ভিডিও গেম শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষতি করে নাকি সাহায্য?
সন্তান ভিডিও গেম খেলে বলে যেসব মা-বাবার উদ্বেগের শেষ নেই, তাদের জন্য সুখবর। গেমিং শিশুদের মস্তিকের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং মস্তিষ্ক গঠনে বেশ সহায়ক। এক দশকেরও বেশি সময় গেমিংয়ের ওপর বিভিন্ন গবেষণা নিয়ে করা পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণা পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে, কিশোর এবং তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক গেমাররা বেশ কিছু জ্ঞানভিত্তিক কার্যক্রমে নন-গেমারদের ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি ভিজ্যুয়াল বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে, চলমান বস্তুতে মনোযোগ ধরে রাখতে এবং লুকোনো বস্তুর অবস্থান মনে রাখতে বেশি সক্ষম হয় নন-গেমারদের তুলনায় গেমাররা।
এর আগেও বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কের বাইরের ধূসর স্তর যা তথ্য প্রক্রিয়ার কাজ করে, গেমারদের মস্তিষ্কে এর পরিমাণ বেশি থাকে।
পর্যালোচনাটিতে বলা হয়েছে, টিকটকসহ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, এরকম অ্যাপগুলো বরং গেমিংয়ের তুলনায় মস্তিষ্কের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। তবে এসব ভালোদিকও অতিরিক্ত গেমিংয়ের বাজে দিকের কারণে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ফিনল্যান্ডের মনোবিজ্ঞানী মোনা মোইসালা বলেছেন, 'গেমিংয়ের ইতিবাচক ফলাফলগুলো তাদের মধ্যে দেখা গেছে, যারা গেমিংয়ের পেছনে অল্প সময় ব্যয় করে।'
২০১৭ সালে গেমিংয়ের ওপর একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেন ড. মোইসালা। সমীক্ষায় ড. মোইসালা ও তার সহকর্মীরা দেখেন, যে তরুণরা "কল অফ ডিউটি" এর মতো শ্যুটার গেম বা "মারিও কার্ট"-এর মতো রেসিং গেম বেশি খেলে- স্মৃতিশক্তি পরীক্ষায় তারাই বেশি এগিয়ে।
তবে, পর্যালোচনাটিতে গেমার ও নন-গেমারদের ভেতর কোনো তুলনা করা হয়নি। গেমিংয়ের সঙ্গে অতিরিক্ত জড়িয়ে পড়েছেন এমন কেউও এ পর্যালোচনার অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
ইউরোপিয়ান সাইকোলজিস্ট নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় মনোবিজ্ঞানী মোইসালা বলেন, গেমিং যে সন্তানদের মস্তিষ্ককে 'জোম্বি' বানিয়ে দেয় তা ঠিক নয়, এ নিয়ে মা-বাবার চিন্তার কিছু নেই, কেননা এ তথ্যটি সঠিক নয়। তবে তার মানে এই নয় যে, যারা গেমিংয়ের সঙ্গে অভ্যস্ত নয়, তাদের অভিভাবকরাও উন্নতির জন্য নিজ সন্তানকে ভিডিও গেম খেলতে বলবেন।
১৩ থেকে ২৪ বছর বয়সী ১৬৭ জনের ওপর একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। তাদের এমআরআই মেশিনে শুয়ে থাকা অবস্থায় কিছু টেস্ট করানো হয়। এরমধ্যে যারা গেমিংয়ে অভ্যস্ত তারা অল্প সময়ে নির্ভুল উত্তর দিয়েছে।
যেসব বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন
ড. মোইসালা বলেন, 'অনেকেই দিনের ভেতর ৮ ঘণ্টা গেমিং নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আবার অনেকে দিনের মধ্যে কেবল ১ ঘণ্টা গেমিংয়ে দেয়।'
শিশুর ঘুম, শারীরিক কার্যক্রম, পুষ্টি ও পড়াশোনা গেমিংয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিনা, অথবা গেমিং ছাড়াই শিশু বন্ধুদের সঙ্গ উপভোগ করছে কিনা সেসব খতিয়ে দেখার বিষয়।
আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের মতে, সম্ভাব্য গেমিং ডিসঅর্ডারের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে, গেমিং বাদে অন্যান্য সময়ে বিরক্তি, আগে পছন্দ করতো এমন বিষয়গুলোর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা এবং পরিবারের সদস্যদের কাছে গেমিংয়ের সময় লুকোনো।
গেমিং যদি অন্যান্য কার্যক্রমের প্রতি শিশুর আগ্রহ সরিয়ে ফেলতে ভূমিকা রাখে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই শিশুদের প্রতি নজর দিতে হবে। তখন থেরাপি নেওয়া প্রয়োজন।
- সূত্র- দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল