মাঙ্কিপক্স নাম কেন হলো? বানরের সঙ্গে কী সম্পর্ক? আর উপসর্গ?

ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ১১টি দেশে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ৮০জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। সাধারণত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকায় ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। ২০০৩ সালের পর প্রথমবারের মতো ওই এলাকার বাইরেও ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি নাইজেরিয়া থেকে যুক্তরাজ্যে যাওয়া এক ব্যক্তি থেকে দেশটিতে সংক্রমণ ছড়ানো শুরু হয়। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ২০ জনের আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে।
আক্রান্তের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে রোগটি ছড়াতে পারে। আক্রান্তের সংস্পর্শে এলে অন্তত তিন সপ্তাহ আইসোলেশনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মাঙ্কিপক্স কী?
মাঙ্কিপক্স একটি বিরল রোগ। মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকায় আক্রান্ত প্রাণীর মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ায়। স্মলপক্সের সংক্রমণ অর্থপক্স জাতীয় ভাইরাস মাঙ্কিপক্সের জন্য দায়ী।
মাঙ্কিপক্সের উপসর্গও অনেকটা স্মলপক্সের মতো। র্যাশ, শরীরে লাল রঙের দাগ হয় দুই রোগেই। শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণের পাঁচ- ১৩ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা যায়।
তবে অনেক ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দিতে ২১ দিনের মতোও সময় লাগতে পারে। পিসিআর টেস্টিংয়ের মাধ্যমে রোগটি শনাক্ত করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এখন পর্যন্ত ৮০টি দেশে এ রোগে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
বর্তমানে যুক্তরাজ্য, স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন ও কানাডাসহ ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ১১টি দেশে রোগটির সংক্রমণ শুরু হয়েছে।
মাঙ্কিপক্সের কোনো ভ্যাকসিন নেই। তবে মাঙ্কিপক্সের চিকিৎসায় স্মলপক্সের ভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধে ৮৫ শতাংশ কার্যকর।
নাম মাঙ্কিপক্স কেন?
মাঙ্কিপক্স শুধু বানর থেকে না ছড়ালেও এর নামকরণের সঙ্গে বানরেরে সম্পর্ক আছে।
যুক্তরাজ্যের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্যমতে, ১৯৫৮ সালে এক গবেষণাগারের বানরদের মধ্যে প্রথম এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। সেখান থেকেই এই নামকরণ করা হয়। ১৯৭০'র দশকে কঙ্গোতে বিশ্বের প্রথম মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়।
বানর ছাড়াও কাঠবিড়ালী, ইঁদুর জাতীয় প্রাণী এ রোগের বাহক হতে পারে।
মাঙ্কিপক্সের উদ্ভব
মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকায় প্রাথমিকভাবে রোগটির প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ১৯৭০'র দশকে কঙ্গোতে ৯ বছর বয়সী এক শিশুর প্রথম এই রোগ শনাক্ত হয়।
নাইজেরিয়াসহ আফ্রিকার ১১টি দেশে এ রোগ দেখা যায়। বছরে মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত হয় আনুমানিক ৩ হাজার জন।
সাধারণ আফ্রিকার দেশগুলোর বাইরে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ দেখা যায় না। এর আগে ২০০৩ সালে আফ্রিকার বাইরে সংক্রমণ ছড়ায়। ঘানা থেকে টেক্সাসে ৮০০ প্রাণী নিয়ে যাওয়ার পর সংক্রমণের ঘটনা ঘটে।
প্রাণীগুলোকে কিছু কুকুরের পাশে রাখা হয়েছিল, ওই কুকুরগুলোর মধ্যে সংক্রমণ ছড়ায়। কুকুরগুলোকে বিক্রি করার পর মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানো শুরু হয়।
সেবার যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে ৪৭ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়।
মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ কী?
ভাইরাস সংক্রমণের পাঁচ থেকে ২১ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়।
প্রাথমিক উপসর্গগুলো:
- শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি
- মাথাব্যথা
- শরীরের মাংসপেশীতে ব্যথা
- কাঁপুনি
- অতিরিক্ত ক্লান্তি
- লসিকাগ্রন্থি (লিম্ফনোড) ফুলে যাওয়া
সাধারণত মুখে র্যাশ দেখা যায়, ফুসকুড়ি ওঠে, অনেকটা ফোসকার মতো। দেখতে চিকেনপক্সের মতোই। সাধারণত মুখেই ফুসকুড়ি ওঠা শুরু হয়, পরে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।