কীভাবে সহজেই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবেন? অনুসরণ করুন ‘স্টার’ ফর্মুলা!

দৈনন্দিন জীবনে প্রায়ই আমাদের ছোট-বড় নানা সিদ্ধান্ত নিতে হয়। প্রতিদিন কী পোশাক পরবো, কী খাব- থেকে শুরু করে কর্মস্থল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মানুষে-মানুষে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিতে হয় গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমাদের মধ্যে বহু মানুষ আছেন যারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। আর গুরুত্বপূর্ণ বা বড় সিদ্ধান্তের বেলায় তো এটা তাদের জন্য মহাযন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তাহলে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এই সমস্যা দূর করার উপায় কী? অনেক তাত্ত্বিক হয়তো এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায়, সেসব পরামর্শ শুধু বইয়ের পাতায়ই কার্যকর, বাস্তবে না। বাস্তবে মানুষ এত জটিল জটিল সব পরিস্থিতিতে পড়ে যে সেখানে তত্ত্বকথা মেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না। এই যেমন- সুনামি, ভূমিকম্প, বন্যা, ভবন-ধ্বস ইত্যাদি দুর্যোগপূর্ণ সময়ে প্রতিটি সিদ্ধান্তই গুরুতর মনে হয়। তখন এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয় যা সত্যিই কোনো পার্থক্য তৈরি করবে।
লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লরেন্স অ্যালিসনের ভাষ্যে, "বাস্তব জীবনে, স্বাভাবিক সময়ে মানুষের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর মাত্র ১ শতাংশ হয়তো সত্যিই তাদের জীবন বদলে দেয়।" সঙ্গীর প্রতি অনুগত থাকবো কি থাকবো না, কখন সন্তান নিবো, ক্যারিয়ারে পরিবর্তন আনবো কি আনবো না- এসব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বেলায় অনেকেই আতঙ্কিত থাকেন। তারা ভাবেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের পারফরমেন্স খুবই বাজে। তারা অস্থির হয়ে পড়েন এবং বারবার নিজেকে প্রশ্ন করেন, আমি কী সঠিক সিদ্ধান্ত নিলাম? আমি আসলে কী অর্জন করতে চাই?
সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বেশিরভাগ সময়ই মানুষই এর গুরুত্ব স্পষ্টভাবে বুঝতে ব্যর্থ হয়। তারা তখন সেটিকে আকর্ষণীয় এক সুযোগ হিসেবে দেখে, কিন্তু এটি অর্জন করতে কী করতে হবে, তারা তা জানেনা। ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের নিল শর্টল্যান্ড মনে করেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে 'অনুশোচনা' একটি বড় ভূমিকা রাখে। ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে অনুশোচনার ভয়ে অনেকে সিদ্ধান্ত নিতেই ভয় পান বা পিছিয়ে যান, যা পরবর্তীতে তাদের জন্য আরো বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তাহলে কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেওয়ার গোপন উপায় আসলে কী? অ্যালিসন-শর্টল্যান্ড জুটি মিলে 'স্টার' (STAR) নামক একটি ফর্মুলা নিয়ে এসেছেন যা আপনাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।
১। পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন থাকা
স্টার এর ইংরেজি বানানের প্রথম অক্ষর 'এস'-কে Situational Awarness বা 'পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন থাকা' হিসেবে অভিহিত করেছেন লেখকদ্বয়। কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এটি কী দাঁড়াবে- সে সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। শর্টল্যান্ড বলেন, আমাদের মস্তিষ্ক একটা পানিভর্তি গ্লাসের মতো। আপনি কোন পরিস্থিতিতে আছেন তা বোঝার জন্য আগে কিছু পানি সরাতে হবে, অর্থাৎ মাথাটা ফাঁকা করতে হবে, নিজেকে সময় দিতে হবে। তারপর আপনি বুঝতে পারবেন কি ঘটছে।
২। সময়
দ্বিতীয় অক্ষর 'টি' দিয়ে টাইম বা সময় বুঝানো হয়। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দেখতে হবে আপনার হাতে কতখানি সময় আছে। আর যদি বাঁধাধরা সময়ের ব্যাপার না থাকে (যেমন- নতুন চাকরি খুঁজবো কিনা, অন্য দেশে চলে যাবো কিনা), তাহলে খেয়াল করতে হবে- আপনি যেন বেকার বসে না থাকেন, অর্থাৎ, সব পেয়ে গেছি ভেবে না বসেন। জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত, তাই কোনোকিছুর পেছনে লেগে থাকতে চাওয়াও এক ধরনের সিদ্ধান্ত।
৩। অভিযোজন ক্ষমতা
তৃতীয় অক্ষর 'এ' দিয়ে adaptation বা অভিযোজন ক্ষমতা বোঝায়। যারা ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পটু, তারা মন খোলা, হাসি –খুশি এবং রোমাঞ্চ ভালোবাসেন। তারা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সুযোগ অনুসন্ধান করেন। যেমন- কেউ একজন নতুন চাকরির প্রস্তাব পেলেন- প্রথমে মনে হবে এই চাকরিই নিয়ে নেওয়া ভালো। কিন্তু সুযোগ কাছে এসেছে বলেই অপ্রয়োজনীয় কাজ করা যাবে না। আপনার নিজেকেই নিজে বোঝাতে হবে, নিজের সাথে তর্ক করতে হবে, তার পরে হ্যাঁ বা না সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
৪। পুনরায় দেখা
চতুর্থ অক্ষর 'আর' দিতে Revision বা পুনর্বার দেখা বুঝানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে মানে এই নয় যে আপনি তা ফিরে দেখতে পারবেন না। অ্যালিসন ও শর্টল্যান্ড সিদ্ধান্ত নেওয়াকে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক বিষয় হিসেবে দেখাতে চান, যা নিজের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে না। তারা ঝুঁকিগুলো দেখাতে চান, যাতে মানুষ বুঝতে পারে- মনকে নিজের ইচ্ছামতো যেতে দিলে বিপদ হতে পারে।
তবে অ্যালিসন-শর্টল্যান্ড একমত যে- ব্যক্তিত্বের কারণে কেউ কেউ বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা উপভোগ করেন। তাদের নিখুঁতভাবে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা (ম্যাক্সিমাইজার) ও সন্তুষ্টি মিলে মাঝামাঝি একটি 'ভালো সিদ্ধান্ত' তৈরি হয়। তবে ম্যাক্সিমাইজারদের কাছে একটা কাজের জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করা মানে আরেকটার সুযোগ হারিয়ে ফেলা।
শুরুতেই বলা হয়েছে, ভালো সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে হাতে থাকা একটা সম্ভাবনা বাদ দিয়ে হয়তো অন্যটি ধরতে হবে। আপনি যত দ্রুত ও দক্ষভাবে অন্যটি ছাড়তে পারবেন, ততই আরো ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরজা খুলে যাবে।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান