ আর বাকি টাকা ভবন নির্মানের জন্য নির্ধারিত হয়।
২০১৯ সালে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পরে এই প্রকল্পের জন্য একটি সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) বাতিল করা হয় বলে মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে।
অভিযোগ আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রভাশালী কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রকল্প কর্মকর্তারা জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী কমিটির (একনেক) পাস করা প্রকল্পটির আরডিপিপি বাড়িয়ে ১,১২৪ কোটি টাকা করার চেষ্টা করেন। যা মূল বরাদ্দের চাইতেও ৬৭ শতাংশ বেশি।
তবে কেন্দ্রীয় তত্ত্বাবধান ও মূল্যায়ন কমিটি এর বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার সাথে সাথে তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
কাজী মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে কমিটির প্রথম বৈঠকে আরডিপিপিকে আরও সংশোধন করার জন্য বলা হয়। এরপরই, বন্ধ হয় প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির প্রক্রিয়া।
স্কুল প্রকল্পে মারাত্মক অনিয়মের বিষয়টি গত বছর দেশের বহুল আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে তহবিল আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করে।
তবে কমিটি এবিষয়ে কোনও প্রমাণ পায়নি।
ইতোপূর্বে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে গত ২০ সেপ্টেম্বর আয়োজিত এক ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রকল্প পরিচালক জানান, (আত্মসাতের অভিযোগ থাকা) ১৩ কোটি টাকা আসলে ভূমি ক্রয় এবং অন্যান্য পরিচালনা খাতে ব্যয় করা হয়েছে।
১০টির মধ্যে মাত্র দুই খণ্ড জমির জন্য দলিলাদি প্রস্তুত করা হয়েছে, বাকিগুলোর নথিপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিন্তু, বৈঠকে যোগ দেওয়া সূত্ররা জানিয়েছে, ভবন নির্মাণের জন্য এখনও প্রকল্পটি কোনো জমি পায়নি।
সভায় প্রধান শিক্ষকদের আবাসিক ভবন তৈরির পরিবর্তে প্রতিটি স্কুলে একটি করে ব্যয়ামাগার তৈরির সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।
প্রকল্প পরিচালক ড. মো. আমিরুল ইসলাম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে জটিলতায় প্রকল্পটি বিলম্বিত হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, ''আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। কিন্তু একদল দুর্নীতিবাজ লোক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়কে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্ররোচিত করে।''
''আসলে এই জাতীয় প্রকল্পের সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে কমপক্ষে ১০ বছর সময় লাগে। আমরা মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তবে, এরমধ্যেই গণ্ডগোল বেঁধে যায়,'' আমিরুল ইসলাম যোগ করেন।
যে ১০ টি বিদ্যালয়টি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো: কেরানীগঞ্জে পস্মদী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, খিলক্ষেতে জোয়ারশাহারা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, আশুলিয়ায় বাইপাইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সাভারে হেমায়েতপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বাড্ডায় সাঁতারকুল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সাভারে নবীনগর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ধামরাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সিদ্ধিরগঞ্জে জলকুড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মৌচাক সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং রূপগঞ্জে পূর্বাচল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।