Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • অন্যান্য
  • English
The Business Standard বাংলা
tbs
THURSDAY, JULY 07, 2022
THURSDAY, JULY 07, 2022
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • অন্যান্য
  • English
দুষ্প্রাপ্য বাংলা বইয়ের শেষ ভরসা কেন কল্লোল? 

ফিচার

রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
21 February, 2022, 10:10 pm
Last modified: 22 February, 2022, 11:50 pm

Related News

  • নীলক্ষেতে বইয়ের মার্কেটে আগুন
  • কাবুলি বইওয়ালা: দুই শত্রু, দুই প্রতিদ্বন্দ্বী
  • ফুটপাত থেকে ফেসবুক: প্রযুক্তি দুনিয়ায় হাবিব চাচার ঐতিহ্যবাহী বইয়ের দোকান

দুষ্প্রাপ্য বাংলা বইয়ের শেষ ভরসা কেন কল্লোল? 

বহু বইপ্রেমীর শেষ ভরসার নাম নীলক্ষেতের কল্লোল। শুধু বইপ্রেমী পাঠক নয়, আশেপাশের দোকানগুলোর কাছেও দুষ্প্রাপ্য বইয়ের একমাত্র ঠিকানা- কল্লোল বুক সেন্টার। 
রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
21 February, 2022, 10:10 pm
Last modified: 22 February, 2022, 11:50 pm
কল্লোল বুক সেন্টার। ছবি:রাফিয়া মাহমুদ প্রাত/ টিবিএস

সময়টা ১৯৯০-৯১ হবে। আবু ইসহাকের 'পদ্মার পলিদ্বীপ' বইটি তন্ন তন্ন করে খুঁজছেন আব্দুর রহিম(ছদ্মনাম)। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না। বহু দোকান খোঁজার কয়েক বছর পর অবশেষে একদিন ফোন এলো- নীলক্ষেতের কল্লোল বুক সেন্টার থেকে। বইটি খুঁজতে আসার সময় তার নাম্বার রেখে দিয়েছিল দোকানটি। বইটি পাওয়ার পরই তারা ফোন করে জানান আব্দুর রহিমকে। সে-ই থেকে রহিম সাহেবের ভরসার শেষ ঠিকানা, এই কল্লোল বুক সেন্টার। এরপর থেকে পুরোনো দিনের বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য বইয়ের খোঁজ করতে হলে, আর কোনো দিক না তাকিয়েই তিনি কল্লোলের দ্বারস্থ হন।       

এরকম বহু বইপ্রেমীর শেষ ভরসার নাম নীলক্ষেতের কল্লোল বইয়ের দোকান। শুধু বইপ্রেমী পাঠক নয়, আশেপাশের দোকানগুলোর কাছেও দুষ্প্রাপ্য বইয়ের একমাত্র ঠিকানা কল্লোল বুক সেন্টার। 

নেপথ্যের কাহিনী:

এই কল্লোলের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৫ সালে মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার হাত ধরে। কুয়েত থেকে ফিরে এর আগে কিছুদিন বইয়ের দোকানে কাজ করেছিলেন। এরপর নিজেই দোকান খুলে ফেললেন।  

শুরুটা হয় আইন বিষয়ক বই দিয়ে, কিন্তু এরপর শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রেরণায় বাংলা সাহিত্যের দিকে ঝোঁক বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে। বিশেষ করে, ছোটভাই মারুফ চৌধুরীর অনুপ্রেরণা তাকে অনেকদূর নিয়ে গেছে, এমনটাই মনে করেন লোকমান ভুঁইয়া। মারুফ চৌধুরী পড়তেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্যে। মারুফ চৌধুরীর বন্ধুবান্ধবরাও এখান থেকে বই কিনতেন। শুরুটা এমনি ছিল তার। 

সেখান থেকেই মূলত বাংলা সাহিত্যের প্রতি ধীরে ধীরে আগ্রহী হয়ে ওঠেন লোকমান হোসেন। 

"১৯৯৫ সালের দিকে, কেবলমাত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন বাংলা সাহিত্য খুলেছে, ফলে এ বিষয়ক বইগুলোর প্রচুর চাহিদাও তৈরি হয় তখন। কিন্তু বাজারে কোনো দুর্লভ বই পাওয়া যেত না সেসময়। সাত দোকান, দশ দোকান কেনো, ৫০টা দোকান খুঁজলেও একটি পদ্মাবতী খুঁজে পাওয়া যেত না।"  

এই অভাব ঘোচাতেই সচেষ্ট হয় কল্লোল, তারপর থেকে দিনে দিনে গ্রাহকদের আলোকবর্তিকা হয়ে কাজ করে আসছে এই কল্লোল বুক সেন্টার।    

পাঠকের চেয়ে নিজের ভালো লাগাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন বেশি:

শুরুটা মোটেই সুখের ছিল না লোকমান হোসেনের। একদিকে বাজারে তখন বইয়ের দুর্ভিক্ষ, অপরদিকে টাকার অভাব। তবু তিনি যেখানে যা পেয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে কিনে নিয়েছেন। কখনো রাস্তায় পড়া থাকা বই, কখনো কাগজ বিক্রি করা হকারদের থেকে, এভাবে বিভিন্ন জায়গায় যখন যা পেয়েছেন, ভালো মনে হলেই কিনে নিয়েছেন। আবার হিতৈষীরা নিজেরাই বই দিয়ে তাকে সাহায্য করেছেন। 

তবে বই সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তিনি পাঠকের চাহিদার থেকে নিজের ভালো লাগাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন বেশি। 

ছবি: রাফিয়া মাহমুদ প্রাত/ টিবিএস

২২ বছর অপেক্ষার পর মিললো বই!   

কয়েকটি বই পাওয়ার ঘটনা আজও মনে আছে লোকমান হোসেনের। হয়তো সারাজীবন থাকবে। 

একবার ড.দীনেশ্চন্দ্র সরকারের পাল-সেন যুগের বংশানুচরিত বইটির খোঁজ করছিলেন লোকমান সাহেব। কয়েক বছর ধরেই খুঁজছিলেন। হঠাৎ, এক কাজে সিলেট যাওয়া হয়, সেখানে মালঞ্চ দোকানে এই বইটি পেয়ে যান। এখন যদিও এই বই রকমারিতে বিক্রি হয়, সেসময় এ বইটি খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিনই ছিল।   

আরেকবার, অমিত সেনের 'ইতিহাসের ধারা' বইটির খোঁজ না পেয়ে, ভারতেও লোক পাঠিয়েছিলেন খোঁজ নেওয়ার জন্য। সেসময় পাঠ্যবই হিসেবে এই বইটির ব্যাপক চাহিদা ছিল। একদিন নীলক্ষেতে ফটোকপি করতে যাওয়ার পথে ফুটপাতের দোকানে বইটি ফুটপাতে পড়ে থাকতে দেখেন। ছোট্ট একটা বই, সেসময় এই বইয়ের দাম ছিল ২ টাকার মতো, কিন্তু বইটা পেয়ে তিনি এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে, ৩০ টাকা দিয়ে বইটা কিনে নেন। 

আর আরেকবার নাকি বই পাওয়ার খুশিতে এক সপ্তাহের মতো দোকান বন্ধ করে বাড়িতে গিয়ে শুধু ঘুমিয়েছেন! বইটি ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুৎফর কবিরের 'ল্যান্ড ল'। দীর্ঘ ২২ বছর পর অপেক্ষার পর বইটি হাতে পান তিনি। এখন অবশ্য অনেক কপি বেরিয়েছে, কিন্তু তার মতে, ৯৫-৯৬ সালে বাজারে লুৎফর কবিরের কোনো বই-ই পাওয়া যেত না। একমাত্র তার কাছেই চার ভলিউমের ঐ বইটি ছিল!  

আছে মধ্যযুগেরও বই! 

