পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি প্রতিটি নিয়ম ভঙ্গ করেন, আপনারও ভাঙা উচিত!
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক। তবে শুধু বিত্তের দিক থেকেই নয়, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকাতেও উপরের দিকেই থাকবেন।
অন্য বিলিয়নিয়ারদের চেয়ে ভিন্নরকম চালচলন মাস্কের। বিশেষত টু্ইটারে তিনি পুরোই 'মজার' এক মানুষ। প্রায়ই এমন সব কাজ করে বেড়ান যাতে মানুষ বিস্মিত হয়ে যায়। তার কাছ থেকে কি তবে অন্য ধনকুবেরদের কিছু শেখার আছে? চলুন জেনে নেওয়া যাক, ইলন মাস্কের ভিন্নরকম কয়েকটি জীবনাদর্শ নিয়ে।
শুরু থেকেই আইকন
১৯৯৫ সাল। তখন কেবল ইন্টারনেট পশ্চিমে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যাবসায়গুলো ধীরে ধীরে সাফল্য পেতে শুরু করেছে। সে সময় মাস্ক জিপ২ নামের একটি ইন্টারনেট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।
এর চার বছর পরে জিপ২ বিক্রি করে মিলিয়নিয়ার বনে যান মাস্ক। ৩০৭ মিলিয়ন ডলারে ওয়েবসাইটটি বিক্রি হয়, তার থেকে ২২ মিলিয়ন ডলার পকেটে পোরেন মাস্ক।
সিলিকন ভ্যালি নিয়ে তখন ক্রমশ মানুষের মধ্যে আগ্রহ ও বিস্ময় বাড়ছিল। সেসময় নিজের ১০ লাখ ডলারের ম্যাকলারেন এফ১ স্পোর্টস কার দেখানোর জন্য গণমাধ্যম সিএনএনকে নিয়ে আসেন মাস্ক।
সিলিকন ভ্যালিতে কী ধরনের কাজ হতো- তা নিয়ে ওই সময় সাধারণ মানুষের পরিষ্কার কোনো ধারণা ছিল না। মাস্ক যখন একজন মিলিয়নিয়ার হিসেবে স্পোর্টস কার নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে এলেন, তখন খুব দ্রুতই সাফল্যের আইকনে পরিণত হলেন তিনি।
হাল আমলে সাফল্য প্রকাশে পপ-কালচারে অন্তর্ভুক্ত হতে পারাটা ভীষণ জরুরি। মাস্ক সেটা শুরু থেকেই করে দেখিয়েছেন।
ব্যবসা যখন ব্যক্তিগত জীবনেরই অঙ্গ
সাধারণভাবে ভাবতে গেলে ব্যবসাকে ব্যক্তিগত জীবনের সাথে জুড়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু মাস্ক এ নিয়মটিও ভেঙে দিয়েছেন। টেসলা বা স্পেসএক্সকে মাস্ক ছাড়া কল্পনাই করা যায় না।
তবে শুরুতে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছিলেন মাস্ক। প্রথমদিকের যাত্রায় নিজের দুই কোম্পানি- জিপ২ ও এক্সডটকম (পরে পেপ্যাল)- থেকে শীর্ষপদ হারিয়ে ফেলেন মাস্ক। তখন তিনি বুঝতে পারেন, ব্যবসার দুনিয়ায় কেউ চিরস্থায়ী নন।
তাই স্পেসএক্স ও টেসলা'র ক্ষেত্রে আর একই ভুল করেননি মাস্ক। নিজের ব্যক্তিত্বকে এসব কোম্পানির সাথে জুড়ে দিয়েছেন। তার ফলে তিনি ও তার কোম্পানিগুলো প্রায় অবিচ্ছেদ্য সত্তা হয়ে গেছে।
লক্ষ্য যখন অবিশ্বাস্য
একজন ভালো বস তার কর্মীদের জন্য সুস্পষ্ট লক্ষ্য ঠিক করে দেন। স্বভাবতই এসব লক্ষ্যগুলো ভালোভাবে চেষ্টা করলে অর্জন করা সম্ভব।
কিন্তু মাস্কের বেলায় এখানেও খামখেয়ালিপনা। তার লক্ষ্যগুলো অদ্ভুত রকমের শক্ত ও অবাস্তব। এই যেমন তার জীবনকালেই পৃথিবীর মানুষদের নিয়ে গিয়ে মঙ্গলে আবাস গড়ে তোলা।
এসব লক্ষ্য ঠিক করে মাস্ক যেমন তার কর্মীদের প্রেরণা যোগান, তেমনিভাবে তিনি সাধারণ মানুষকে ভিন্নভাবে ভাবতে শেখান। মাস্কের সাফল্যের পাল্লা এত ভারী এবং তার আচার-আচরণ একটাই রহস্যময় যে, এসব অবাস্তব লক্ষ্যগুলোকে উপহাস না করে মানুষ বরং মেনে নেয়।
একঘেয়ে জীবনকে 'না'
বিলিয়নিয়ার উদ্যোক্তাদের কাছে সফলতার চাবি হচ্ছে আলোচনার পাদপ্রদীপে কম থেকে নিজেদের উদ্দেশ্য সফল করার চেষ্টা করা। কিন্তু মাস্ক বরং সবসময় লাইমলাইটেই থাকতে চান।
সেজন্য মাস্ককে দেখা যায় আয়রন ম্যান-মুভির পার্টিতে উপস্থিত হতে। তাকে দর্শকেরা খুঁজে পান সাউথ পার্ক, দ্য সিম্পসন্স-এ। দ্য বিগ ব্যাং থিওরিতে মহাকাশচারী হাওয়ার্ড ওয়ালোউইটজের সাথে বাসন মাজতেও দ্বিধাবোধ করেন না ইলন মাস্ক।
এভাবে হালের জনপ্রিয় সব সিনেমা-সিরিজে একটুর জন্য দেখা দিয়ে নিজের ইমেজ গড়ে নিয়েছেন ইলন মাস্ক। যাবতীয় কাজের ভিড়ে এগুলোর জন্য সময় বের করতে মাস্কের কষ্ট হয় না। নিজের কোম্পানিকে লাইমলাইটে আনতে এসব কাজ করা যেতেই পারে।
মনের কথা গোপন নয়
নিজের সন্তানদের নাম রাখতে গিয়েও 'সৃজনশীলতার' পরিচয় দিয়েছেন মাস্ক। নিজের মনের কথাগুলো টুইট করতে দু্ইবার ভাবেন না তিনি। তার এক একটি টু্ইটে পুঁজিবাজারে ঝড় বয়ে যায়, বিটকয়েনের দাম ওঠানামা করে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে হিটলারে সাথে তুলনা থেকে শুরু করে, বার্নি স্যান্ডার্স যে এখনো জীবিত আছে তা মনে করা; সবকিছু টুইটারে উগরে দেন মাস্ক। তার টুইটে যেমন মিম থাকে, তেমনি স্পেসএক্স-এর সফলতার গল্পও থাকে। মাস্কের এসব আচরণ আসলে একটি বৃহত্তর মিডিয়া কৌশলের অংশ।
ইলন মাস্কের মতো ব্যক্তিরা সফল, কারণ তারা জীবনে চলার পথে প্রয়োজনে নিয়মের বাইরে গিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন। তবে এখানে নিয়ম ভাঙা মানে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা নয়, বরং কোনো কিছুকে বিদ্যমান পদ্ধতির বাইরে গিয়ে সম্পন্ন করা। এসব অপ্রত্যাশিত পথ অবলম্বন করার কারণেই, এমন ব্যতিক্রমীরা নতুন কিছু সৃষ্টি করতেও পারেন।
- সূত্র: এন্টারপ্রেনার ডট কম