আগে ঘর, তবে পর: শুদ্ধি অভিযান নিয়ে কাদের
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আগে নিজের দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পর অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুধবার দুপুরে যশোর ঈদগাহ ময়দানে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার নীতি, ‘ঘরকে শাস্তি দিয়ে পরকে শেখাবো’। শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। আগে ঘরের লোকের শাস্তি দিবো। তারপর পরের লোকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের পরিচালনায় সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের ছাড়াও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বক্তব্য রাখেন।
সম্মালনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “যারা দীর্ঘদিন দলে পদ পায়নি, তাদের পদ দিতে হবে। নেতাদের পিছনে ঘুরে বেড়ায়, পরিচয় দিতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ করছে, আওয়ামী লীগে পদ নেই। কোনঠাসাদের নেতৃত্বে নিয়ে আসুন। আওয়ামী লীগ ত্যাগী, আদর্শবান কর্মীদের সংগঠন। ঘরের মধ্যে ঘর করবেন না; মশারির মধ্যে মশারি করবেন না। মৌসুমী পাখিদের গুরুত্ব দেওয়া যাবে না। মৌসুমী পাখিরা মৌসুমে আসে, মৌসুম চলে গেলে পর্বতমালায় ফিরে যায়। আন্দোলন সংগ্রামের সময় মৌসুমী পাখিদের পাওয়া যাবে না।”
“নেতাদের আচরণ ভাল করতে হবে। আচরণ ভাল না হলে উন্নয়নের মূল্য নেই। একটি খারাপ আচরণে দশটি উন্নয়ন ঢেকে যাবে। আওয়ামী লীগ চায় বিশুদ্ধ রক্ত। দূষিত রক্তের দরকার নেই। আওয়ামী লীগে বিশুদ্ধ রক্তের অভাব নেই। দূষিত রক্ত বের করে দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “জঙ্গি হামলায় ঢাকা রক্তাক্ত হয়েছিল। সেই হলি আর্টিজান মামলায় আজ ৭ জনের ফাঁসির রায় হয়েছে। এ রায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার রায়। ফেনীর সোনাগাজীর নুসরাত হত্যার রায় হয়েছে। বুয়েটের আবরার হত্যাকারীরা ছাত্রলীগের কর্মী ছিল। তারা গ্রেপ্তার হয়েছে, রেহাই পায়নি। তাদের বিচার হবে।”
দলের ত্যাগী নেতাদের খোঁজখবর নেওয়ার তাগিদ দিয়ে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, “দলের অনেক নেতাকর্মী আছেন, যারা দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি। কিছু নেতার কপাল খুলেছে। কিন্তু ত্যাগী নেতাদের অনেকেই এখনো কুড়েঘরে বসবাস করেন। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে পারেন না। অনেকে অসুস্থ আছেন। চিকিৎসা করাতে পারছে না। মেয়ের বিয়ে দিতে পারছেন না। দলের নেতাকর্মীদের চিকিৎসার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার দরজা খোলা। প্রয়োজনে তিনি বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। আপনারা আমাদের জানাবেন।”
এর আগে দুপুর ১২টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আগামী তিন বছরের জন্য শহিদুল ইসলাম মিলনকে সভাপতি ও শাহীন চাকলাদারকে সাধারণ সম্পাদক করে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ওই সম্মেলনে শহিদুল ইসলাম মিলনকে সভাপতি ও শাহীন চাকলাদারকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
পরে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এবারের সম্মেলনে ৪৫৫ জন কাউন্সিলর ও প্রায় ১১ হাজার ডেলিগেট উপস্থিত ছিলেন।