গল্পগুলো শুনছিলাম আর পুরোনো বইয়ের তাকগুলোর দিকে চোখ যাচ্ছিল বারবার। আমার আগ্রহ দেখে তিনি আমাকে কয়েকটি বেশ পুরোনো বই বের করে এনে দেখাচ্ছিলেন। বইগুলো ঘাঁটতে গিয়ে হাতে পেলাম এক বিশাল আকারের ভারী এবং মোটা বই। সাদা মলাট খুলতেই চোখে পড়লো হলুদাভ এক কাগজে প্রাচীন অক্ষরে ছাপা মোটা মোটা, বড় বড় অক্ষরে গল্পের মতো লেখা এক বই। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, বাংলা ভাষাতে লেখার পরও এই বইয়ে কী লেখা তার একটা বাক্যও বোধগম্য হচ্ছিল না আমার। জিজ্ঞেস করে জানলাম, বইয়ের নাম 'কাছাছোল আম্বিয়া'। এরপর ইন্টারনেটের সহায়তায় আরও জানলাম, মূল ফারসি গ্রন্থ কায়ছাছ-আল-আম্বিয়ার বাংলা তর্জমা এই কাছাছোল আম্বিয়া। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এই ধরনের গ্রন্থ 'দোভাষী পুঁথি' নামে পরিচিত। 

এত আগের বই দেখে জানতে চাইলাম, এটিই সবচেয়ে পুরোনো বই কি না? লোকমান সাহেব জানালেন, সবচেয়ে পুরোনো বই কোনটা তা না জানলেও ২০০-২৫০ বছর আগের অনেক বই আছে তার সংগ্রহে। এছাড়া, মধ্যযুগের বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপন্যাস জাতীয় বই, পুঁথি, মধ্যযুগের সমাজ ও সংস্কৃতি লেখক ড. আহমেদ শরীফের সম্পাদিত বিভিন্ন বই আছে তার সংগ্রহে!       

ছবি: রাফিয়া মাহমুদ প্রাত/ টিবিএস

সেরা বই:

লোকমান হোসেনের দাবি, তার সংগ্রহে বইয়ের সংখ্যা কম-বেশি কয়েক লাখ হবে। কিন্তু এত বইয়ের মাঝেও একটি বই তার মনে দাগ কেটে আছে। ছোট্ট একটা বই, নাম 'ইতিহাসের ধারা' লেখক অমিত সেন।   
যদিও এই বইপ্রেমী মনে করেন, একেক সময় একেক বই সেরা হয়ে যায়। তবে এই বইটি লোকমান হোসেনের কাছে রত্নের মতো। কেননা, ২২টি বছর তিনি বইটির জন্য অপেক্ষা করেছেন। 

তার কাছে আরেকটি সেরা বই হলো 'মার্ক্সীয় দর্শন'। যদিও লেখকের নাম মনে করতে পারছিলেন না, তবে জানান, রুশ বইয়ের বাংলা অনুবাদ হল এই বইটি। 

ছবি: রাফিয়া মাহমুদ প্রাত/ টিবিএস

কারা কেনেন দুষ্প্রাপ্য বই? 

কল্লোল বুক সেন্টারে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দুষ্প্রাপ্য ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, সাহিত্যভিত্তিক ডকুমেন্টারি বইয়ের। তাই গবেষক বা শিক্ষার্থী-শিক্ষকরাই আসেন মূলত  এই বইগুলো কিনতে। তবে তিনি মনে করেন, এখন নীলক্ষেতের পরিবেশের কারণে কাস্টমার আসতে চায় না।   

তার ভাষায়, "অনেক বয়স্ক মানুষ, এমনও হইসে লাঠিতে ভর দিয়ে আসছেন আমার দোকানে। কিন্তু দেখা যায়, নীলক্ষেতের পরিবেশের কারণে তারা সব সময় বা দরকার হলেই আসতে পারেন না। গরমকাল আসলে আপনি নীলক্ষেতে ঢুকতেই পারবেন না তাপমাত্রার জন্য।"  

"তবে আমার কাছে এমন অনেক বই আছে, যা আর অন্য কোথাও বহু বছর ধরে খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। তাই যারা কল্লোলকে চেনেন, তারা কষ্ট করে হলেও আসেন," তিনি বলেন।  

নেশা নাকি পেশা?

