Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • অন্যান্য
  • English
The Business Standard বাংলা
tbs
THURSDAY, JULY 07, 2022
THURSDAY, JULY 07, 2022
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • অন্যান্য
  • English
রিকশাতে নেই রিকশাআর্ট, আছে বাক্স, কাপ-পিরিচ, গহনায়...

ফিচার

মেহজাবিন তুলি & রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
31 December, 2021, 03:15 pm
Last modified: 14 January, 2022, 03:27 pm

Related News

  • দেশব্যাপী ধর্মঘটের তৃতীয় দিনে ঢাকার রাস্তায় প্রাইভেট কার ও রিকশার রাজত্ব
  • করোনার প্রভাবে কর্ম হারিয়ে অনেকেই ঢাকায় এসে চালাচ্ছেন রিকশা
  • আজ থেকে গণপরিবহণ বন্ধ, চলবে রিকশা ও পণ্যবাহী যানবাহন
  • ঢাকা থেকে কি রিকশা সরানো সম্ভব? বিশেষজ্ঞরা বলছেন ‘হ্যাঁ’
  • চট্টগ্রামেও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বন্ধ হচ্ছে রিকশা চলাচল

রিকশাতে নেই রিকশাআর্ট, আছে বাক্স, কাপ-পিরিচ, গহনায়...

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রিকশা দেখা গেলেও রিকশা এবং রিকশাচিত্রকে ঐতিহ্যের পর্যায়ে নিয়ে গেছে বাংলাদেশের রিকশাই।
মেহজাবিন তুলি & রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
31 December, 2021, 03:15 pm
Last modified: 14 January, 2022, 03:27 pm
তিরিশ বছরের ওপরে রিকশাচিত্র নিয়ে কাজ করছেন রফিকুল। ছবিস্বত্ব-প্রতিভা

'আমি ছোট, আমাকে মারবেন না', 'খাইছি তোরে', 'টাইম নাই', 'ধাক্কা লাগলে খবর আছে', 'জন্ম থেকেই চলছি'- বাংলাদেশের রাস্তায় বেরোনো মানুষ মাত্রই রিকশার গায়ে লেখা এসব হাস্যরসাত্মক উক্তির সাথে পরিচিত। রিকশার টংটং আওয়াজ কখনো ব্যস্ত পথিকের ক্লান্তি দূর করে; আবার কখনো তাতে সাঁটা বিচিত্র ভঙ্গিমার জীবজন্তু, কিংবা চলচ্চিত্র তারকাদের ছবি দেখে উল্লাসে ফেটে পড়েন যাত্রী।  

নান্দনিক হোক বা চটুল- রঙিন ছবি এঁকে রিকশাকে আকর্ষণীয় ও চাকচিক্যময় করে তোলেন রিকশাচিত্রীরা। শুধু রিকশায়ই নয়, তারা যেন তুলির আঁচড়ে রঙিন করে তোলেন ইট-পাথর-কংক্রিটের রাস্তাও।    

রিকশার পেছনে ঝুলবোর্ডে টিনের শিটের ওপর যে রঙবেরঙের ছবি আঁকা থাকে, সেগুলোই রিকশাচিত্র হিসেবে সুপরিচিত।

ছবিস্বত্ব: অ্যান্টন বার্মিস্ট্রোভ/ এডভেনচার ডট কম

রিকশাকে এখন মধ্যবিত্তের যানবাহন হিসেবে দেখা হলেও শুরুতে কিন্তু এটি বিত্তবানদের যান হিসেবে গণ্য হতো। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, জাপানের সম্রাট মেইজি (১৮৫২-১৯১২) নাকি রাজধানী পরিদর্শনের জন্য রিকশা ব্যবহার করতেন। পালকি টানার চেয়ে রিকশা চালানো কম কষ্টসাধ্য হওয়ায় পালকির বিকল্প হিসেবে রিকশা বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। 

রিকশা শব্দটিও এসেছে দুটি জাপানিজ শব্দ 'jin riki sha' থেকে। যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় 'মানুষে টানা যান।'

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বপ্রথম ভারতের সিমলায় ১৮৮০ সালের দিকে রিকশার প্রচলন হয়। ১৯৩০ সালে প্রচলন শুরু কলকাতায়। এরই কোন এক কাছাকাছি সময়ে বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডেও তিন চাকার এই যান চলতে শুরু করে।

বাংলাদেশে রিকশা এসে পৌঁছায় দু'দিক থেকে। সেসময় মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে রিকশার জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায়, কিছু রিকশা চট্টগ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। আবার ১৯৩৮ সালের দিকে কয়েকটি রিকশা কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছায়। দুই দেশ থেকে আগত দুই রিকশা দেখতেও ছিল আলাদা।

এছাড়াও শোনা যায়, ১৯৪৭ এর দেশভাগের পর পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের একজন হিন্দু জমিদার এবং ওয়ারির এক মাড়োয়ারি ভদ্রলোক ছয়টি রিকশা কিনে ঢাকাবাসীকে পরিচিত করান এই যানের সাথে।

রিকশা আর্টের উত্থান সে সময় থেকেই। প্রথমদিককার রিকশাচিত্রীরা কেউই পেশাদার শিল্পী ছিলেন না।

পঞ্চাশের দশকে কিছু কারখানা তৈরী হয়, সেখানেই রিকশায় আঁকা হতে থাকে।

শিল্পী রফিকুলের আঁকা রিকশাচিত্র; ছবি-মেহজাবিন তুলি

শুরুতে রিকশাচিত্রের একটা বড় উৎস ছিল চলচ্চিত্রের নায়ক-নায়িকারা। রিকশায় আমরা যে লাল, সবুজ, হলুদের মতো উজ্জ্বল রঙের প্রাধান্য দেখি, তার মূল আইডিয়াও সিনেমার ব্যানার থেকেই নেয়া।

১৯৭০ এর দিকে দেখা যেতে লাগল মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অলংকরণ। এই দশক থেকে রিকশাচিত্র আলাদা নজর কাড়তে শুরু করে। টিনের পাতে ফুটে উঠতে লাগল দেশীয় সংস্কৃতি, বিশ্বাস আর আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।

কিন্তু সেই দশকের মাঝামাঝিতে তৎকালীন সরকার রিকশায় চলচ্চিত্র শিল্পী এবং মানুষের মুখ অঙ্কনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তখন শিল্পীরা মানুষের আদলে কাল্পনিক জীবের ছবি আঁকতে শুরু করে। যে ছবিতে মানুষ থাকবার কথা ছিল, সেখানেই তারা প্রাণীর মুখ বসিয়ে দিতে শুরু করল।

এমনকি শহরভেদেও বদলে যেতে দেখা গেল রিকশাচিত্রের ধরন। ঢাকাই রিকশাগুলোর গায়ে চলচ্চিত্র তারকাদের লালচে-গোলাপি টোনে আঁকা মুখ প্রাধান্য পায়।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর সিলেটে রিকশাচিত্রের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়ে ওঠে ধর্মীয় ভক্তি-অনুরাগ, অন্যদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বা খুলনার দিকে রিকশাগুলোতে ট্রেন চলার বা বিমান উড়ে যাবার চিত্র খুব সাধারণ। 

পুরো বিশ্বের আর কোথাও ঢাকা শহরের মতো এত রিকশা দেখা যায় না। এজন্যই হয়তো ঢাকাকে 'রিকশার নগরী' বলা হয়। বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা হয়, শুধু রাজধানী ঢাকায় বৈধ-অবৈধ মিলে দিনে প্রায় ১৫ লাখ রিকশা চলাচল করছে। তবে পুরো দেশে কী পরিমাণ রিকশা চলছে সেটার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই।

