গোলাম মুরশেদ: বিলিয়ন ডলারের কোম্পানির স্থপতি
ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রি লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) গোলাম মুরশেদ। ইতোমধ্যেই একজন সফল উদ্যেক্তা এবং দূরদর্শী ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি ওয়ালটন কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ওয়ালটন কোম্পানির এত দ্রুত উন্নতি করার পেছনে মুরশেদের অবদান অপরিসীম। তিনি একইসঙ্গে বাংলাদেশ ইলেক্ট্রিক্যাল, ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড হোম এপ্লায়েন্স ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিইইএমইএ) সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করছেন। ওয়ালটনের মতো ইলেক্ট্রনিক জায়ান্টের শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছানো এবং একে নেতৃত্ব দেয়ার পথ এতটাও মসৃণ ছিল না। গোলাম মুরশেদের জন্মই হয়েছিল যেন কর্পোরেট শিল্পে রাজত্ব করার জন্য। চলুন দেখে নেয়া যাক আমাদের এই তরুণ ব্যবসায়ীর উত্থান সম্পর্কে।
যাত্রা শুরু
গোলাম মুরশেদ ২০১০ সালের ২০ ডিসেম্বর ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের এয়ার কন্ডিশনার বিভাগের রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট শাখায় সহকারী প্রকৌশলী হিসাবে যোগদান করেন। প্রোডাকশন ইউনিটের ইনচার্জ হিসাবে দ্রুতই তার নেতৃত্বের গুণটি ফুটে ওঠে। বাংলাদেশের টেক জায়ান্ট কোম্পানির শীর্ষে ওঠার জন্য এটি ছিল তার প্রথম ধাপ। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মুরশেদের মধ্যে নেতৃত্বের এই বিশেষ গুণটিকেই কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ওয়ালটন কোম্পানির তৈরি করা প্রথম এয়ার কন্ডিশনার (এসি) তার মাধ্যমেই বাজারে আসে।
দুই বছর এসি উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত থাকার পরে তাকে রেফ্রিজারেটর ডিপার্টমেন্টে নিয়োগ দেওয়া হয়। মুরশেদ সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং কাজ করতে পছন্দ করেন। এজন্য ফ্রিজ তৈরির মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল কাজের নেতৃত্ব দিতে একবারের জন্যও দ্বিধায় ভুগতে হয়নি তাকে। তার একবছরের নেতৃত্বেই ওয়াল্টন কোম্পানির দ্বিগুণ উৎপাদন হয়। এই বিভাগে দ্বায়িত্ব পালনের সময় তৎকালীন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকে বিজনেস অপারেশনের দ্বায়িত্ব দেন। তিন বছর পরে ওয়ালটনের রেফ্রিজারেটর বিভাগের প্রধান নির্বাহী (সিইও) হিসাবে নিয়োগ পান তিনি। বাংলাদেশের প্রযুক্তির পরিবর্তন এবং বেকারত্বের বিষয়ে গোলাম মুরশেদ সবসময় সচেতন ছিলেন। দীর্ঘদিন কোম্পানির যুগ্ম পরিচালক হিসাবে কাজ করার পরে ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসাবে যোগদান করেন।
উল্লেখযোগ্য অর্জন
ওয়ালটন কোম্পানি এবং ব্যক্তি গোলাম মুরশেদের অর্জন যেন একই সূত্রে গাঁথা। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে রেফ্রিজারেটরের দ্বিগুণ উৎপাদন তার প্রথম অর্জন হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে। ভিয়েতনাম, তাইওয়ান এবং চীন থেকে রেফ্রিজারেটর এবং এসি ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টস আমদানি করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। মুরশেদ সংশ্লিষ্ট বিভাগের দ্বায়িত্বে থাকা অবস্থায় সর্বোচ্চ রেফ্রিজারেটর বিক্রি করে ওয়ালটন কোম্পানি। সম্প্রতি করোনা মহামারিতে ওয়ালটনের তৈরি ভেন্টিলেটর, পিপিই, জীবাণুনাশক, দ্রুত সাড়া প্রদানে সক্ষম মেডি-কার্ট রোবট ইত্যাদি জনগুরুত্বপূর্ণ মেডিকেল সামগ্রী উৎপাদনের উদ্যেক্তা ছিলেন তিনি। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পুঁজি বাজারে যে 'আইপিও শেয়ার' ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো তা মূলত গোলাম মুরশেদের হাত ধরেই। তার নেতৃত্বে কোম্পানিটি ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। ওয়ালটন কোম্পানিকে 'গো গ্লোবাল' নামক প্রজেক্টের সাথে পরিচয় করান তিনি। এই প্রজেক্ট অনুযায়ী তিনি ২০৩০ সালের মধ্যে ওয়ালটনকে বিশ্বের শীর্ষ কোম্পানির একটিতে পরিণত করার দৃঢ় প্রকল্প ব্যক্ত করেন ।
ভিশন এবং মিশন
এমডি এবং সিইও হিসেবে কোম্পানিকে সারবিশ্বে পরিচিত করানোই মুরশেদের উদ্দেশ্য। তিনি 'ভিশন গো গ্লোবাল-২০৩০' কে মিশন হিসাবে নিয়েছেন। অর্থাৎ, একটি নামী ব্র্যান্ড হিসেবে ওয়ালটনকে সারাবিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করাই তার লক্ষ্য। করোনা মহামারির মতো সময়েও কোম্পানির উত্তরোত্তর সাফল্য যেন তার করা সাবলীল নেতৃত্ব ও দৃঢ় সংকল্পকেই মনে করিয়ে দেয়। গবেষণা এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ইলেক্ট্রনিক এবং প্রযুক্তি পণ্যের কেন্দ্রভূমি হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। মুরশেদ বরাবরই বাংলাদশের উন্নতির জন্য কাজ করতে চেয়েছেন। এজন্যই স্নাতকোত্তরের পর সুযোগ থাকা সত্বেও অন্যদের মতো তিনি বিদেশে পাড়ি জমাননি। দেশীয় ইলেক্ট্রনিক পণ্যের বিকাশে তার ভূমিকা অপরিসীম।
অন্যদের চাইতে কিছুটা আলাদা চিন্তা করা এই উদ্যেক্তার মতে, 'ডিগ্রির চেয়ে কর্ম বড়, ধৈর্য্য ধারণ অবশ্যই করতে হবে' এমন মনোভাবই তাকে আজকের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। পরিবেশ সচেতন মুরশেদের আগামী সবুজ বাংলাদেশের জন্য প্রকল্পের নাম 'বেটার বাংলাদেশ টুমোরো'।
সামগ্রিকভাবে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানোর লক্ষ্যে 'থ্রি আর' (রিইউজ, রিডিউস, রিসাইকেল) প্রযুক্তির মাধ্যমে ওয়ালটন ইতোমধ্যেই দৈনিক ৫১.১৬ টন আবর্জনা একীভূত করে তা থেকে পণ্য উৎপাদন করছে। টেকসই সচেতনতা এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর মাধ্যমে গ্রহণ করা এসব উদ্যেগ আগামী দিনের সবুজ বাংলাদেশ বিনির্মানে যুবসমাজের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক হয়ে উঠবে।
- আর্টিকেলটি ইংরেজিতে পড়ুন: Golam Murshed: The architect of a billion-dollar company
- ভাষান্তর: মো. পনিচুজ্জামান সাচ্চু