একথা জানতে চাইলেই বললেন, 'আমি স্বপ্নেও দেখি বই। যখন কোনো বই খুঁজে বেড়াই, রাতে ঘুমের মাঝে দেখি, ঐ বই আমার হাতে।' 

প্রকৃতপক্ষে, বই তার কাছে আয়-উপার্জনের উৎসই নয় শুধু, মনের খোরাক যোগানোর উৎসও বটে।

"যখন আমি অর্থনৈতিকভাবে নিরাশ হয়ে পড়ি, তখনও আমি আমার বইগুলোর সামনে গিয়ে দাঁড়াই। তখন মনে হয়, এই বইগুলোই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, ওরাই আমার শক্তি।"

ছবি: রাফিয়া মাহমুদ প্রাত/ টিবিএস

কাস্টমারদের আচরণ কষ্ট দেয়…

বইয়ের সঙ্গে লোকমানের বসবাস সেই ১৯৯৫ সাল থেকে। পেশা থেকে শুরু হলেও, এখন লোকমান হোসেনের ধ্যানেজ্ঞানে, মনেপ্রাণে, শয়নে-স্বপনে সবটা জুড়ে আছে বই। নীলক্ষেতের এত হাজার হাজার দোকানের মাঝেও কল্লোল বুক সেন্টার পাঠক এবং স্থানীয়দের কাছে এক নামে পরিচিত। পুরোনো দুষ্প্রাপ্য যেকোনো বইয়ের আশ্রয়ের জায়গা- এই কল্লোল। কিন্তু এত পাঠক জনপ্রিয়তা থাকার পরেও লোকমান হোসেন মাঝে মাঝে এই ব্যবসা থেকে সরে আসার কথা ভাবেন।

এর কারণ জানতে চাইলে বলেন, "মানুষের আচার-আচরণ ভালো লাগে না, মানুষ মানুষকে মূল্য দেয় না। এদেশের মানুষ শিক্ষিত হয়েছে, কিন্তু সামাজিক হয়নি। আর যারা শিক্ষিত হয়েছেন- তাদের অবস্থাও এমন যে, পিএইচডি করার জন্য গাইড খোঁজেন। বাজারের গাইড পড়ে পিএইচডি করবেন। এসব দেখলে আমার বড় কষ্ট লাগে।"  

দামটা বেশি! 

কল্লোল বুক সেন্টারে বইয়ের দাম কিছুটা বেশি- এই অভিযোগ অনেকেই করেন। তবে এক্ষেত্রে লোকমান হোসেন বলেন, "দুষ্প্রাপ্য বইগুলোর দাম বেশি তো হবেই, কিন্তু আমরা লাভের জন্য অতিরিক্ত দাম হাঁকিয়ে বসি না। কিন্তু এমন অনেক দোকান আছে, যারা আমাদের থেকে কিনে নিয়ে, নিজেরা বিক্রি করে তার পাঁচগুণ দামে। আর এ কারণেই আগে সিলেট, রংপুর এরকম কিছু জেলা, যেখানে পাইকারি বিক্রি করতাম, সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছি।"

পাশের দোকানের মালিক অশোক কুমার (ছদ্মনাম) বলেন, "কল্লোলের দেখাদেখি এখন অনেক দোকান এরকম বই বিক্রি করছে, কিন্তু কল্লোলের সংগ্রহ সবার থেকে বেশি সমৃদ্ধ। যদিও অন্যদের চেয়ে তাদের বইয়ের দামটা বেশি, কিন্তু কল্লোলের এক-একটা বই হলো সোনা।" 

তবে লোকমান হোসেনের কিছু নীতি আছে, তিনি শুধু বইয়ের দামের ওপরই ক্রেতাদের থেকে দাম রাখেন না। তিনি মনে করেন, কখনো মানুষের ব্যবহারের কারণেও দাম কম-বেশি রাখা যায়। উৎসাহী ক্রেতার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে নির্দিষ্ট দামের কম দামেই বই বিক্রি করেছেন, এমন নজিরও আছে।    

যেসব সুবিধা: 

কল্লোলের কিছু বই শুধু ফটোকপি নিতে হবে। কারণ ওই বইগুলোর আর কোনেো প্রিন্ট নেই। আবার মূল প্রিন্টের দামও বেশ চড়া। তাই ফটোকপি পাওয়া যায়। কিন্তু তারপরও আছে কিছু বাড়তি সুবিধা। প্রথমত, আপনি কোনো বই যদি তাদের কাছে খুঁজতে আসেন, এবং তাদের সংগ্রহে যদি ঐ বই না থাকে- তবে দুবছর, দশ বছর পর হলেও তারা আপনাকে নিজ দায়িত্বে ফোন দিয়ে জানাবে যে, বইটি এখন দেয়া যাবে।  
লোকমান হোসেন কাউকে ফিরিয়ে দিতে চান না। তিনি মনে করেন, কাউকে ফিরিয়ে দেয়ার অর্থ, আমি তাকে সাহায্য করতে পারলাম না। 

