অর্থ উপার্জনের প্রবণতা একটি রোগ: প্রধানমন্ত্রী
অর্থ উপার্জনের প্রবণতা একটি রোগে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, ‘ধন-সম্পদ জমানো (লোভ) এখন একটা রোগে পরিণত হয়েছে। এটা অসুস্থতা… আমরা যারা সৎপথে উপার্জনের মাধ্যমে জীবন-যাপন করতে চাই তারা মর্যাদা লাভ করতে পারি।’
শনিবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ কারও বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য নয়, মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করতে ব্যয় করা হবে।
বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাজা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার সাজাকে অনেকে রাজনৈতিক রং মেশানোর চেষ্টা করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কোনো রাজনৈতিক মামলা নয়… এটা সম্পূর্ণভাবে দুর্নীতির মামলা। তবে, অনেকেই এটাতে রাজনৈতিক রং মেশাতে চান। আমরা রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা দেইনি।’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
খালেদা জিয়ার মামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমের জন্য আসা টাকা তাদের না দিয়ে খালেদা জিয়ার নিজের অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এতিমের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। ‘সে মামলার রায়ে সাজা পেয়ে তিনি এখন জেলে আছেন।’
সম্প্রতি হাইকোর্টের সামনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাস ভাঙচুরের ঘটনার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই তারা হঠাৎ করে এ হামলা করে। ‘বিএনপির নেতা-কর্মীদের জন্য এটা নতুন কিছু নয়… তাদের এসব করার অভ্যাস আছে।’
২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে বিএনপির সহিংসতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা দেশের মানুষ ও সম্পদের ওপর বারবার হামলা চালিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি সত্য যে আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশটি এগিয়েছিল এবং এটি এগিয়ে চলেছে এবং এগিয়ে যাবে।
বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন ও অত্যাচার করা হয়েছে উল্লেখ বরে তিনি বলেন, তার সরকারের লক্ষ্য সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড, নির্যাতন ও সহিংসতার হাত থেকে রক্ষা করে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা এবং তাদের জীবনযাত্রাকে উন্নত করা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও ঢাকা উত্তর সিটি আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ বক্তব্য দেন।
ঢাকা উত্তর সিটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান ঢাকা সিটির প্রতিবেদন তুলে ধরেন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর খুনি ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য জিয়াউর রহমান, এইচ এম এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, যারা হত্যা, অভ্যুত্থান ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগ সবসময়ই তাদের ষড়যন্ত্রের লক্ষ্যবস্তু ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি নির্বাচন করেছিলেন যেখানে দুই শতাংশ ভোটও পড়েনি। তবে জনগণের ভোট ছিনিয়ে নিয়ে খালেদা জিয়া নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেও দেড় মাসের মধ্যে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বিএনপি নেতারা কথায় কথায় সর্বশেষ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা ১৫ ফেব্রুয়ারির মতো নির্বাচন করেছিল, তাদের মুখে নির্বাচনের বিষয়ে কোনো প্রশ্ন শোভা পায় না।
তিনি বলেন, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধতা দেয়ার হাতিয়ার হিসাবে গঠিত হয়েছিল, এবং তৃণমূল থেকে দল দুটি গড়ে উঠেনি।
‘কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণকে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্ত করতে এবং তাদের ভাগ্য উন্নত করার লক্ষ্যে একটি দল হিসাবে নীতি ও আদর্শ নিয়ে গড়ে উঠেছে,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ জীবন যাপন করেছেন এবং তার জীবনকে মানুষের কল্যাণে নিবেদন করেছেন।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদেরকে বঙ্গবন্ধু যেভানে মানুষের কল্যাণে নিজের জীবনকে নিবেদিত করেছিলেন, সেভাবে তার আদর্শ অনুসরণের আহ্বান জানান।