আইলের নিচে ‘পৌনে ১১ লাখ’ একর জমি
সারা দেশে আইলের নিচে ১০ লাখ ৭৮ হাজার একরেরও বেশি জমি রয়েছে বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছে বগুড়ায় অবস্থিত পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ)।
গত ২৬ নভেম্বর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয়তনে প্রায় ময়মনসিংহ জেলার সমান এ জমি থেকে বছরে কমপক্ষে ৫ কোটি ২০ লাখ মণ আমন ধান পাওয়া যাবে। এ ধানের বর্তমান বাজার দর ৩ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকারও বেশি।
আরডিএর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জমির আইল উঠিয়ে দিয়ে ধান চাষ করলে অতিরিক্ত ফলন হতে পারে ২৯ শতাংশেরও বেশি। শুধু তাই নয়, চাষাবাদে যন্ত্রের ব্যবহারও করা যাবে সহজে।
আরডিএর পরিচালক ( কৃষি) ও গবেষক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, বগুড়ার শেরপুর উপজেলার চকপাথালিয়া গ্রামে ৯ একর জমি থেকে ৪২টি আইল সরিয়ে জুলাই মাসে আমন চাষ করেন সাত জন গবেষক। তিন মাস পরে ধান কাটা-মাড়াই করে ফলন বেশি পাওয়া যায় প্রায় ৪ মণ।
তিনি বলেন, “গবেষণায় দেখা যায় ৪২টি আইলের নিচে থাকা ১৩ শতাংশ জমি থেকে অতিরিক্ত ধান পাওয়া গেছে ৮ মণ, অর্থাৎ সাড়ে ২৯ শতাংশেরও বেশি। ৪২ জন চাষির ধান চাষে বিঘায় ব্যয় কমেছে গড়ে আড়াই হাজার টাকা। আর অতিরিক্ত ফসল পেয়েছেন প্রায় ২৪০০ টাকার।”
“কৃষি জমির আইল উঠিয়ে সমবায় ভিত্তিতে কৃষি যান্ত্রিকীকরনের মাধ্যমে জমির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি” শীর্ষক এ গবেষণা প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা বিভিন্ন ধরনের সুফল পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
দেশে প্রথমবারের মতো সমবায়ভিত্তিক চাষ নিয়ে গবেষণায় দেখা যায়, আইল কম থাকলে খুব সহজেই ধান রোপন ও কাটা-মাড়াইসহ অন্যান্য কাজ করা যায়।
প্রকল্প এলাকা চকপাথালিয়া গ্রামের চাষি জাহেদুর রহমান জানান, গত বছর তিনি এক বিঘায় ধান পেয়েছিলেন ১৪ মণ। আর আইল উঠিয়ে দিয়ে সমবায় ভিত্তিতে চাষ করে এবার ধান পেয়েছেন ১৮ মণ।
“গত বছর এক বিঘায় আমন লাগিয়ে ঘরে তুললে খরচ হয় সাড়ে ৭ হাজার টাকারও বেশি। আর এবার সেখানে লেগেছে সাড়ে ৫ হাজারের কম,” বলেন জাহেদুর।
এ প্রকল্পের আরেক সুবিধাভোগী চাষি একই গ্রামের আলহাজ আতাউর রহমান জানান, গত বছর প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টাকা ব্যয় করে এক বিঘায় আমন পেয়েছেন ১৫ মণ। আর এ বছর পেয়েছেন ১৭ মণ।
“আমার কাছে মনে হয়েছে এ প্রকল্পের সবচেয়ে বড় সুবিধা যন্ত্রের কারণে ধান চাষাবাদে সময় বাঁচে আর কষ্ট হয় কম। আর ফলন আর লাভ দুটিই হয় বেশি,” বলেন চাষি আতাউর।
আরডিএর উপপরিচালক (সমাজবিজ্ঞান অনুষদ) শেখ শাহরিয়ার মোহাম্মাদ জানান, আইল উঠিয়ে দিলে আমনের মতোই অন্যান্য ধান এবং ফসল চাষ সম্ভব এবং তা করা সম্ভব হলে আমনের চেয়ে বেশি টাকা আয় করা সম্ভব।
এ গবেষণা প্রকল্পের টিম লিডার ও আরডিএর মহাপরিচালক (ডিজি) আমিনুল ইসলাম (অতিরিক্ত সচিব) বলেন, “কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও মাঠকর্মীদের পাশাপাশি অন্যদের নিয়ে এ প্রযুক্তি সারা দেশে পর্যায়ক্রমে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। ”
তিনি বলেন, “ব্যক্তিগত শ্রম না দিলে সনাতন পদ্ধতিতে ধান চাষ করলে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকেই না। কিন্তু যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে শ্রম এবং খরচ দুইই কমে লাভবান হন চাষিরা।"