দ্বিতীয়ত, যে বইগুলোর কপি তেমন থাকে না, কিন্তু বইগুলোও কাস্টমারদের অনেক দরকার, সেক্ষেত্রে তারা বইগুলো ধার দেয়। কাজ শেষে কাস্টমার আবার তা ফিরিয়ে দেয়। কেউ কেউ হয়তো কথামতো যথাসময়ে বইগুলো ফেরত দেয়, কেউ হয়তো দিতে চায় না, তখন ভোগান্তি পোহাতে হয়। 

"দেখা যেত, অনেক পুরোনো, ঐতিহাসিক বই সংগ্রহে আছে বলে, অনেকেই এসে বই নিয়ে যেত। কিন্তু আমি তো অনেক কষ্টে এই বইগুলো সংগ্রহ করেছি। তাই তখন থেকে বইগুলো ফটোকপি করে বিক্রি করা শুরু করি। কারণ আমি জানি, সামনে এই বইগুলো আর পাওয়া যাবে না, কিন্তু চাহিদা তৈরি হবে ঠিকই"- লোকমান বলেন। 

নেই কোনো গর্ব: 

নীলক্ষেতের ইসলামিয়া মার্কেটে আদি দোকান তার বই রাখার মূল কেন্দ্র। এটায় তিন তলা জুড়ে তার বইয়ের ভাণ্ডার। এরপর এ মার্কেটের বিপরীতে নীলক্ষেতের সিটি কর্পোরেশন রোড সাইড মার্কেটেও দুটো শাখা আছে তার। এর একটি বইয়ের গোডাউন, অন্যটি শোরুম। লোকমানের এই সংগ্রহ বহু বছরের চেষ্টার ফসল। তিনি মনে করেন, সবকিছুর মালিক আল্লাহ, যেকোনো সময় এই বইগুলো নষ্ট বা চুরি হয়ে যেতে পারে। একবার গোডাউনে স্যুয়ারেজ লাইন নষ্ট হয়ে ৩৫- ৪০ টন বই পানিতে নষ্ট হয়েছে। চুরিও গেছে অনেকবার।  

ছবি: রাফিয়া মাহমুদ প্রাত/ টিবিএস

সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি: 

অবাক করা বিষয় হলো, তার সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা বইয়ের নাম 'টোফেল'। যে বই এখন আমাদের পায়ের তলায় পড়ে থাকে। কিন্তু ৯৬ সালে তিনি এই বই সাড়ে তিনশো টাকায় বিক্রি করেন, যা সেই সময়ের জন্য সত্যিই হয়তো বেশি ছিল। আরেকটি হলো, সৈয়দ আলী আহসানের পদ্মাবতী। সেসময় তিনি এটি বিক্রি করেছেন ৫০০-৭০০ টাকায়। এই বইগুলো সেসময় ছিল দূর্লভ।  

বইকে ঘিরে দুর্নীতি, অভাব শুধু আগ্রহের: 

ব্যবসা নিয়ে একদমই আফসোস নেই লোকমান সাহেবের। তিনি মনে করেন, ব্যবসা কখনোই খারাপ যায় না। তাছাড়া এটা তো কোনো হারাম ব্যবসা নয়।

তবে বইয়ের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে, নিজে যেমন সমৃদ্ধ হয়েছেন, তেমন কষ্টও পেয়েছেন মানুষের মধ্যে সঠিক ইতিহাস ও সঠিক জ্ঞান জানার আগ্রহ কম দেখে। কামরুদ্দীন আহমেদের 'বাংলার এক মধ্যবিত্তের আত্মকাহিনী' এবং 'বাংলার মধ্যবিত্তের আত্মবিকাশ', প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড বই দুটির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ''আমাদের দেশের মানুষ এই ব্যক্তির বই পড়ে না। এম এ মুহাইমিনের 'ব্যবধান', 'একটি আত্মার মৃত্যু', 'বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ' এই বইগুলো পড়ে না। এদেশের মানুষ এই ব্যক্তিদের নামও হয়তো জানে না। অথচ সমাজ, ইতিহাস নিয়ে ৭৫ এর পর থেকে ৮০ সাল পর্যন্ত ঘটনাগুলোর কথা জানা যায় তার বইগুলো পড়লে। আমরা আজ যে আমলাতন্ত্র বলছি, সেই আমলাতন্ত্রের ভিতরে কীভাবে দুর্নীতি ঢুকে গেল, এই বইগুলো পড়লে তা জানা যাবে। কী অসভ্য সমাজ থেকে আমাদের উত্তরণ হয়েছে ৮০ সালের পরে, তা জানা যাবে।"

লোকমান হোসেন এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় যুক্ত ছিলেন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে। বই পড়া আর দেখাশোনার পাশাপাশি লেখেন কবিতা, শ্লোক। নতুন প্রজন্মদের নিয়ে এই কবি নিঃসঙ্কোচে বললেন, "এ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অন্ধকার, একাডেমিক পড়ালেখার বাইরে বই কিনতে দেখা যায় না এদের। তবে বলবো না একেবারেই বইপ্রেমী নেই, অনেক বইয়ের পোকাও দেখেছি আমি। কিন্তু সেটা সংখ্যায় খুব কম।"  

"তাছাড়া আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা এমন যে, ডকুমেন্টারি বইগুলো আর্কাইভে রাখে, সেখানেও দুর্নীতি। লোকজন পাতা কেটে নিয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে গেলেও দেখা যায়, বইয়ের পাতা নেই, ছিঁড়ে কেটে নেওয়া। আমাদের নেই কোনো জনকল্যাণমূলক বইয়ের প্রতিষ্ঠান, সবখানেই ব্যবসা আর দুর্নীতি।" তার চেহারায় খানিকটা হতাশা ঘনিয়ে আসে।  

বইয়ের নেশায় আজও ছুটে চলেছেন… 

নতুন পুরোনো সব বইয়েরই সংকলন কল্লোল রাখে। কিন্তু এত বইয়ের মাঝে প্রাধান্য পায় পুরোনো ডকুমেন্টারি দুষ্প্রাপ্য বইগুলোই। কল্লোলকে সবাই এই দুষ্প্রাপ্য বইয়ের জন্যই চেনে। আজ ২৭ বছর ধরে লোকমান হোসেন একাহাতে আজকের কল্লোল বুক সেন্টার গড়ে তুলেছেন। স্বর্ণ বিক্রি করে এবং ভাইবোনদের কাছ থেকে ধার নিয়ে এই কল্লোল হাউজ শুরু করেন। নিজের চেষ্টা এবং পরিবার, বন্ধুবান্ধবসহ অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষীর সমর্থনে আজ কল্লোল বুক সেন্টার নীলক্ষেত ও বইপ্রেমীদের কাছে এত জনপ্রিয়। 

হাঁটতে হাঁটতেই বই সংগ্রহ করেন তিনি। যেখানেই বই দেখেন, একবার চোখ বুলিয়ে নেন, আর পছন্দ হলে কিনে ফেলেন। তবে এখনও তার আফসোস হয়, যদি প্রথমজীবনে টাকা থাকতো হাতে, অনেক ভালো ভালো বই তাহলে আজ সংগ্রহে থাকতো। তাই এখন যদি কোনো বই পছন্দ হয় আর হাতে টাকা না থাকে, তবে কিনতে না পারলেও অন্তত বলে রাখেন যেন, ঐ বইটি তার জন্য রেখে দেয়া হয়। পরেরবার এসে কিনে নেবেন।   

ছবি: রাফিয়া মাহমুদ প্রাত/ টিবিএস

একশো দুইশো বছর আগের অনেক দুষ্প্রাপ্য বই আছে কল্লোলের ভান্ডারে, এরমধ্যে আছে পুঁথি, ক্যালিওগ্রাফির বই থেকে শুরু করে গাইড বই পর্যন্ত সব ঘরানার বই। কিছু কিছু বই ২৭ বছর পরেও কাস্টমার এসে চায়। তাই এখনও লোকমান হোসেন ভুঁইয়া নিজ হাতে, দিন-রাত পরিশ্রম করে কাজ করে যাচ্ছেন। 

যখন এই কল্লোলের জন্ম হয়, তখন তিনি সদ্য বিবাহিত। আর্থিকভাবেও বিপর্যস্ত। এখন তার পাঁচ মেয়ে এবং দুই ছেলে। বড় মেয়ে মাস্টার্সে পড়ছে, বড় ছেলে কোরানে হাফিজ আর মেজো মেয়ে কলেজ পড়ুয়া। ছোট ছেলে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিবে। বাকি দুই মেয়ে হাফিজি পড়ছে, আর একেবারে ছোট মেয়েটির বয়স ১০ বছর।   

সাত ছেলেমেয়ে এবং স্ত্রী নিয়ে একরকম চলে যাচ্ছে তার জীবন। বিলাসিতার সুযোগ না থাকলেও সংসারে সচ্ছলতা আছে ঠিকই।

সাত ছেলেমেয়ের মধ্যে মেজো মেয়ে এবং বড় ছেলে লেখাপড়ার পাশাপাশি দোকান দেখাশোনার সাথে জড়িত। আর লোকমান সাহেব দুই দোকানেই নিয়মিত বসেন। তিনি মনে করেন, ঠিকমতো কাজ করা এক ধরনের ইবাদাত। কিন্তু এই কর্মনিষ্ঠা, ছেলে-মেয়ে এবং কর্মচারীদের মধ্যে দেখতে পান না তিনি। একারণে হতাশও হয়ে পড়েন। কিন্তু তিনি ভরসা রাখেন আল্লাহর ওপর। 

যতদিন নিজের শক্তি আছে, তিনি কাজ করে যেতে চান। কাজে কোনো ভেদাভেদ করেন না। ছোটো- বড় সব কাজই নিজ হাতে করেন। তিনি মনে করেন, বইয়ের এই বিপুল সাম্রাজ্যে তার একটি কাজের বড্ড অভাব। তা হলো, বিপুল এই ভান্ডারের একটি পূর্নাঙ্গ তালিকা তৈরি করা। নিজের হাতে একটু একটু করে গড়া এই কল্লোলকে নিয়ে তার এটুকুই চাওয়া- 
                                                   আমাদের সংগ্রহ সবার ঊর্ধ্বে
                                                   আমাদের বিতরণ সবার মধ্যে

 

Related Topics

টপ নিউজ

কল্লোল বুক সেন্টার / দুষ্প্রাপ্য বই / নীলক্ষেত / বইয়ের দোকান

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • হাজারো কোটি টাকার বিনিময়েও আবার ‘জ্যাক স্প্যারো’ হবেন না ডেপ!
  • ঘরে ঘরে জ্বর, ডা. এবিএম আব্দুল্লাহর পরামর্শ 
  • ইভ্যালির কাছে ২৫ কোটি টাকার পণ্য আছে
  • এক জাপানির গলফ ক্লাবের টানেই যেভাবে দেশে শুরু হলো লেন্সের উৎপাদন 
  • বাংলাদেশ থেকে পোশাক কর্মী নিচ্ছে বুলগেরিয়া
  • নতুন রিজার্ভ মুদ্রা দিয়ে ডলারের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চায় রাশিয়া-চীন

Related News

  • নীলক্ষেতে বইয়ের মার্কেটে আগুন
  • কাবুলি বইওয়ালা: দুই শত্রু, দুই প্রতিদ্বন্দ্বী
  • ফুটপাত থেকে ফেসবুক: প্রযুক্তি দুনিয়ায় হাবিব চাচার ঐতিহ্যবাহী বইয়ের দোকান

Most Read

1
বিনোদন

হাজারো কোটি টাকার বিনিময়েও আবার ‘জ্যাক স্প্যারো’ হবেন না ডেপ!

2
বাংলাদেশ

ঘরে ঘরে জ্বর, ডা. এবিএম আব্দুল্লাহর পরামর্শ 

3
অর্থনীতি

ইভ্যালির কাছে ২৫ কোটি টাকার পণ্য আছে

4
অর্থনীতি

এক জাপানির গলফ ক্লাবের টানেই যেভাবে দেশে শুরু হলো লেন্সের উৎপাদন 

5
বাংলাদেশ

বাংলাদেশ থেকে পোশাক কর্মী নিচ্ছে বুলগেরিয়া

6
আন্তর্জাতিক

নতুন রিজার্ভ মুদ্রা দিয়ে ডলারের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চায় রাশিয়া-চীন

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab