আম্পানের ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে কয়রার মানুষ
সুপার সাইক্লোন আম্পানের পর পনের দিন পেরিয়ে গেলেও তার ক্ষত এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে খুলনার সুন্দরবন উপকূলীয় উপজেলা কয়রার মানুষ। দুর্গত এলাকার অনেক মানুষ বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিচ্ছেন উঁচু বাঁধের ওপর খোলা আকাশের নিচে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে উপকূলবাসীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সহায়তায় কিছু কিছু এলাকায় সরকারি ত্রাণ পৌঁছালেও বেশিরভাগ দুর্গত এলাকাতেই ত্রাণ পৌঁছায়নি। এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালের জোয়ারের তোড়ে কয়রা সদর ইউনিয়নের হরিণখোালা রিংবাধ ভেঙ্গে আবারও লবণ পানি প্রবেশ করেছে। এতে করে স্থানীয় অধিবাসীরা রয়েছে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
গত ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্পানের তাণ্ডবে খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় কয়রা এলাকার বিভিন্ন স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ ১৪টি বাঁধ ভেঙে মাছের ঘের ও ফসলি জমি লবণ পানিয়ে তলিয়ে যায়। এ ছাড়া কয়রা উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের হাজার হাজার গাছপালা উপড়ে পড়ে।
গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড়ের পর কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হওয়ার কারণে দুর্গতদের ভোগান্তি আরো বেড়েছে। প্রতিদিন জোয়ারের পানি লোকালয়ে ওঠার কারণে বানভাসিদের জীবন বাঁচাতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। ঝড়ে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বাড়িঘর মেরামতের আর্থিক সঙ্গতি নেই দরিদ্র মানুষদের। এখনো অনেকের জীবন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। পানিবন্দি মানুষের বিশুদ্ধ খাবার পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। লবণ পানির কারণে গো-খাদ্যের সংকটও প্রকট আকার ধারণ করেছে।
কয়রা সদও ইউনিয়নের মদিনাবন্দ গ্রামের কৃষক গাজী আবদুস সালাম বলেন, আম্পানের পর দুঃখ-কষ্টে আমাদের জীবন কাটছে। লবন পানিতে সব তলিয়ে গেছে। বিশুদ্ধ খাবার পানিও নেই।
''এ অবস্থা থেকে বাঁচতে এখন একটি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন। তা না হলে আমাদের কষ্ট ঘুটবে না'' যোগ করেন তিনি।
কয়রা সদর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, বারবার ঘূর্ণিঝড় আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কয়রার মানুষের অর্থনৈতিক মেরুদ- ভেঙ্গে গেছে। বেঁচে থাকার জন্য এখানকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষকে রূঢ় বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। এ লড়াই যেন কোনোভাবেই শেষ হচ্ছে না।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের পর সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে এলাকাবাসী কিছুটা হলেও বাঁধ মেরামত করেছে। তবে উপকূলেল মানুষদের বাঁচাতে হলে টেকসই বাঁধ নির্মাণ জরুরি।
এ ব্যাপারে কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিমুল কুমার সাহা বলেন, শনিবার (০৬জুন) সকাল ১০টায় সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বেড়িবাঁধ পুনরায় সংস্কারের জন্য আলোচনা সভা আহবান করা হয়েছে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে কয়রার ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী। তিনি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য (কয়রা-পাইকগাছা) আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, ইতোমধ্যে কয়রা উপজেলার ভেঙ্গে যাওয়া কয়েকটি বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। বাকিগুলোর আটকানোর কাজ অব্যাহত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।