পাশের দেশ ভারতেও রিকশার ব্যবহার দেখা যায়, তবে রিকশা এবং রিকশাচিত্রকে ঐতিহ্যের পর্যায়ে নিয়ে গেছে বাংলাদেশের রিকশাই। রিকশাকে 'সহজলভ্য এবং কম দামি' যান মনে হলেও একটি রিকশা তৈরি থেকে রাস্তায় নামানো পর্যন্ত তাকে ঘুরে আসতে হয় ছয় শ্রেণির পেশাজীবীর হাত। এরা হলেন হুডমিস্ত্রি, বডিমিস্ত্রি, বাতা কারিগর, পেইন্টার, রংমিস্ত্রি এবং ফিটিং মিস্ত্রি।

বাংলাদেশের চিত্রশিল্পের ইতিহাসে রিকশাচিত্রকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন।

অথচ বিপুলভাবে ডিজিটাল প্রিন্টের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় ঐতিহ্যবাহী এই রিকশাচিত্র শিল্প আজ হুমকির সম্মুখীন।

পুরোপুরিভাবে রিকশাচিত্র ফুটিয়ে তুলতে একজন দক্ষ চিত্রীর সপ্তাহখানেক সময় লেগে যায়। বিপরীতে, ডিজিটাল প্রিন্টের বদৌলতে এখন পছন্দের চলচ্চিত্র তারকার ছবি সরাসরিই রিকশার গায়ে সেঁটে দেওয়া যায়। দাম পড়ে মাত্র ৫০-১০০ টাকা।  

এভাবে কোম্পানিগুলো শিল্পীদের কাছ থেকে নেওয়া মূল্যের অর্ধেক দামে ডিজিটাল প্রিন্টে উৎপাদিত শিল্পকর্ম বিক্রি করতে পারে।

ধুঁকতে থাকা রিকশাচিত্রীদের সামনে দুটো উপায় থাকে- মেশিনচালিত নব্য শিল্পের সাথে নিজে মানিয়ে নেয়া নয়ত একেবারেই হারিয়ে যাওয়া।

বলাইবাহুল্য, দ্বিতীয় পথটিই বেছে নিয়েছেন বেশিরভাগ। পুরো দেশে সব মিলিয়ে এই পেশা টিকিয়ে রেখেছেন মাত্র হাতেগোনা ক'জন।

তবে যারা টিকে আছেন, তারা রিকশার চাইতে অন্যান্য পণ্যেই তাদের নৈপুণ্য ফুটিয়ে তুলছেন; বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে গৃহস্থালি ও ঘর সাজানোর নানা অনুষঙ্গে রিকশাচিত্র আঁকছেন। 

এদেরই একজন রফিকুল ইসলাম। রফিকুলের সাথে কথা হয় পুরনো ঢাকায় তার নারিন্দার বাড়িতে বসে।

নিজের ঘরেই একমনে এঁকে চলেছেন রফিকুল

রফিকুল তার জীবনের পুরোটাই দিয়েছেন রিকশাচিত্রের পেছনে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে মামা আলাউদ্দীন নাজের হাত ধরে আঁকিবুকির দুনিয়ায় রফিকের প্রবেশ।   

রফিকুল তখন নবম শ্রেণীর ছাত্র। লেখাপড়ায় বিশেষ মনোযোগ ছিল না বলে মামা তাকে পরামর্শ দেন সময় নষ্ট না করে ছবি আঁকায় মনোনিবেশ করতে। রফিকের মামা নিজেও রিকশায় আঁকতেন। 

প্রথমদিকে মামাই সীমানা এঁকে দিতেন আর রফিক রং করতেন। দুই-তিনমাস পর রফিকের হাত চলে আসে এ কাজে।

আস্তে আস্তে অর্ডার আসতে থাকলে পুরোদস্তুর রিকশাচিত্রী হয়ে ওঠেন রফিকুল।  

৩০-৩৫ বছরের দীর্ঘ পথচলায় রফিকুল কুড়িয়েছেন বহু সম্মাননা আর পুরস্কার। চারুকলা, শিল্পকলা, জাদুঘর, প্রদর্শনী সবখানেই ছিলো রফিকুলের উপস্থিতি। নিজ দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশ থেকেও তার কাছে আমন্ত্রণ এসেছে। 

ছবিস্বত্ব- প্রতিভা

২০১৩ সালে জাপানে আয়োজিত এক প্রদর্শনীতে অংশ নেন রফিকুল। বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে তার সাথে আরও ছিলেন রিকশাচিত্রী সৈয়দ আহমদ হোসেন। প্রদর্শনীতে রফিকুল ও সৈয়দ আহমদের কাছ থেকে ১৫টি চিত্রকর্ম কিনে নেয় জাপানিরা।        

পরের বছরই কারুপরিষদ এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রফিকুল ইসলাম রিকশা পেইন্টিংয়ে শ্রেষ্ঠশিল্পীর পুরস্কার পান। 

রফিকুল বলেন, "আমরা অনেকেই মনে করি রিকশার পিছনে যে চিত্রকর্ম দেখি ওইটাই শুধু রিকশাচিত্র। ব্যাপারটা কিন্তু ঠিক তা না। পুরো রিকশা জুড়ে আমরা যেসব নকশা, কারুকার্য দেখি সবই রিকশাচিত্রের মধ্যে পড়ে। 

রিকশার হুডে, যাত্রী সিটে, ধাতব চাকায়, পিছনের বোর্ডে, হ্যান্ডেলে যেসব কারুকার্য করা হয় সবকিছু মিলেই আসলে রিকশা আর্ট।"   

রিকশাচিত্রে ব্যবহৃত রং আলাদা। অন্যান্য চিত্রকলার মতো এখানে অ্যাক্রিলিক রংয়ের ব্যবহার হয় না, হয় এনামেল রং।   

এই রংয়ের সঙ্গে তারপিন আর কেরোসিন মিশিয়ে দেওয়া হয় তুলির আঁচড়। এনামেলের রং দিয়ে কাজ করতে প্রচুর ধৈর্যের প্রয়োজন বলে জানান রফিকুল।  

তবে অর্ডার অনুযায়ী বিশেষ কাজের জন্য অ্যাক্রিলিক রংও ব্যবহার করা হয়। এই রং ব্যবহারের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো, কাপড়ের ওপর এটি ব্যবহার করা যায় না। কাপড় শক্ত হয়ে রংটা শুষে নেয়। 

শুধুই কি চিত্র, অতীতে যেভাবে সোনালী ঝালর, চুমকিওয়ালা ওড়না বা পর্দা ইত্যাদি দিয়ে নতুন রিকশা সাজিয়ে রাখা হতো, এখন সেখানেও অনীহা!  

আক্ষেপের সুরে রফিকুল বলেন, "রিকশাচিত্রের এতোটাই দুর্দিন এসেছে যে, অনেক রিকশামালিক আজকাল শুধু নাম আর মোবাইল নাম্বার লিখিয়ে রাখে, আর কিচ্ছু না!"

চারুকলার শিক্ষার্থীরাও আজকাল রিকশাচিত্রের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণে উৎসাহী; ছবি-রফিকুল ইসলামের সৌজন্যে

রফিকুল জানান, তিনি সহ মাত্র ১৫ জনের মতো রিকশাচিত্রী বর্তমানে সক্রিয় রয়েছেন। সবচেয়ে প্রবীণ চিত্রীর নাম রাজকুমার দাস। তার আক্ষেপ, বাজারে রিকশাচিত্রের যথার্থ মূল্য না থাকায় ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই কাজের প্রতি আগ্রহী হতে পারছেনা।  

চারুকলার শিক্ষার্থীদের মতো রিকশাচিত্রীদের প্রতিভা বিকাশে নেই কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ। 

তবে এখন সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বিশেষ রীতির এই চিত্রকলাকে বাঁচিয়ে রাখতে। আগ্রহী তরুণদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।

রফিকুল ইসলাম জানান, কিছুদিন আগেই তিনি সহ আরও চার-পাঁচজন রিকশাচিত্রী চারুকলার কয়েকজন শিক্ষার্থীকে রিকশাচিত্রের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন। 

রিকশা পেইন্টিংয়ের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে এই সিনিয়র শিল্পী বলেন, "বিয়ের দিন একজন কনে যদি শুধু বিয়ের পোশাক পরে থাকে, কোন গয়না না পরে, তাহলে কী সাজ পূর্ণ হবে! ঠিক তেমনি নতুন রিকশার গায়েও ছবি, ঝালর, রঙিন কাপড় ইত্যাদি না থাকলে সেটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে না।"

"রিকশা পেইন্টিং একটা ঐতিহ্য, দেশে এর কদর মানুষ না থাকলে কী হবে বিদেশের মানুষের কাছে আস্তে আস্তে এর আবেদন তৈরী হচ্ছে," যোগ করেন রফিকুল।   

এ পর্যন্ত দুটো তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে রফিকুল ইসলামকে নিয়ে। রাশিয়া আর বেলজিয়াম থেকে নির্মাতারা এসেছিলেন রফিকুলের কাজকে ক্যামেরায় ধারণ করতে। 

আগেই বলেছি, রফিকুল ইসলামের আঁকা এখন শুধু রিকশার পাতেই সীমাবদ্ধ নয়। রিকশার চাইতে সেসব পণ্যে এঁকেই বরং তিনি আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হচ্ছেন বলে জানালেন।

চায়ের কাপে আঁকা শিল্পী রফিকুলের রিকশাচিত্র; ছবি-মেহজাবিন তুলি

রফিকুল ইসলামের ভাষায়, "রিকশাচিত্রে আঁকা একই পেইন্টিং যখন কোনো প্রদর্শনী থেকে কেউ কেনেন, তখন তা হয়তো ২-৩ হাজার টাকা দিয়ে কেনেন। কিন্তু রিকশায় এই দামটা ওঠে না। একই ছবি রিকশায় আঁকা হলে পাবো সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা!" 

ঘরে স্থান-সংকুলান না হওয়ায় বাইরের উঠোনে বসে একমনে কাজ করে যাচ্ছিলেন রফিকুল ইসলাম। অবসরে টুকটাক নিজের মেয়েকেও শিখিয়ে থাকেন আজকাল। তার এখন একটাই প্রত্যাশা, রিকশাচিত্রের এই ঐতিহ্য যেন পরের প্রজন্মও ধরে রাখে, কালের বিবর্তনে হারিয়ে না যায়! 

বিলুপ্তপ্রায় রিকশাচিত্রকে টিকিয়ে রাখতে এগিয়ে এসেছে অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং আমাদের শিল্পীসমাজ। ফলে রাস্তায় চোখ জুড়ানো রিকশাচিত্রের জায়গা হয়েছে আমাদের অন্দরে- চায়ের কাপে, গয়নার বাক্সে, পরিবেশনের ট্রেতে, গলার গহনায় কিংবা পড়ার টেবিলে।

প্রশ্ন জাগে, শিল্পের ভূমিকা বদলে তাকে নাহয় ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানো গেল, কিন্তু তাতে করে শিল্পীদের কতখানি উন্নয়ন হলো! 

ছবি-প্রতিভা

২০১৭ সাল থেকে রিকশাচিত্র নিয়ে কাজ করছে 'প্রতিভা'। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইটস হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের (আইএইচএফ) অন্যতম উইং হলো প্রতিভা। দেশের প্রান্তিক কারিগররা যেন তাদের শিল্পনৈপুণ্য প্রদর্শন এবং অর্থনৈতিক সহনশীলতা বিকাশের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম পেতে পারেন সে উদ্দেশ্যে সহায়তা দিয়ে চলেছে সংস্থাটি।

প্রতিভার আওতাভুক্ত শিল্পীরা সিরামিক, গ্লাস, স্টিল এবং টিনের পণ্যে বাংলাদেশের রিকশাচিত্র ফুটিয়ে তুলে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছেন। 

ছবি- প্রতিভা

রিকশাচিত্র আঁকা পণ্য নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে যে কিছুটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেটি অকপটে জানালেন প্রতিভার সিইও মাইশা লুবাবা। মাইশা বলেন, "আস্তে আস্তে সব ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে। বলব না, রিকশাপেইন্ট বা হ্যান্ডপেইন্টের চাহিদা কমেছে। তবে হাতে আঁকা এসব পণ্যের দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় মানুষ ডিজিটাল প্রিন্টের জিনিসই বেশি কেনে। সেদিক থেকে আমরা কিছুটা পিছিয়ে। তাছাড়া শিল্পীরা ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন কিনা সেটিও কিন্তু আমাদের দিক থেকে নিশ্চিত করতে হয়।" 

হোটেল সারিনা, ইন্টারন্যাশনাল হোমওয়্যারের গুলশান ও বনানী ব্রাঞ্চ, ব্রিটিশ হাইকমিশন ক্লাব এবং এয়ারপোর্টের ডিপারচার লাউঞ্জের বুকশপে মিলবে প্রতিভার পণ্য, এছাড়াও প্রতিভার নিজস্ব ওয়েবসাইট তো আছেই।

ছবি সৌজন্য- লা মোডxপ্রতিভা

এতো গেল গৃহস্থালি অনুষঙ্গের কথা, ব্যক্তি সাজসজ্জাতেও স্থান পেয়েছে রিকশাচিত্র। নেকলেস, কপালের টিপ থেকে শুরু করে চলতি ধারায় জুতার নকশায়ও ফুটে উঠেছে রিকশাচিত্রের নান্দনিকতা।

স্থানীয় রিকশাচিত্রী এবং তাদের কাজকে টিকিয়ে রাখার জন্য এ বছরের মাঝামাঝি প্রতিভা সমন্বয় করে (কোলাবরেট) সুপরিচিত জুতা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান লা মোডের সাথে।  

লা মোডের প্রতিষ্ঠাতা ও ক্রিয়েটিভ হেড ফাহমিদা ইসলাম বললেন, "প্রতিভার মাধ্যমেই আমার কাছে এই কোলাবরেশনের সুযোগ আসে। 

জুতার নকশায় রিকশাচিত্র সচরাচর দেখা যায় না। আমাদের তাই নকশা চূড়ান্ত করার আগে অনেকবার স্যাম্পল টেস্টিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এই উদ্যোগে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে আমরা শুধু নিজস্ব ব্র্যান্ডের পণ্য নয়, দেশীয় রিকশা চিত্রশিল্পীকেই প্রমোট করতে চেয়েছি।"

এদিকে রিকশাচিত্র নিয়ে কাজ করা অনলাইনভিত্তিক পোশাকের ব্র্যান্ড ব্যাড হ্যাবিটের স্বত্বাধিকারী আফসানা সুমির ভাষ্যে, "শিল্পীরা রঙ ভালোবাসেন। রিকশা পেইন্টের ধারায় খুব প্রাণবন্ত রংগুলো এত চমৎকার করে সমন্বয় করা হয় যে, দেখলেই একটা উৎসব অনুভূত হয়। এটি একটি জগত বিখ্যাত আর্ট ফর্ম, বাংলাদেশকে চিনতে হলে রিকশা পেইন্টকে বাদ দেওয়া যাবে না। আমাদের রুচি, সংস্কৃতি, মানুষের মনের ভাব এমনকি আবহাওয়ার সাথে মিলিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের রোমান্টিকতাকে পর্যন্ত ব্যাখ্যা করা যায় রিকশা ও তাকে সাজাতে আঁকা ছবিগুলো দিয়ে।"    

২০১৭ সালে তিনি ও খন্দকার মহিউদ্দিন শ্যামল মিলে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে চিত্রশিল্পের এই ধারাকে নিয়ে আসেন। 

এখন পর্যন্ত তারা শাড়ি, শাড়ির সাথে পরার বেল্ট, পাঞ্জাবি, স্টেটমেন্ট নেকপিস, সানগ্লাস ইত্যাদিতে রিকশাচিত্র ফুটিয়ে এনেছেন। তাদের স্টেটমেন্ট নেকপিসগুলোর নকশা মূল রিকশাচিত্রীরাই করে থাকেন।

চলতি ফ্যাশন ধারায় যোগ হয়েছে রিকশাচিত্র আঁকা নানা অনুষঙ্গ; ছবিস্বত্ব- ব্যাড হ্যাবিট

এ প্রসঙ্গে আফসানা সুমি বলেন, "রিকশা পেইন্ট আর্টফর্মটাকে পণ্যে রূপান্তরের ব্যাপারটা নতুন নয়। আমরা চাইছিলাম মূল শিল্পীদের। কারণ, এটি এত চমৎকার একটি শিল্প হওয়ার পরও শিল্পীদের শুধু রিকশা সাজানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয় আর সেই ক্ষেত্রে প্রিন্ট সাজসজ্জার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছিল এই শিল্প। শিল্পীরা কাজের অভাবে এই পেশা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছিলেন। আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী অন্তত কয়েকজন শিল্পীকে তার স্বপেশায় ধরে রাখার প্রয়াসে লিপ্ত হই।"

তবে রিকশাচিত্রের বিভিন্ন অনুষঙ্গের দাম নিয়ে অনেককেই অনুযোগ করতে দেখা যায়।

সুমি বলেন, "অনেকের কাছে ভীষণ সমাদৃত হয়েছি, অনেকে আবার টিনের গহনায় প্রাইস রেঞ্জ আরও কম প্রত্যাশা করে হতাশ হয়েছেন। আসলে শিল্প কখনোই সস্তা নয়, বা একে সস্তায় বাজারে নিয়ে আসার পক্ষপাতি আমরা নই। শিল্প মানুষের মনের খোরাক, আর আনন্দ তো অমূল্য, তাই না? প্রাইসিং এ শিল্পীর যথাযোগ্য সম্মানী থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদে প্রকল্পটি চালিয়ে যাওয়া- এমন  সবকিছুই মাথায় রাখতে হয়েছে আমাদের। বরং ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে এমন ইউনিক একটি আইডিয়া বেশ স্বল্পমূল্যেই এনেছি আমরা।"

মাঝে করোনার কবলে পরিস্থিতি আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছিল বলে জানালেন সুমি। তিনি বলেন, "গতানুগতিক গহনার সাথে পাল্লা দিয়ে একে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া এমনিতেই চ্যালেঞ্জিং। তার উপর মহামারিতে মানুষের মাঝে ছিল আতংক, শিল্পীরাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। কেউ বাড়ি চলে যান, কেউ অন্য কাজ নেন।"

ছবিস্বত্ব- আফসানা সুমি

তবে মহামারির প্রভাব কাটিয়ে আবারও মূল শিল্পীদের আবারও যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। চকবাজারের নামকরা রিকশা পেইন্টার মো. হানিফ পাপ্পু ব্যাড হ্যাবিটের সাথে কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন বলে জানালেন এই উদ্যোক্তা।

ই–কমার্স সাইট টুকিটাকি ডট এক্সওয়াইজেডের ওয়েবসাইটে ঢুকলে মন জুড়িয়ে যাবে ঘর সাজানোর দেশীয় নানা অনুষঙ্গে। ট্রে, ফটো ফ্রেম, টেবিল, জুট বাস্কেট, স্টোরেজ বক্স, ল্যাম্প শেড ইত্যাদি থেকে শুরু করে ল্যাপটপ কাভার সব কিছুই শিল্পরুচিসম্পন্ন। টুকিটাকির পণ্যের একটি আলাদা অংশই রিকশাচিত্র নিয়ে। 

প্রতিষ্ঠানের অপারেশন ম্যানেজার রানা টিবিএসকে বলেন, "বিদেশে যেভাবে বাংলাদেশের পেইন্টিং, রিকশাআর্ট ইত্যাদির কদর রয়েছে, আমাদের নিজের দেশেই সেটির অভাব দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের তাই ইচ্ছা ছিল, এই শিল্পীদের প্রমোট করব। সেজন্যে দেশের ভেতর আমরা একে জনপ্রিয় করে তোলার উদ্যোগ নেই।"

খুব শীঘ্রই টুকিটাকির রিকশা পেইন্টিংয়ের বিভিন্ন অনুষঙ্গ বৈশ্বিকভাবেও রপ্তানি করা শুরু হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে এভাবে দেশের ঐতিহ্যবাহী শিল্প পরিচিত হয়ে উঠবে বলে জানান রানা। 

Related Topics

টপ নিউজ

রিকশা / রিকশাচিত্র / রিকশা আর্ট / ঢাকার রিকশা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • হাজারো কোটি টাকার বিনিময়েও আবার ‘জ্যাক স্প্যারো’ হবেন না ডেপ!
  • ঘরে ঘরে জ্বর, ডা. এবিএম আব্দুল্লাহর পরামর্শ 
  • ইভ্যালির কাছে ২৫ কোটি টাকার পণ্য আছে
  • এক জাপানির গলফ ক্লাবের টানেই যেভাবে দেশে শুরু হলো লেন্সের উৎপাদন 
  • বাংলাদেশ থেকে পোশাক কর্মী নিচ্ছে বুলগেরিয়া
  • নতুন রিজার্ভ মুদ্রা দিয়ে ডলারের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চায় রাশিয়া-চীন

Related News

  • দেশব্যাপী ধর্মঘটের তৃতীয় দিনে ঢাকার রাস্তায় প্রাইভেট কার ও রিকশার রাজত্ব
  • করোনার প্রভাবে কর্ম হারিয়ে অনেকেই ঢাকায় এসে চালাচ্ছেন রিকশা
  • আজ থেকে গণপরিবহণ বন্ধ, চলবে রিকশা ও পণ্যবাহী যানবাহন
  • ঢাকা থেকে কি রিকশা সরানো সম্ভব? বিশেষজ্ঞরা বলছেন ‘হ্যাঁ’
  • চট্টগ্রামেও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বন্ধ হচ্ছে রিকশা চলাচল

Most Read

1
বিনোদন

হাজারো কোটি টাকার বিনিময়েও আবার ‘জ্যাক স্প্যারো’ হবেন না ডেপ!

2
বাংলাদেশ

ঘরে ঘরে জ্বর, ডা. এবিএম আব্দুল্লাহর পরামর্শ 

3
অর্থনীতি

ইভ্যালির কাছে ২৫ কোটি টাকার পণ্য আছে

4
অর্থনীতি

এক জাপানির গলফ ক্লাবের টানেই যেভাবে দেশে শুরু হলো লেন্সের উৎপাদন 

5
বাংলাদেশ

বাংলাদেশ থেকে পোশাক কর্মী নিচ্ছে বুলগেরিয়া

6
আন্তর্জাতিক

নতুন রিজার্ভ মুদ্রা দিয়ে ডলারের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চায় রাশিয়া-চীন

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab