Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

রমনা পার্ক গাছেদের, পাখিদের কিন্তু যাদের কথা আমরা জানি না!

রমনার বটমূলে যেখানে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হয় সেটি কিন্তু পাকুড় গাছ। আবার আশির দশকে ঢাকায় ফুল বিক্রির একমাত্র জায়গা ছিল রমনা পার্ক। পরে নব্বইয়ের দশকে ঢাকা ক্লাবের উল্টোদিকে মালঞ্চ নামের একটা দোকান হয়।
রমনা পার্ক গাছেদের, পাখিদের কিন্তু যাদের কথা আমরা জানি না!

ফিচার

সালেহ শফিক
15 June, 2022, 09:20 am
Last modified: 15 June, 2022, 06:01 pm

Related News

  • শহরের প্রতিটি বাড়ির ছাদ হোক একটুকরো উদ্যান 
  • রমনা বটমূলে হামলা: নাম বদলে ইমাম সেজে ১৪ বছর পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার
  • দুই বছর বিরতির পর রমনা বটমূলে বর্ষবরণ উৎসব
  • অধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকছে রমনা পার্ক
  • কেমন হবে মানুষবিহীন পৃথিবী? 

রমনা পার্ক গাছেদের, পাখিদের কিন্তু যাদের কথা আমরা জানি না!

রমনার বটমূলে যেখানে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হয় সেটি কিন্তু পাকুড় গাছ। আবার আশির দশকে ঢাকায় ফুল বিক্রির একমাত্র জায়গা ছিল রমনা পার্ক। পরে নব্বইয়ের দশকে ঢাকা ক্লাবের উল্টোদিকে মালঞ্চ নামের একটা দোকান হয়।
সালেহ শফিক
15 June, 2022, 09:20 am
Last modified: 15 June, 2022, 06:01 pm
পার্কে এখন ১৭৮ প্রজাতির ৫০০০ গাছ আছে। আরো অন্তত ১০০ প্রজাতির গাছ লাগানোর জায়গা আছে। ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

স্বাস্থ্য রক্ষাকল্পে দুই পাক প্রতি বিকালে আর কাজের সূত্রে সকাল থেকেই এদিক-ওদিক চক্কর দিতেন। সে হিসাবে প্রতিদিন পাখি ভাই ৫ কিলোমিটার হাঁটতেন রমনা পার্কের ভিতরে। গণপূর্ত (পিডব্লিউডি) অধিদপ্তরের আরবরি কালচার (বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষ প্রতিপালন) বিভাগে তিনি যোগ দেন ১৯৮৪ সালে। চলতি বছর তিনি এলপিআরে (লিভ প্রিপারেশন ফর রিটায়ারমেন্ট) গেছেন। তাহলে মোটমাট ৩৭ বছর ছিল তার চাকরি জীবন। এর মধ্যে ১০ বছর কাজ করেছেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। আর বাকী ২৫ বছরের পুরোটাই রমনা পার্কে কাটিয়েছেন। তবে থাকার জায়গা তার বরাবরই ছিল রমনা কলোনীতে। সে হিসাবে ছুটিছাটা বাদ দিয়ে গড়ে ২ কিলোমিটারও ধরলে ৩৫ বছরে তিনি  রমনা পার্কে হেঁটেছেন ৫০০০ কিলোমিটার। প্রথম যেদিন তিনি কাজে যোগ দেন সেদিনই প্রেমে পড়েছিলেন পার্কটির। সুন্দর করে ছাটা ঘাস দেখে তার সবুজ কার্পেটের কথাই মনে হয়েছিল বেশি। সাড়ে ৩ অশ্বশক্তির বড় ব্লেডের ঘাসকাটার যন্ত্র তিনি নিজেও চালিয়েছেন অনেকবার। এখন তো ঘাস কাটার হাতমেশিনও পাওয়া যায়। পাখি ভাইয়ের পুরো নাম আসম জিয়াউল হাসান। প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মা তাকে বলতেন বৃক্ষপ্রেমী সহযাত্রিক। একবার গুলশানের একটি বাড়িতে, যেটা ছিল রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সেলিনা মালেকের বাড়ি, সে বাড়িতে পাখি ভাই সপ্তাহে একদিন বাগান পরিচর্যা করতে যেতেন, সে বাড়ির একটি গুল্ম জাতীয় গাছ কিছুতেই চিনতে পারছিলেন না। দ্বিজেন শর্মাকে জানাতেই তিনি বলেছিলেন পাতা বা ডাল ছিঁড়ে নিয়ে আসতে। দ্বিজেন শর্মা থাকতেন ভিকারুন্নিসা নূন স্কুলের কাছে। সেদিন জোর বাতাস বইছিল। পাখি ভাই ডাল নিয়ে ঘরে ঢোকার পর ঝড় শুরু হয়েছিল বলে রক্ষা। দ্বিজেন শর্মার স্ত্রী দেবী শর্মা তাকে দেখে বলেছিলেন, 'আমি আপনার কথা এতো শুনেছি যে মনে হয়েছিল আপনি বড়সড় কেউ হবেন।' শুনে হেসে ফেলেছিলেন পাখি ভাই। তারপর দ্বিজেন স্যার কাগজে ত্রিকোণাকার পাতা এঁকে দিয়ে বুঝিয়ে বলেছিলেন, গুল্ম জাতীয় এ গাছের নাম জেষ্ঠবা।

ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

পাখি ভাই বলছিলেন, 'দ্বিজেন স্যারের কাছে গাছগাছালি ছিল সন্তানের মতো। মানুষটার মধ্যে অহংকার বলে কোনো জিনিস ছিল না। তিনি ছিলেন সত্যিকারের প্রকৃতিপুত্র। ২০ বছর হবে, স্যার সিলেটের কোনো জায়গা থেকে পালান নামের একটা গাছ নিয়ে এসে বললেন, পাখি দেখো এটাকে বাঁচানো যায় কি না।' পাহাড়ের গাছ, আমরা সর্বোচ্চ যত্ন নিলাম, ঢাকার আর কোথাও নেই গাছটি। এখনো রমনা পার্কের নার্সারির ভিতর টিকে আছে ওই পালান। পনের ফুট উঁচু হয়ে গেছে, লাল লাল ফুল দেয়, সুন্দর দেখতে গাছটি। নতুন নতুন গাছে রমনা পার্কটি সাজিয়ে তুলতে চাইতেন স্যার। স্যারের সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে ঘুরে আমারও গাছের সঙ্গে, ফুলের সঙ্গে প্রেম হয়ে গেছে। স্যার মারা গেলে আমার মধ্যে এমন এক শূণ্যতা তৈরি হয়েছিল যে বলে বোঝাতে পারব না। এমন মানুষ শত বছরেও আর পাওয়া যাবে কি না জানি না।'

ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

পাখি ভাইয়ের মানিকগঞ্জের বাড়ি থেকে কালিগঙ্গা নদী মোটে ১৫ মিনিটের রাস্তা। তাদের পাড়ার নাম উত্তর সেওতা। বাড়ির ধারে একটা স্রোতস্বিনী খালও আছে। ছোটবেলায় সাঁতার কেটেছেন অনেক, মাছও কম ধরেননি। ১৯৭৮ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। তারপর পড়েছেন দেবেন্দ্র কলেজে। গাছ, ফুল, পাখি, লতাপাতার সঙ্গেই বেড়ে উঠেছেন। তাই আরবরি কালচার বিভাগে কাজ পাওয়ায় তিনি খুশি হয়েছিলেন, বেশি খুশি হয়েছিলেন যখন রমনা পার্কই হলো তার কাজের জায়গা। তখনকার প্রধান বৃক্ষ পালনবিদ মানে চিফ আরবরিকালচারিস্ট জনাব আবু মোজাফ্ফর হোসেন তাকে হাতে হাতে কাজ শিখিয়েছেন। বীজ কীভাবে সংরক্ষণ করতে হয়, গর্ত কতটা লাগে কোন গাছের জন্য, গাছের গোড়া কীভাবে কতটা পরিষ্কার করতে হয়, কোন গাছে কোন পোকা লাগে আর কী ওষুধে বিনাশ করতে হয়, গাছ লাগাতে হয় কতটা দূরে দূরে ইত্যাদি সব মোফাফফর স্যার হাতে ধরে শিখিয়েছেন পাখি ভাইকে। পাখি ভাই বলছিলেন, 'মোজাফ্ফর স্যারও প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। সাভার স্মৃতিসৌধ, বঙ্গভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাগান তিনি সাজিয়েছেন। তার সরকারি বাসভবন ছিল মৎস্যভবন থেকে সেগুনবাগিচার দিকে গেছে যে রাস্তাটি সেটির ওপরে। রাস্তা করার সময় তা ভেঙে ফেলা হয়, মনে হয় নব্বইয়ের দশকে। মৎস্যভবনের উল্টোদিকে যে তেলের পাম্প আছে তার পাশেই প্রধান বৃক্ষপালনবিদের কার্যালয়।'

ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

পাখি ভাই সাহচর্য পেয়েছেন আরেকজন প্রধান বৃক্ষ পালনবিদের, তার নাম ফজলুর রহমান ভূঞা। তার আরেক পরিচয় তিনি ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের শ্বশুর। মেয়ে পক্ষের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল লেডিজ ক্লাবে, পাখি ভাই অনুষ্ঠান তত্ত্বাবধান করেছিলেন। পাখি ভাই জানেন মুঘল আমলে এ উদ্যানটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আরো বলেছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পনি আমলে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস ডয়েসের কথা। ডয়েস ১৮২৫ সালে কয়েদীদের দিয়ে রমনার জঙ্গল পরিষ্কার করিয়েছিলেন। কয়েক মাস ধরে চলেছিল সে পরিষ্কার অভিযান। পাখি ভাইয়ের কথার সূত্র ধরে এবার ইতিহাসের পাতা উল্টানোর সময় চলে এলো।

ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

দিল্লীর মসনদে তখন জাহাঙ্গীর

উইকিপিডিয়া থেকে জানতে পারছি, উদ্যানটি ১৬১০ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। মুঘল সম্রাট আকবরের পুত্র  জাহাঙ্গীর তখন ছিলেন দিল্লীর গদীতে। তার সুবাদার ইসলাম খাঁ ঢাকাকে রাজধানী নির্বাচন করেন যদিও ঢাকার গুরুত্ব সুলতানি আমলেও ছিল কারণ সুলতানদের রাজধানী সোনারগাঁও থেকে জলপথে ঢাকার যোগাযোগ সহজ ছিল। কেউ কেউ বলেন, ঢাকা তখন গাছপালায় আচ্ছাদিত বা ঢাকা ছিল বলে ইসলাম খাঁ এর নাম ঢাকা রেখেছিলেন। আরো বলা হয়, রমনার নাম মুঘলরাই রেখেছিলেন। তাদের মতে, রমনা একটা ফার্সি শব্দ যার অর্থ লন আর লন মানে হলো জঙ্গলের মাঝে সবুজ ঘাসে মোড়ানো প্রান্তর। তবে দ্বিমত আছে এখানে। ভিন্নমতাবলম্বীরা বলেন, রমনা একটি সংস্কৃত শব্দ। এর অর্থ রাষ্ট্রীয়ভাবে রক্ষিত একটি স্থান যেখানে নগরবাসী রমন বা আনন্দ ভ্রমণে বা শিকার করতে যায়। হবসন-জবসন অভিধানও বলছে, রমনা হলো বিনোদনের কেন্দ্র। ভারতবর্ষে আরো অনেক উদ্যানকেও তাই রমনা বলে ডাকা হতো। আর ওই সবগুলো রমনাই নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর ছিল, সেগুলোয় পানির ফোয়ারাও থাকত। আদিতে আমাদের রমনা পুরানো হাইকোর্ট থেকে শুরু করে এখনকার মিন্টো রোড, শাহবাগ, নীলক্ষেত, কার্জন হল, মেডিক্যালসহ পুরোটা জুড়ে ছিল।' গ্লিম্পসেস অব ওল্ড ঢাকা' গ্রন্থের লেখক সৈয়দ মুহম্মদ তৈফুরের মতে, পুরনো হাইকোর্ট ভবন থেকে এখনকার সড়ক ভবন পর্যন্ত মোগলরাই বাগান তৈরি করিয়েছিলেন যার নাম ছিল বাদশাহী বাগান। ১৯০৩ সালে তৈফুর হাইকোর্ট এলাকায় একটি ফটক দেখতে পেয়েছিলেন, তিনি ধারণা করেছিলেন সেটি বাদশাহী বাগানের ফটক। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সময় নতুন রাজধানী নির্মাণকালে ফটক ও অন্যান্য স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়। মুঘল আমলে রমনার আরো ‍উত্তরের দিকটা ছিল জঙ্গলে ঢাকা। এর ভিতর দিয়ে চলে গিয়েছিল একাধিক খাল। মুঘল আমলের পর চার্লস ডয়েসের আগে পর্যন্ত রমনাও জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে পড়ে।

ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

লেকটি যুক্ত ছিল মতিঝিলের সঙ্গে

পাখি ভাই বলছিলেন রমনা পার্কের ভিতরে যে বড় লেকটি আছে সেটির এক দিক মতিঝিলের সঙ্গে অন্যদিকটি হাতিরঝিলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। নবাব পরিবারের সদস্যরা এ পথে নৌবিহার করত।  তেষট্টি একর জায়গাজুড়ে রমনা পার্ক। পাখি ভাই তার সময়ে অনেক কাক, টিয়া, ঘুঘু, বাদুড়, চিল, দোয়েল, হরিয়াল, চড়ুই, শালিক, বাবুই পাখি দেখেছেন পার্কে। তক্ষকের ডাকও শোনা যায় মাঝে মধ্যে। কেন মানুষ রমনা পার্কে আসবে জানতে চাইলে পাখি ভাই বলেছেন, প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে, বিশুদ্ধ অক্সিজেন পেতে, গাছের নাম জানতে আসবে রমনা পার্কে। এখানে অনেক অনেক বয়স্ক গাছ আছে। লেকের পশ্চিম পাড়ের রেইন-ট্রি গাছটা দিয়েই শুরু করা যাক। এ গাছটা এতো মোটা যে দশজন মিলেও বেড় দিতে পারবে না। এর প্রস্থ দেখে মনে হয় এটি মুঘল আমলের। এরপর পূর্ব দিকের উদয়ন গেটের (রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধার উল্টোদিকে) কাছে আছে বড় একটি কুসুম গাছ। তারপর মহিলা অঙ্গনের (উদয়ন গেট থেকে কাছে) পাশে আছে বৌদ্ধ নারকেল। এর উচ্চতা ৭০-৮০ ফুট। তবে এটি নামেই নারকেল, আসলে মেহগনির মতো, এর ফলও হয় গুচ্ছ। এরপর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের কাছ দিয়ে মানে উত্তর দিকের গেট দিয়ে ঢুকলে পাবেন প্রাচীন বট। কাছাকাছি আরো আছে ৭টা মাইলাম বা বৈলাম বৃক্ষ।  এর পাতা লিচু গাছের মতো। টক টক আমের মতো ফল হয় বলে এর নাম বুঝি মাইলাম।

আছে কিছু বিরল বা দুর্লভ গাছও

কাকরাইল মসজিদ গেট থেকে কিছুদূর এগোলে পাওয়া যায় সেগুনতলার মাঠ যা আবার রানী এলিজাবেথ মাঠের কোনায় আর শিশু উদ্যানেরও মিলনস্থল; সেখানটায় আছে অঞ্জন। পাহাড়ি মাটিতে জন্মে অঞ্জন, গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ, এর পাতা লম্বায় সাড়ে তিন ইঞ্চি পর্যন্ত হয়, পাতা গাঢ় সবুজ চামড়ার মতো। ফুলের রঙ হয় বেগুনি। অঞ্জন একটি দুর্লভ গাছ। পাখি ভাই শুনেছেন এ গাছ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা লিখেছেন। এছাড়া ২টি রুদ্রপলাশ পাওয়া যাবে অস্তাচল গেটের কালভার্ট পার হয়ে। এছাড়া ওই চার রাস্তার ধারে ৫টি কর্পূর গাছ পাওয়া যাবে। অস্তাচল গেট দিয়ে ঢুকে ডানদিকে পাওয়া যাবে মরু অঞ্চলের গাছ বাওবাব। একহারা গড়নের এই গাছের মাথায় ঝোপঝাড়ের মতো ডালপালা ছড়ানো থাকে। এরা ৭৫ ফুট উঁচুও হতে পারে। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার, এই গাছ বাঁচতে পারে কয়েক হাজার বছর। এছাড়া বন আষাঢ় নামের একটি দুর্লভ গাছ মিলবে রমনা রেস্টুরেন্টের কাছে মীরজা আব্বাস ছাউনি ব্রিজ পার হয়ে। আর নার্সারির ভিতরে পাবেন স্কারলেট করডিয়া। পাখি ভাই বলছিলেন, 'স্কারলেট করডিয়ার বাংলা নাম নেই তবে হিন্দিতে একে বলে লাল বুখার। লাল লাল ফুল হয় এর। একটা কথা বলে রাখি, রমনার বটমূলে যেখানে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হয় সেটি কিন্তু পাকুড় গাছ। পার্কে এখন ১৭৮ প্রজাতির ৫০০০ গাছ আছে। আরো অন্তত ১০০ প্রজাতির গাছ লাগানোর জায়গা আছে। রাস্তা-ঘাট ও নানা রকমের স্থাপনা তৈরির চেয়ে গাছ লাগানোর দিকে কর্তৃপক্ষের মনোযোগী হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আগে পার্কের রাস্তা ছিল পিচঢালা। এখন ওয়াকওয়েগুলো কংক্রিট বাঁধানো হচ্ছে তাতে ঝুঁকি বাড়ে। বৃষ্টিতে হাঁটার সময় পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নতুন কিছু করার আগে সবদিক ভালো করে ভেবে নেওয়া দরকার।'

ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

পার্কের ভিতর খেলাধুলার জায়গা, পাকা ব্রিজ,  সংগঠনের মঞ্চ, পাকা স্থাপনা ইত্যাদি বেশি করার পক্ষে নন পাখি ভাই। তিনি প্রকৃতির বাড়ি হিসাবেই দেখতে চান রমনা পার্ককে। পার্কে দিনে দেড়-দুই হাজারের বেশি লোক ঢোকারও পক্ষে নন পাখি ভাই । তাই জানতে চাইলাম, দুই কোটি লোকের এ শহরে মানুষ তবে নিঃশ্বাস নেবে কোথায়? 
পাখি ভাই: গুলিস্তানের ওসমানী উদ্যানের আরো যত্ন নেওয়া দরকার। সেটাকে ভালো করার যথেষ্ট সুযোগ আছে। এছাড়া কেরানীগঞ্জে, পূর্বাচলের দিকে নতুন নতুন পার্ক করা দরকার। দেখুন ধানমন্ডি লেকের পাড়েও কিন্তু আরবরি কালচারের বাগান ছিল কিন্তু নতুন নতুন সব কর্মকাণ্ডে সেটি আর থাকল না। এভাবে শহরবাসীর নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা বন্ধ করা হলে মানুষ ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, বিরক্ত আর খিটখিটে হয়ে উঠতে পারে।

প্রশ্ন: রমনা পার্কে আপনার কাজ কি ছিল?

পাখি ভাই: আমি ছিলাম সুপারভাইজার। মালিদের কাজ দেখাশোনা করতাম। ঘাস কাটা, জঙ্গল কাটা, ফুলের বেড (সাধারণত ২০ ফুট লম্বা, ৩ ফুট চওড়া ও দেড় ফুট গভীর হয়ে থাকে) ইত্যাদির দেখভাল করতাম। ফুলের বেডে ডালিয়া, ক্রিসেনথেমাম, হলিহক বা লুপিন্স লাগাতাম। আশির দশকেও কিন্তু ঢাকায় ফুল বিক্রির একমাত্র জায়গা ছিল রমনা পার্ক। ব্যক্তিগতভাবে হাইকোর্টের ওখানে ফুল বিক্রি করত শফির বাবা। শফির বংশধরেরা সম্ভবত এখনো ফুল বিক্রির কাজই করে। পরে নব্বইয়ের দশকে ঢাকা ক্লাবের উল্টোদিকে মালঞ্চ নামের একটা দোকান হলো। তারপর ধীরে ধীরে আরো অনেকগুলো। অথচ আগে গোটা ঢাকাতে ফুল পাওয়া যেত কেবল এই রমনা পার্কেই।

ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

প্রশ্ন: গাছের বীজ কি নিজেরা তৈরি করতেন?

পাখি ভাই: প্রথম দিকে স্যারেরা (ঊর্ধ্বতন কর্তা) বীজ সংগ্রহ করে আমাদের দিয়েছেন। তারপর থেকে আমরা মানে সুপারভাইজার, মালিরা বীজ তৈরি ও সংরক্ষণ করতাম।
আরবরি কালচার বিভাগটি পিডব্লিউডি ছাড়া আর কোনো সরকারি দপ্তরের কি আছে?
পাখি ভাই: সড়ক ও জনপথ এবং সিটি কর্পোরেশনের আছে।

বাগান করা নিয়ে কোনো স্মরণীয় ঘটনা আছে আপনার?

পাখি ভাই: সেগুনবাগিচায় যে ইব্রাহিম মেডিক্যাল কলেজ হয়েছে সেখানে বাগান করা হবে। আমাকে ডায়াবেটিক সমিতির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. আজাদ খান ডেকে পাঠালেন। আমি রঙন, অ্যালামান্ডা, ভেলভেট, গন্ধরাজ দিয়ে বাগান সাজিয়ে দিলাম। এই পদ্ধতিটা আমি শিখেছিলাম দ্বিজেন স্যারের কাছ থেকেই। স্যার বলতেন, একই গাছ পরপর না দিয়ে মানে একই রঙের ফুলগাছ না দিয়ে লালের পর নীল তারপর হলুদ রঙের ফুলের গাছ দিয়ে বাগান সাজালে বৈচিত্র্য আসে। আমি ওই পদ্ধতি দিয়ে ইব্রাহিম মেডিক্যাল কলেজের বাগান সাজালাম। কলেজের প্রিন্সিপাল ফরিদউদ্দিন সাহেব খুব খুশি হয়েছিলেন। কলেজের কোনো একটা স্মরণিকায় বাগানের ছবি দিয়ে প্রচ্ছদ করা হয়েছিল। আমার এটা খুব মনে পড়ে।

ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

রমনা পার্কের পুরোনো কোনো স্মৃতি আছে

পাখি ভাই: একটা সময় ছিল যখন ঢাকারও বেশি বাড়িতে টিভি ছিল না। রমনা পার্কের কিছুক্ষণ নামের বিশ্রামাগারের কাছে একটা টিভি ছিল। অনেক লোক ভিড় করত টিভি দেখতে। আমরাও ওখানেই দেখতাম । টিভিতে বন্যপ্রাণী বা প্রকৃতি বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখালে মনোযোগ দিয়ে দেখতাম।

একটা পুরোনো মহুয়া গাছ ছিল রমনা পার্কে। বাইরে থেকে বোঝা যায়নি কিন্তু ভিতরে ফোঁপরা হয়ে গিয়েছিল গাছটা মানে উইয়ে কেটেছিল। গেল ২০১৮ সালে এক ঝড়ে গাছটা গোড়াশুদ্ধ উপুড় হয়ে পড়ল। অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন পাখি ভাই। আজো পার্কে গেলে মহুয়া গাছটির জন্য কিছুক্ষণ দাঁড়ান, ভাবেন সেটির কথা।

এলপিআরে আছেন এখন পাখি ভাই। পেনশনে যাবেন ডিসেম্বরে, এই সময়ে তার চাওয়া একটাই, কংক্রিটের ভিড় না বাড়ুক পার্কের ভিতর বরং গাছেরা, পাখিরা হেসে খেলে থাকুক শহরের মধ্যকার অন্তত এই একটা জায়গায়। 
 

Related Topics

টপ নিউজ

রমনা পার্ক / রমনা বটমূল / প্রকৃতি

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • বাংলাদেশকে নিজের বাড়ি বানিয়েছেন যে দক্ষিণ কোরিয়ান উদ্যোক্তা
  • নরবলি প্রথার এক গা ছমছমে স্মৃতিচিহ্ন
  • তদন্ত শেষে সাকিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিসিবি
  • মদ থেকে মধু: এপি ঢাকার দীর্ঘ অভিযাত্রার গল্প   
  • বিপিসি লোকসানে, সত্যিই?
  • সঞ্চয়িতা: রেস্তোরাঁ নয়, ঘরোয়া পরিবেশে মিলবে ঘরোয়া খাবার 

Related News

  • শহরের প্রতিটি বাড়ির ছাদ হোক একটুকরো উদ্যান 
  • রমনা বটমূলে হামলা: নাম বদলে ইমাম সেজে ১৪ বছর পলাতক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার
  • দুই বছর বিরতির পর রমনা বটমূলে বর্ষবরণ উৎসব
  • অধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকছে রমনা পার্ক
  • কেমন হবে মানুষবিহীন পৃথিবী? 

Most Read

1
অর্থনীতি

বাংলাদেশকে নিজের বাড়ি বানিয়েছেন যে দক্ষিণ কোরিয়ান উদ্যোক্তা

2
ফিচার

নরবলি প্রথার এক গা ছমছমে স্মৃতিচিহ্ন

3
খেলা

তদন্ত শেষে সাকিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিসিবি

4
অর্থনীতি

মদ থেকে মধু: এপি ঢাকার দীর্ঘ অভিযাত্রার গল্প   

5
অর্থনীতি

বিপিসি লোকসানে, সত্যিই?

6
ফিচার

সঞ্চয়িতা: রেস্তোরাঁ নয়, ঘরোয়া পরিবেশে মিলবে ঘরোয়া খাবার 

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - [email protected]

For advertisement- [email protected]

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab