বাংলাদেশে ড্রোন: শখ থেকেও বেশি কিছু
আচ্ছা, পাখির মতো উড়ে বেড়াতে কেমন লাগে? পাখির চোখে পৃথিবী দেখতেই বা কেমন লাগে? সৃষ্টির আদিকাল থেকে আমরা এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়িয়েছি। রূপকথায় আমরা ইকারাসের গল্প পড়েছি। মোমের ডানা দিয়ে ইকারাস উড়তে উড়তে সূর্যের বেশি কাছে চলে যাওয়ায় তার পতন হয়েছিল। উদ্ভাবনশীল মনুষ্যজাতি উড়োজাহাজ বানিয়ে পাখির মতো আকাশে উড়তে শিখেছে। নভোযান বানিয়ে ঘুরে এসেছে মহাকাশ থেকেও। পাখির চোখে পৃথিবী দেখার জন্য কত কী-ই না আবিষ্কার করলো মানুষ! এগুলোর মধ্যে এখন অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ড্রোন।
সাধারণত পাইলটবিহীন বিমানকে ড্রোন বলা হয়। প্রথম ড্রোন ব্যবহৃত হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে। ইংল্যান্ডের 'এরিয়াল টার্গেট' নামক একটি ছোট রেডিও নিয়ন্ত্রিত ড্রোন বিমান ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন করে। আমেরিকা ১৯১৮ সালে পাইলটবিহীন টর্পেডো ড্রোন ব্যবহার করে। ভিয়েতনাম যুদ্ধে বড় পরিসরে ড্রোনের যুদ্ধবিমানের ব্যবহার শুরু হয়। আফগানিস্তানে আমেরিকা ২০০১ সালে যে আক্রমণ চালায়, তাতে বড় ভূমিকা পালন করে ড্রোন বিমান।
ড্রোনের শুরুটা মূলত সামরিক কাজের জন্য হলেও ধীরে ধীরে এর নানাবিধ ব্যবহার শুরু হয়। ড্রোন এখন মূলত ক্যামেরাভিত্তিক। ড্রোনের সাথে সংযুক্ত ক্যামেরা ব্যবহার করে একটি সুনির্দিষ্ট এলাকার ছবি বা ভিডিও ধারণ করা যায়। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কাজ, ট্রাফিক জট ছাড়ানো, আবহাওয়া পূর্বাভাস দেয়া ও নানারকম জরিপ এবং ম্যাপিং করা হয় ড্রোন দিয়ে।
ড্রোন দিয়ে পরিবহনের কাজও করা হয়। দুর্গম অঞ্চলে জরুরি ওষুধ সরবরাহ করা, বড় কৃষি জমিতে কীট শনাক্ত ও কীটনাশক ছিটানোর কাজে সহায়তা করে ড্রোন। বিনোদন শিল্পে ড্রোনের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। ড্রোনের মাধ্যমে ছবি বা ভিডিও তৈরি করা হয়। সিনেমা বা ডকুমেন্টারিতে ড্রোন শট ব্যবহার বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। এছাড়াও, বিজ্ঞাপন তৈরিতে ড্রোন ব্যবহার করা হয়।
আমাদের দেশে ড্রোনের গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য ছবি বা ভিডিও তৈরি করতে ড্রোনের ব্যবহার দেখা যায়। যারা ড্রোন চালায় তাদেরকে বলা হয় 'হবি পাইলট' বা শখের পাইলট। বাংলাদেশে অনেক ভালো ভালো ড্রোন চালক বা শখের পাইলট আছেন বর্তমানে। তাদের কাজও সমাদৃত হচ্ছে বিশ্বদরবারে। তাদের চমৎকার সব ড্রোন-ভিডিও, বাংলাদেশের পর্যটন স্থানগুলোকে পৌঁছে দিচ্ছে বিশ্বব্যাপী।
এমনই একজন তরুণ ড্রোন পাইলট সম্রাট নিরো। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম সিমেস্টারের এই শিক্ষার্থী ২০১৮ সাল থেকে ড্রোনের সাথে আছেন। দেশের সেরা ৫ জন শখের পাইলটের মধ্যে অনায়াসেই চলে আসে তার নাম। কাজ করেছেন অসংখ্য বিজ্ঞাপন ও সিনেমায়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথেও তার কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। দেশের বাইরে গিয়েও কাজ করেছেন তিনি। সেদিন বাংলাদেশের ড্রোন শিল্প নিয়ে বিস্তারিত আলাপ হলো সম্রাট নিরোর সঙ্গে। তাই আজকের এ আয়োজন ড্রোনের আদ্যোপান্ত আর আমাদের দেশে এর সম্ভাবনা নিয়ে।
ড্রোনের অ-আ-ক-খ
ড্রোনকে ইউএভি বা আনম্যানড অ্যারিয়েল ভেহিকলও বলা হয়। বাংলা করলে যা দাঁড়ায় 'মানুষবিহীন উড়ন্ত যান'। এটি এক ধরনের রোবট যা চার থেকে পাঁচটি পাখা দিয়ে উড়তে পারে। আর এই রোবট নিয়ন্ত্রণ করা হয় রিমোট দিয়ে। ড্রোনের শরীরে প্রকারভেদে তিন থেকে চারটি ক্যামেরা থাকতে পারে। রিমোটে থাকে স্ক্রিন, যার মাধ্যমে ক্যামেরাগুলোর ছবি বা ভিডিও সরাসরি দেখা এবং ধারণ করা যায়।
দিন যত যাচ্ছে, ড্রোনের ক্যামেরা তত উন্নত হচ্ছে। ড্রোনের সাথে লাগানো ছোট্ট কয়েকটি ক্যামেরা দিয়ে ফোর-কে রেজুল্যুশনের ভিডিও ধারণ করা যায় এখন। এছাড়াও নাইট ভিশন ক্যামেরা আর থার্মাল ক্যামেরাও থাকে কিছু ড্রোনে।
ড্রোন ব্যাটারি বা সোলার প্যানেল দিয়ে চলে। প্রথমে সামরিক কাজের জন্য ড্রোন তৈরি করা হলেও বর্তমানে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেই এর ব্যবহার সর্বাধিক। ড্রোন এখন আর দুর্লভ কিছু না, যে কেউ চাইলেই এটি কিনতে পারে।
নানারকমের ড্রোন আছে। একটি ড্রোন কতদূর পর্যন্ত রিমোট দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার ওপর নির্ভর করে ড্রোনের প্রকারভেদ। সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় স্বল্প দূরত্বের ড্রোন। এগুলো ৩০ মাইল পর্যন্ত যেতে পারে। এছাড়াও ৯০ মাইল থেকে শুরু করে ৪০০ মাইল পর্যন্ত যেতে পারে– এমন ড্রোনও আছে। রাষ্ট্রীয় ও সামরিক কাজেই ব্যবহার করা হয় সেগুলো।
যেসব ড্রোনে চার থেকে পাঁচটি পাখা থাকে, সেগুলোকে বলে মাল্টি রোটর ড্রোন (Multi-Rotor Drone)। সাধারণত এটিই সবচেয়ে বেশি চালান ড্রোন পাইলটরা। সিঙ্গেল রোটর ড্রোনও আছে, যেগুলোতে পাখা থাকে একটি। অনেকটা হেলিকপ্টারের মতো। এগুলো জরিপ ও ম্যাপিং এর কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়। আর ফিক্সড উইং ড্রোন (Fixed Wing Drone) ব্যবহার করা হয় সামরিক কাজে। এগুলো দেখতে বিমানের মতো। দুই পাশে দুইটি পাখা থাকে।
সামরিক কাজ ছাড়াও যে ড্রোন নানা কাজে ব্যবহার করা যায়, তা ২০০৪ সালের দিক থেকে মানুষ বুঝতে পারে। তখন যারা শখের পাইলট ছিলেন, তারা নিজেরাই ড্রোন বানিয়ে নিতেন বিভিন্ন যন্ত্রাংশ একসাথে জোড়া দিয়ে। পরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন কোম্পানি ড্রোন বানিয়ে বাজারজাত করা শুরু করে। তবে এখনো অনেকে ড্রোন বানিয়ে ব্যবহার করেন। যারা পেশাদার শখের পাইলট তারা, নিজেদের ড্রোন তৈরি করে থাকেন। সম্রাট নিরোও নিজে ড্রোন তৈরি করে নেন নিজের পছন্দমতো।
বিশ্বব্যাপী সমাদৃত কিছু ড্রোন কোম্পানি হলো— ডিজিআই, প্যারট, অ্যারোভেরোনমেন্ট, ডেলএয়ার ইত্যাদি। এদের মধ্যে ডিজিআই কোম্পানির ড্রোন সবচেয়ে বেশি চলে। নতুন থেকে শুরু করে অভিজ্ঞরাও ডিজিআই এর ড্রোনের ওপর ভরসা রাখেন। ডিজিআই এর বিভিন্ন দামের ড্রোন আছে। ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ২ লাখ টাকার ড্রোনও বিক্রি করে তারা। বাংলাদেশে বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স ও যমুনা ফিউচার পার্কের বেশ কিছু দোকানে ভালো কোম্পানির ড্রোন কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়াও, নিউ মার্কেটের কিছু খেলনার দোকানে ড্রোন পাওয়া যায়। বাংলামোটরেও আছে ড্রোনের একটি দোকান। এসব দোকানে ড্রোনের দাম পড়ে ৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মতো। সাধ্যের মধ্যে ড্রোন পাওয়া যায় এসব দোকানে।
যদিও নিউ মার্কেট আর বাংলামোটরের ড্রোনের দোকানের ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে সম্রাট বলেন, "খেলনার দোকানে যেসব ড্রোন বা কম দামে যেসব ড্রোন পাওয়া যায়, আমি সেগুলো কিনতে অনুৎসাহিত করবো সবাইকে। কারণ এগুলোর ক্যামেরা কোয়ালিটি যাচ্ছেতাই। ভালো ফ্লাইং কোয়ালিটিও নেই। কেউ যদি ড্রোন কিনে কেবল খেলনার মতো একটু উপর-নিচে করে ব্যবহার কোর্টে চান, তাহলে এসব দোকান থেকে কিনতে পারেন। কিন্তু যদি আসলেই কেউ হবি পাইলট হতে চান, তবে আমার পরামর্শ থাকবে ভালো কোম্পানির ড্রোন কেনার জন্য। এগুলো একটু দামি হলেও টেকসই এবং সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন।"
পাখির চোখে দেখা
৩ আগস্ট, ২০২৪। সারাদেশে অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজমান। একে চলছে কার্ফিউ, তার উপরে ইন্টারনেটের লুকোচুরিতে ভিপিএনের ব্যবহার। এরই মাঝে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের ডাক দেন। সেখানে হাসিনা সরকারের পতনের কথা বলা হয়। শহীদ মিনারে ঢাকাবাসীর ঢল নামে। কেউ বলে দশ হাজার আবার কেউ বলে লাখখানেক মানুষের সমাগম হয়েছিল সেদিন শহীদ মিনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের আশেপাশের এলাকাজুড়ে। দেশবাসীর উদ্দীপনা সেদিন বেড়ে যায় অনেকাংশে। আর এর পেছনে বেশ অবদান রেখেছিল শহীদ মিনারের উপর থেকে মানুষের ঢলের ড্রোন ফুটেজ।
"আমাদের অনেক পরিচিত ড্রোন পাইলট আন্দোলনের সময় ড্রোন ফুটেজ নিয়েছিলেন। কিন্তু অনেকে সে সময়ে ড্রোন ওড়াতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কারণ আন্দোলনের হটস্পট এলাকাগুলোয় পুলিশ নেটওয়ার্ক জ্যামার ব্যবহার করতো। যার ফলে ড্রোন ওড়ানোর কোনো উপায় ছিল না। জ্যামার না থাকলে আরো অনেক না দেখা ফুটেজ মানুষ দেখতে পেতেন," বলছিলেন সম্রাট নিরো।
৫ আগস্ট সংসদ ভবন আর গণভবনে ঢুকে পড়ে অসংখ্য মানুষ। সেদিন আকাশের দিকে কেউ খেয়াল করলে নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন, আকাশে উড়েছিল অসংখ্য ড্রোন। উড়বেই বা না কেনো? ইতিহাসের এই অংশ পাখির চোখে দেখতে কেমন লাগে, তার ফুটেজ নেয়ার জন্য হবি পাইলটরা ছিলেন উদগ্রীব। বিশেষ করে, সংসদ ভবন এলাকার অপার্থিব সৌন্দর্য ফুটে ওঠে ড্রোনের ভিডিও ফুটেজগুলোতে।
এ তো গেলো সাম্প্রতিক ঘটনা। এমনিতে ড্রোন আর ড্রোন ফুটেজ এখন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অহরহ দেখা যায় ড্রোন দিয়ে তোলা ছবি বা ভিডিও। আমাদের দেশের পর্যটন এলাকাগুলোর চমৎকার সব ড্রোন ভিডিও বানিয়েছেন শখের ড্রোন পাইলটরা। এসব ভিডিও আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত হয়েছে। বিদেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করেছে আমাদের দেশে বেড়াতে আসার জন্য। সবচেয়ে বেশি ড্রোন ভিডিও আছে কক্সবাজারের। কক্সবাজারের বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত ড্রোন চালানোর জন্য আদর্শ।
সম্রাট বলেন, "আমি ২০১৮ সালে কুমিল্লার একটি ড্রোন ভিডিও বানিয়েছিলাম। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। তারপর থেকে আমি পেশাদার ড্রোন পাইলট হওয়ার জন্য কাজ শুরু করি। কয়েক বছর পর কক্সবাজারের একটি ভিডিও বানিয়েছিলাম। বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আমার সেই ভিডিওর কিছু ফুটেজ কিনে নিয়েছিল। আমাদের দেশের পর্যটন খাতে উন্নয়নের জন্য এসব ড্রোন ভিডিও অনেক ভালো ভূমিকা পালন করে। বাইরের দেশের পর্যটকদের কাছে বড় বিজ্ঞাপন হয়ে যায় আমাদের বানানো ভিডিওগুলো।"
নাটক, সিনেমা ও বিজ্ঞাপন শিল্পে এখন ড্রোন শট অপরিহার্য। অনেক নতুন শখের ড্রোন পাইলট এখন এটাকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। দেশের বিনোদনমাধ্যমে নতুন বিপ্লব আনতে সক্ষম হয়েছে ড্রোন। অনেক কন্টেন্ট ক্রিয়েটরই দক্ষ ড্রোন পাইলটকে দিয়ে নিজেদের কাজ করান। ড্রোনের ফুটেজ বিক্রি করে অনেকে ফ্রিল্যান্সিংও করছেন।
দেশে অনেক সরকারী কাজেও ড্রোন ব্যবহার করা হয়। গত ২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ারের ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগে। ভয়ংকর এ আগুন নেভাতে তিনদিন লেগে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুনে পোড়ার ক্ষয়ক্ষতি বোঝার জন্য ও মৃতদেহ খোঁজার জন্য ড্রোন ব্যবহার করেছিলেন। আমাদের ফায়ার সার্ভিস নিয়মিত ড্রোন ব্যবহার করে উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য।
দেশের বিদ্যুতের গ্রিডে ইঞ্জিনিয়াররা ড্রোন ব্যবহার করেন গ্রিড তত্ত্বাবধায়ন করার জন্য। এসব ড্রোনে থার্মাল ক্যামেরাও থাকে। এতে করে গ্রিডের তাপমাত্রাও বোঝা যায় ড্রোনের মাধ্যমে। এছাড়া, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে সামরিক অস্ত্র বহনে ও হামলায় সক্ষম ড্রোন কেনা হয়েছে। ২০২২ সালে তুরস্কের কাছ থেকে বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোন কিনেছিল বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী।
ড্রোন নিয়ে যত আইন
দেশে দেশে ড্রোন চালানোর ক্ষেত্রে নানা আইন রয়েছে। ড্রোন আকাশে উড়ে বেড়ায়। জমিন থেকে এর নিয়ন্ত্রণ করেন শুধুই ড্রোন পাইলট। তাই ড্রোন দিয়ে যেন কোনো অবৈধ বা অনৈতিক কাজ না করা যার, তার জন্য এ নিয়ে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে বিশ্বব্যাপী। আমাদের দেশেও ড্রোন নিয়ে আইন রয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ২০২০ সালে ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করে। এই আইনের আওতায় ড্রোনকে ক, খ, গ ও ঘ— চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। ক শ্রেণির ড্রোন শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য ব্যবহার করা যাবে। খ শ্রেণির ড্রোন শিক্ষা ও গবেষণার মতো অ-বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা যাবে। গ শ্রেণির ড্রোন ব্যবহার করা যাবে সার্ভে, ছবি ও ভিডিও তোলা, উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে; এবং ঘ শ্রেণির ড্রোন ব্যবহৃত হবে রাষ্ট্রীয় ও সামরিক প্রয়োজনে।
ড্রোন ওড়ানোর জন্য তিনটি এলাকা চিহ্নিত কড়া হয়েছে— গ্রিন, ইয়েলো এবং রেড জোন। গ্রিন জোনে ড্রোন ওড়াতে কোনো অনুমতির প্রয়োজন হয় না। বিমানবন্দরের তিন কিলোমিটার দূরের সকল এলাকাই গ্রিন জোনের আওতাভুক্ত। ইয়েলো জোনের মধ্যে পড়ে সামরিক এলাকা, অধিক জনসংখ্যাভুক্ত এলাকা ও নিষিদ্ধ এলাকাসমূহ। এ এলাকায় অনুমতি সাপেক্ষে ড্রোন ওড়ানো যাবে। আর রেড জোনে ড্রোন চালানোর জন্য বিশেষ অনুমতি লাগবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষিত নিষিদ্ধ এলাকা, বিমানবন্দরসহ আরো কিছু এলাকাকে রেড জোনের আওতায় নেওয়া হয়েছে ।
আমাদের দেশে ড্রোন আমদানী করা হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে আমদানি করার নির্দেশনা আছে ড্রোন আইনে। এছাড়াও, ড্রোন আইন অনুযায়ী, ড্রোন চালানোর জন্য ড্রোন নিবন্ধন করতে হবে ও অনুমোদনের কপি পাইলটকে সাথে রাখতে হবে। এমন আরো বেশকিছু আইন রয়েছে। যদিও সব আইন মেনে চলা হয় না এদেশে। হয় না আইনের যথাযথ প্রয়োগও। আবার এমন কিছু আইনও আছে, যেগুলো শখের ড্রোন পাইলটদের জন্য বাধা হিসেবে কাজ করে।
ড্রোনের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ
"আপনি ড্রোন চালানো কার কাছ থেকে শিখেছেন?" প্রশ্ন করলে সম্রাট নিরো বলেন, "শখের ড্রোন পাইলট থেকে প্রফেশনাল ড্রোন পাইলট পর্যন্ত আসার যে যাত্রা আমার, এটায় আমি একা ছিলাম। কেউ শেখায়নি আমাকে। নিজের টাকায় ড্রোন কিনেছি, প্রয়োজনে ড্রোন বানিয়ে নিয়েছি। শুধুমাত্র নিজের প্যাশন থেকে আমি এতদূর আসছি।"
"আমেরিকা, ভিয়েতনাম ও ফ্রান্সে যেয়ে আমি কাজ করেছি। নিয়মিত বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানি আমাকে বিজ্ঞাপন বানানোর জন্য ডাকে। কাজ করেছি সিনেমাতেও। ড্রোন আসলে গুরুমুখী বিদ্যা না। নিজে থেকে ওড়ানো, ব্যালান্স করা, ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হয়। এটি একটি প্র্যাক্টিসের বিষয়। আমার নিজের আরো শেখা বাকি। অনলাইনে ড্রোন শেখার অনেক ভিডিও আছে, সেগুলো দেখলে ধারণা পরিষ্কার হবে," যোগ করেন সম্রাট।
ড্রোন ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফি অনেক সম্ভাবনার একটি জায়গা। যত দিন যাবে, এর প্রয়োজনীয়তা ও উপযোগিতা তত বৃদ্ধি পাবে। দেশে অনেক ভালো ভালো শখের পাইলট আছেন, যারা আবার নিয়মিত পেশাদার হিসেবে কাজ করে থাকেন। সম্রাট নিরো, অনির্বান কায়সার, নিহাব রহমানসহ আরো অনেক আন্তর্জাতিক মানের ড্রোন পাইলট আছেন দেশে। তাদের প্রতিটি ড্রোন ভিডিও ও ছবি হয় নজরকাড়া। সম্রাট বিশ্বাস করেন, তারা পারলে যে কেউই পারবে বিশ্বমানের ড্রোন ভিডিওগ্রাফার হতে।
"অতি মেধাবী বা অতি গুণী হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ভালো মানের ড্রোন আর কঠিন অধ্যবসায় থাকলেই আমি বা আপনি ড্রোন পাইলট হতে পারবো," যোগ করেন সম্রাট।